ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অফবিট

মানুষই ছিল ‘হবিট’, বিচরণকালও অনেক বিস্তৃত!

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৭
 মানুষই ছিল ‘হবিট’, বিচরণকালও অনেক বিস্তৃত! হবিটরা প্রাগৈতিহাসিক মানব হোমিনিনের একটি ক্ষুদ্র প্রজাতি ছিল বলে চূড়ান্ত গবেষণায় জানতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

ইন্দোনেশিয়ার ফ্লোরেস দ্বীপপুঞ্জের লিয়াং বুয়া দ্বীপে বসবাসকারী ফ্লোরেসিয়েনসিস্ বা হবিটরা প্রাগৈতিহাসিক মানব হোমিনিনের একটি ক্ষুদ্র প্রজাতি ছিল বলে চূড়ান্ত গবেষণায় জানতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। অর্থাৎ, ২০০৩ সালে ওই দ্বীপের গুহা থেকে জীবাশ্ম আবিষ্কারের পর তাকে ‘হোমো’ বা মানুষ গণের নামে ‘হোমো ফ্লোরেসিয়েনসিস্’ অভিহিত করাও সঠিক ছিল। 

আবার বিজ্ঞানীদের প্রাথমিক গবেষণালব্ধ ধারণার চেয়েও অন্তত লাখ খানেক বছর  আগে থেকে পৃথিবীতে বিচরণ ছিল হবিটদের। আর চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার সময়কালও পুরনো ধারণার চেয়ে অনেক আগের।

 

লিয়াং বুয়া গুহাটির ডুবস্‌ ও ভূ-তাত্ত্বিক ডেটিংয়ের ভিত্তিতে সাম্প্রতিক গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, হোমো ফ্লোরেসিয়েনিসিস্‌রা মূলত প্রায় ৫০ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল আর কমপক্ষে ১ লাখ ৯০ হাজার বছর আগে থেকে পৃথিবী দাঁপিয়ে বেড়িয়েছে। যেখানে আগে বলা হচ্ছিল, ১ লাখ বছর আগে থেকে ফ্লোরেসে বসবাস করতো, তবে ১৫ থেকে ১৮ হাজার বছর আগে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যায়। অর্থাৎ, তাদের বিলুপ্তির সময়সীমা আমাদের চিন্তারও হাজার হাজার বছর বেশি।  

এটির বৈজ্ঞানিক নাম হোমো ফ্লোরেসিয়েনসিস্ দেওয়া হলেও বেশ কিছু গবেষক সে সময় ধারণা করছিলেন, সেটি আধুনিক মানুষ হোমো স্যাপিয়েন্সের কোনো পূর্বপুরুষ বা হোমো গণের ছিল না।  

দীর্ঘ গবেষণার পর ছোট আকারের কারণে ‘হবিট’ নামে পরিচিত রহস্যময় এ প্রজাতিটিকে আমাদের আদিম পূর্বপুরুষ ও সমসাময়িক মানব প্রজাতির সঙ্গে আত্মীয়তা করাতে নানা প্রমাণ হাজির করেছেন বিজ্ঞানীরা।  

নতুন বিশ্লেষণ বলছে, ফ্লোরেসিয়েনসিস্ মারা যাওয়া শেষের দিকের মানব প্রজাতির মধ্যে একটি। এই বিবর্তনীয় আত্মীয়টি প্রায় ৫০ হাজার বছর আগে যখন বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল, এর আগে আগে বা সে সময়ে আমাদের প্রজাতি হোমো স্যাপিয়েন্সও ফ্লোরেস অঞ্চলে এসেছিল।

বিজ্ঞান জার্নালে নতুন ওই ফলাফল প্রকাশ করে টমাস সটিকানা, স্মিথসোনিয়ান, ম্যাট টোকিরি ও অন্য গবেষকরা ঘোষণা দিয়েছেন, অর্থাৎ, আমাদের প্রজাতির সঙ্গে সমসাময়িক নিয়ান্ডারথাল (হোমো নিয়ান্ডারথ্যালেন্সিস্‌) ও আমাদের সরাসরি পূর্বপুরুষ ইরেক্টদের (হোমো ইরেকটাস্‌) পাশাপাশি সাক্ষাৎ ঘটেছিল ফ্লোরেসিয়েনসিস্‌দেরও! 

হবিটদের গুহাগুলোতে অগ্ন্যাশয়ের ছাই ও ক্যালসাইটের স্তরগুলো নতুন আবিষ্কৃত জীবাশ্মের ওপরে এবং পুরনো জীবাশ্মের নিচে ছিল। কার্বন ডেটিং গবেষণা বলছে, হোমো ফ্লোরেসিয়েনিসস্‌দের হাড়গুলো প্রায় ১ লাখ বছর থেকে ৬০ হাজার বছর  বয়সী এবং পাথরের সরঞ্জামগুলো ১ লাখ বছর ৯০ হাজার বছর থেকে ৫০ হাজার বছরের পুরনো।

জীবাশ্ম বিজ্ঞানীরা আগেই জানিয়েছেন, হবিটরা দুই মিলিয়ন বছরের মানব ইতিহাসের ধারায়ই বিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু তাদের মস্তিষ্ক ছোট ছিল, যা আধুনিক শিম্পাঞ্জিদের চেয়ে সামান্য বড়। এমনকি সাম্প্রতিককালের অন্যান্য মানব প্রজাতির সঙ্গে একই সময়ে পৃথিবীতে পদচারণা করলেও হবিটদের শরীর ও  মস্তিষ্ক আধুনিক মানুষের তুলনায় ছোট ছিল। তারা মাত্র সাড়ে তিন ফুট লম্বা ও ২৫ কেজি পর্যন্ত ওজনের হতো।  

বিশ্বের বাকি স্থান থেকে বিচ্ছিন্ন ফ্লোরেসে বসবাসও তাদের ছোট আকারের আরেকটি ফ্যাক্টর। কারণ, দ্বীপটি একটি বামন হাতির পূর্বপুরুষদেরও আবাসস্থল ছিল।

বাংলাদেশ সময়: ০৫০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।