দেড়শ’ বছর আগের জীর্ণ পাথরের ওপর ভয়ঙ্কর ও রক্তাক্ত সেই হাঁটার ঘটনাটি ঘটেছিল আমেরিকার পশ্চিমে ওরেগন উপকূলে। ৩৮২ মাইল দীর্ঘ উপকূলের ৩.৮ মাইল ট্রেইল এলাকার নামকরণ করা হয়েছে স্থানীয় কুস উপজাতির সংগ্রামী নারী আমান্ডার স্মরণে।
এলাকাটি আমান্ডার বেদনাদায়ক পদযাত্রার চূড়ান্ত সীমানাও ছিল।
ট্রেইলটির বেশিরভাগই এখন নরম ও সহজে হাঁটা যায় এবং যান চলাচলের উপযোগী। কিন্তু ১৫৩ বছর আগে যখন আমান্ডা দে কাইসকে একই পথে হাঁটতে বাধ্য করা হয়, তখন ভূখণ্ড পাথুরে ও গাছে পরিপূর্ণ ছিল এবং আমান্ডার কোনো জুতা বা দৃষ্টিশক্তি ছিল না।
১৮৫৫ সালের সহিংস সংঘাতের পর ঔপনিবেশিকরা আদি বাসিন্দাদের ওরেগন উপকূলীয় জমি অধিগ্রহণ করতে চেয়েছিলেন। উপকূল বরাবর বসতি গড়া আদিবাসী উপজাতিগুলোকে তাদের ঘর-বাড়ির বিনিময়ে শান্তিপূর্ণ স্থানান্তরের কথা বলেন।
কিন্তু উপকূলীয় সংরক্ষণের লক্ষ্যে ডিউনিস সিটির অধীন প্রায় ১ লাখ একর জমি নেওয়ার চুক্তিটি মার্কিন কংগ্রেসে অনুমোদন পায়নি। এবং যে তহবিল এই বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর খাবারের জন্য ব্যবহারের কথা ছিল, তা কখনোই দেওয়া হয়নি। এর পরিণতিতে ওরেগন উপকূলবর্তী ও গ্রান্ড রন্ডি সংরক্ষিত অঞ্চলের প্রায় ৫০০ আদিবাসী আমেরিকান অনাহার ও রোগে মারা যান। আমান্ডা দে কাইসসহ আদিবাসী আমেরিকানদের অনেকে তখন পালিয়ে যান।
ইয়াচ্যাটস্ নামক একটি ক্যাম্পে অন্য আদিবাসীদের বন্দি রেখে আমান্ডাসহ পলাতকদের ধরে আনতে বলা হয়েছিল সামরিক বাহিনীকে। বৃদ্ধ, অন্ধ নারী আমান্ডা কুস বে এলাকায় পালিয়ে থেকে আদিবাসী একটি পরিবার ও তাদের আট বছর বয়সী মেয়ের সঙ্গে অনেক বছর ধরে বসবাস করে আসছিলেন।
ভারতীয় এক এজেন্ট পরিশেষে তাকে ধরে ফেলেন। তিনি আমান্ডাসহ পরিবারটিকে পেছনে রেখে পদব্রজে কুস বে থেকে ইয়াচ্যাটস্ পর্যন্ত বন্ধুর ৮০ মাইল পথ খালি পায়ে হেঁটে আসতে বাধ্য করেন।
খাঁজকাটা শিলার ওপর জুতা ছাড়া পদব্রজে ভ্রমণ করতে বাধ্য আমান্ডার পা ছিঁড়ে যায়। তার পায়ের রক্ত দিয়ে ট্র্যাক করা ওই পথটি এভাবেই সৃষ্টি করে এক ট্র্যাজেডির।
সেই স্মৃতিকে স্মরণে আমান্ডার একটি ছোট মূর্তি ট্রেইলের ‘আমান্ডার পথচিহ্ন’ এলাকায় উপকূল বরাবর স্থাপন করা হয়েছে। টি বেঞ্চ দিয়ে বেষ্টিত। পর্বতারোহীরা এখানে বিশ্রাম নেন।
আমান্ডার অনুসরণ করা পথটি সরকারি উদ্যোগে নতুনভাবে তৈরি করে ফুট ট্রেইলে রূপান্তরিত করা হয়েছে অনেক আগেই। উপকূলীয় কুয়াশার মাঝে গাছের সমারোহ উন্নয়ন করা এলাকাগুলোতে মহাসাগর ও বনকে ঘনিষ্ঠ করেছে।
জায়গাটি এখন অনেক শীতল ও দেশীয় আমেরিকান সংস্কৃতির প্রতিরূপ হলেও অতীতের ঔপনিবেশিক বাস্তবতা ও নৃশংসতার সাক্ষী হয়ে আছে। সাদা মানুষ ও স্থানীয়দের সংঘর্ষের দুর্ভাগ্যজনক ইতিহাসেরও প্রতীক হয়ে আছে আমান্ডার মূর্তিটি।
ভাস্কর্যটির জাঁকজমকপূর্ণ মুখ মনে করিয়ে দেয়, বাতাসে প্রাচীন আগ্নেয় শিলা মসৃণ হতে পারে, কিন্তু সময় ইতিহাসের খাঁজকাটা প্রান্তকে ভুলতে পারে না।
বাংলাদেশ সময়: ০১০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৬
এএসআর