ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অফবিট

নিয়ান্ডারথালরা হারিয়ে গেছে জেনেটিক্যাল দুর্বলতায়!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৭
নিয়ান্ডারথালরা হারিয়ে গেছে জেনেটিক্যাল দুর্বলতায়! নিয়ান্ডারথালদের হটিয়ে পৃথিবীর একক কর্তৃত্ব নিয়েছে আমাদের প্রজাতি হোমো স্যাপিয়েন্স। ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

ফ্রান্সের ব্রুনিকিল গুহার ভেতরে ১ লাখ ৭৬ হাজার বছর আগের একটি মঞ্চ কাঠামো পাওয়া গেছে। প্রবেশদ্বার থেকে ৩০০ মিটার বিস্তৃত দু’টি রিং ও বেশ কয়েকটি গোলাকার বস্তুর এ কাঠামো তৈরি করেছিল আমাদের মানব প্রজাতি হোমো স্যাপিয়েন্সদের সমসাময়িক ও প্রায় একই বৈশিষ্ট্যপূর্ণ, তবে প্রথম পূর্বপুরুষ হোমো নিয়ান্ডারথ্যালেন্সিস্‌ বা নিয়ান্ডারথালরা।

কাঠামোটি প্রাগৈতিহাসিক মানুষগুলোর গার্হস্থ্য অনুষ্ঠানের নমুনা বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের। প্রায় ৪০০ ভাঙা স্ট্যালগমাইটের বাইরে তৈরির পর সেটটি আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয় বলেও প্রমাণ পাওয়া যায়।

অর্থাৎ, তারা শুধু সামাজিকতায়ই অভ্যস্ত ছিল না, আগুনের সঠিক ব্যবহারও বেশ ভালোভাবে আয়ত্ব করতে পেরেছিল লাখ লাখ বছর আগেই।

এ প্রজাতির ৪ লাখ ৩০ হাজার বছর বয়সী জীবাশ্মের জিনের সাম্প্রতিকতম ডিএনএ গবেষণা বলছে, আমরা অর্থাৎ আধুনিক (হোমো স্যাপিয়েন্স) মানুষেরাঅথচ ১ লাখ ৭৬ হাজার বছর আগেই একটি সামাজিক অনুষ্ঠানের মঞ্চ কাঠামো তৈরি করেছিল।                                          ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীততাদের চেয়ে অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়েছিলাম। আবার, প্রাক আধুনিক স্যাপিয়েন্সরা পৃথিবীতেও এসেছে অনেক পরে, মোটামুটি ২ লাখ বছর আগে।

নিয়ান্ডারথাল ও আধুনিক মানুষের সাধারণ পূর্বপুরুষও ছিল একই। হোমো অস্ট্রালোপিথ্যাকাস্‌দের থেকে সরাসরি পূর্বপুরুষ হোমো ইরেক্টাস হয়ে বিবর্তিত হয়েছি আমরা উভয়েই।

তারপরও আমাদের কাছে পরাজিত হয়েই নিয়ান্ডারথালরা ৩০ হাজার বছর আগে পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে চিরতরে আর আমরা প্রচণ্ড প্রতাপে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছি বিশ্ব জীববৈচিত্র্যের।

প্রায় ৬০ হাজার বছর আগে আফ্রিকা থেকে এশিয়া ও ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে হোমো স্যাপিয়েন্সরা। অথচ ইউরোপে আমাদের বসবাস শুরুর আগেই এসেছিল নিয়ান্ডারথালরা। ৪০ হাজার বছর আগেও সেখানে তাদের পেয়েছিলাম আমরা। ঠাণ্ডা জলবায়ুতে মানিয়ে নিয়ে ২ লাখ বছর ধরে সফলভাবে বসবাস ছিল তাদের।

ওদিকে পূর্বপুরুষ হোমো হাইডেলবার্জেনসিস্‌ প্রজাতির অনুরূপ হলেও সমসাময়িক হোমো ডেনিসোভান থেকেও আলাদা ও বেশি গুণ ছিল নিয়ান্ডারথালের।

আমাদের নিকটতম স্বজনদের এসব নতুন নতুন গুণবাচক বৈশিষ্ট্য জানতে পেরে চমকে উঠছেন বিজ্ঞানীরা। এতো বেশি অভিযোজ্যতার ক্ষমতা পেয়েও কেন নিয়ান্ডারথালদের পরাজয় ও চিরতরে নির্মূল হওয়া?- সেটিও দীর্ঘকাল ভাবিয়েছে তাদেরকে।

বছরের পর বছর ধরে চলা গবেষণায় জেনেটিক কোড ম্যাপিং করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, হোমো নিয়ান্ডারথ্যালেন্সিস্‌ হল ডিএনএ ডি এনকোডেড হওয়া প্রথম বিলুপ্ত মানব প্রজাতি। নিয়ান্ডারথাল ডিএনএ’র সঙ্গে আমাদের জিনোমের তুলনা করে তারা এখন বলছেন, আধুনিক মানব প্রজাতি (হোমো স্যাপিয়েন্স) জেনেটিকালি অনন্য। তাই জেনেটিক্যাল দুর্বলতাকেও নিয়ান্ডারথালদের হারিয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী করা হচ্ছে।

গবেষণা আরও প্রমাণ করে, অস্তিত্বের প্রথম ১ লাখ বছর ধরে আমাদের ডিএনএ’র কিছু অংশও সাধারণ পূর্বপুরুষদের থেকে নিয়ান্ডারথালদের সঙ্গে ভাগ করে পেয়েছি আমরা। অনেক জীবন্ত ইউরোপীয় ও এশীয়দের জেনোমে নিয়ান্ডারথাল জিন থাকার হারও ১ থেকে ৪ শতাংশ।

স্পেনের ডি লস হুওসোস সিমায় পাওয়া নিয়ান্ডারথালদের প্রাচীনতম ফসিলগুলো ছিল ২8 জন পুরুষের। ৪ লাখ ৩০ হাজার বছরের পুরনো সিমা মানুষগুলোর ডিএনএ রেকর্ড বলছে, তারা পূর্বপুরুষ হোমো হাইডেলবার্জেনসিস্‌ প্রজাতির অনুরূপ হলেও ডেনিসোভানস্‌ থেকে জেনেটিক্যালি আলাদা।


ক্রোয়েশিয়ার ভিন্ডিজা গুহা থেকে পাওয়া প্রায় ৪৪ হাজার বছর বয়সী নিয়ান্ডারথাল জীবাশ্মের তিনটি হাড় থেকে নেওয়া ডিএনএ’র জিনোম মেপে বলা হয়েছে, জিনের পার্থক্যই দু’টি প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য, যা ২ লাখ থেকে ৩০ হাজার বছর আগে পর্যন্ত সময়কালে ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে।

এ ফলাফলগুলোর ওপর ভিত্তি করে গবেষকরা জানান, ইউরোপিয়ান নিয়ান্ডারথাল ও আফ্রিকান হোমো স্যাপিয়েন্সের পূর্বপুরুষরা প্রথমবারের মতো যখন বিচ্ছিন্ন হয়, তখনই আমাদের প্রজাতি স্বতন্ত্র হয়ে ওঠে এবং চিত্তাকর্ষক নতুন সূচনা করে।

একটি নতুন গবেষণায় দেখা যায়, একই সময়ে বসবাসকারী দুই প্রজাতির মস্তিষ্কের পরিমাণ সমান ছিল। তবে আধুনিক মানুষের তুলনায় নিয়ান্ডারথালের বড় চক্ষুকোটর থাকায় মস্তিষ্কের বৃহৎ অংশই দেখার কাজে ব্যবহৃত হয়। দেখার এ বৃহত্তর অংশটিকে মোট মস্তিস্কের আকার থেকে বিয়োগ করে গবেষকরা জানান, নি্যানেন্ডারথালের বাকি মস্তিষ্কের এলাকা আধুনিক মানুষের তুলনায় প্রায় ১৫ শতাংশ ছোট ছিল। ফলে আমাদের সঙ্গে বিলুপ্ত সহোদরদের হরমোনের পার্থক্যও গড়ে ওঠে।

জীবিত প্রাণীর মস্তিষ্কের চাক্ষুষ ব্যবস্থা চোখের আকারের সঙ্গে সম্পর্কিত- এ তথ্য দিয়ে বিজ্ঞানীরা বলছেন, জিনোমের এই সাদৃশ্যে-স্বাতন্ত্রের ফলে ইউরোপে দেখা হওয়ার পর নিয়ান্ডারথালদের আদিম প্রজাতি হিসেবে না নিয়ে সহাবস্থান শুরু করেছিল আধুনিক মানুষেরা। তবে প্রথমদিকে কম মেলামেশা হয়েছে দুই সহোদর প্রজাতির।

তারপর কিছু পরিবর্তন ঘটে। আমাদের অস্ত্রের সঙ্গে প্রতীকী শিল্পকর্ম উন্নত হতে শুরু করে। আফ্রিকায় বসবাসের জায়গা ও খাদ্য জনসংখ্যার তুলনায় পর্যাপ্ত হলেও ইউরোপ-এশিয়ায় তা কখনো পূরণ হয়নি। ফলে অনিবার্যভাবেই টিকে থাকার লড়াই শুরু হয় এবং হোমো স্যাপিয়েন্সরা জটিল করে তোলে নিয়ান্ডারথালদের জীবনযাত্রা।

গবেষকরা আরও বলছেন, তাদের জেনেটিক্যাল এসব দুর্বলতায় সামাজিক গোষ্ঠী হয়েও একতাবদ্ধ বড় দল গড়তে করতে পারেনি নিয়ান্ডারথালরা। হোমো স্যাপিয়েন্সেরা সেখানে একক ব্যক্তি থেকে প্রত্যেকের সঙ্গে বৃহত্তর সামাজিক সম্পর্কযুক্ত হতে পারে।

ফলে অনেক এগিয়ে থাকা আধুনিক মানুষেরা খুব সহজেই তাদের আবাস দখল করে নেওয়ায় ৪০ হাজার বছর আগে বাস্তুচ্যুত হয়। একটি বড় সংখ্যক নিয়ান্ডারথালের খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতার সংকোচনও তাদের জায়গায় আধুনিক মানুষ দ্রুত প্রতিস্থাপিত হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।