দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপের পাইরেনিস পর্বতমালার পশ্চিম কোণে অবস্থিত স্পেনের বাস্ক স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলের ভাষা এটি। এখানকার আদিবাসী ভাষাগত গোষ্ঠী বাস্ক জাতি কথা বলেন বাস্ক বা ইস্কারায়।
স্বৈরশাসক জেনারেল ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কো স্পেনের ক্ষমতা দখলের পর প্রাচীন ইস্কারা ভাষার ব্যবহার নিষিদ্ধ করলেও বাস্কের বাসিন্দারা তা গোপনে টিকিয়ে রেখেছেন।
সবচেয়ে জনবহুল বাস্ক শহর বিলবাওয়ে রয়েছে বিখ্যাত গগেনহেইম মিউজিয়াম। সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্ক ভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর পেলো সালাবুরু বলেন, ‘ভাষাটি কোথা থেকে এসেছে, তা কেউ বলতে পারবেন না। অনেক বছর আগে পণ্ডিতরা এ বিষয়ে গবেষণা করে কোনো স্পষ্ট সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি’।
‘পূর্ব বা ইন্দো-ইউরোপীয়রা সাড়ে ৩ হাজার বছর আগে ইউরোপে আসার সময় নিজস্ব ভাষা নিয়ে আসেন, যার থেকে বেশিরভাগ ইউরোপীয় ভাষার জন্ম হয়। কিন্তু ইস্কারা ভাষার ইন্দো-ইউরোপীয় শিকড় নেই এবং মূলত সম্পূর্ণ ভিন্ন। এটি ইউরোপের একমাত্র জীবিত ভাষা, যার সঙ্গে অন্য কোনো ভাষার সম্পর্ক নেই’- বলেন সালাবুরু।
তবে ভাষাটির উৎপত্তি সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি তত্ত্বের মধ্যে রয়েছে- ইস্কারা ও ইবেরিও একই ভাষা ছিল বা দু’টিই একই ভাষা থেকে বিবর্তিত। এ ভাষাটির মতোই আইবেরিয়ান (আইরেরিয়ান উপদ্বীপের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলের একটি মৃত ভাষা) অঞ্চলের প্রাথমিক ভাষাগুলোর সঙ্গে খুব সামান্য সম্পর্ক ছিল।
প্রফেসর পেলো সালাবুরু বলেন, ‘বেশ কয়েকটি ভাষার বিভিন্ন লিখিত ব্যবস্থার সঙ্গে মূলত ল্যাটিন ভাষার বিপরীতে আইবেরিয়ান উপদ্বীপে আইবেরিয়ান ভাষাটি বলা হতো। বর্তমান স্পেন ও পর্তুগালে ১৯২০ এর দশকে ওই ভাষাগুলোর লিখিত ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। আইবেরিয়ান ভাষাকে বাস্কের অনুরূপ বলে মনে হচ্ছে’।
ইস্কারার মাইলস্টোন মোটামুটি সম্প্রতি ঘটলেও এটি হাজার বছর ধরে ব্যবহৃত হয়েছে। তবে ভাষাটির প্রথম বই ফ্রান্সের ফ্রান্সডোতে ১৫৪৫ সালে ছাপা হয়। ১৯১৪ সালে প্রথম বাস্ক স্কুল সান সেবাস্তিয়ানও (স্কুলগুলোকে ফ্রাঙ্কো ধ্বংস করে দেন) স্পেন থেকে চালু হয়। ভাষাটি ১৯৬৮ সালে প্রমিত করা হয়, যা ইস্কারায় লেখার পথ তৈরি করে।
বাস্ক স্কুলগুলো প্রকৃতির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী ইস্কারা ভাষা চর্চার কেন্দ্রস্থল। আশেপাশের উপত্যকা, অত্যাশ্চর্য পর্বতমালা, নীল সমুদ্র সৈকত ও নীলাভ আকাশকে বর্ণনা করতে শব্দের বিশাল সংগ্রহ পাইরেনিস পর্বতমালার অঞ্চলটির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুপ্রাণিত করেছে। ভাষাটিতে প্রাকৃতিক দৃশ্য, প্রাণী, বায়ু, সমুদ্রের জন্য বিভিন্ন শব্দভাণ্ডার অন্তর্ভুক্ত। এক ‘প্রজাপতি’ বলারই প্রায় ১০০টি উপায় রয়েছে।
সম্প্রতি বাস্কের গুইপুজকোয়া প্রদেশের শহর ইরেন্টেরিয়ার একটি প্রাচীন গুহায় ১৪ হাজার বছর আগের মানুষের আঁকা গুহাচিত্র পাওয়া গেছে। বিকাশে সান্তিমামি ও গুয়িংজুতে একনেইনসহ অন্যান্য প্রাগৈতিহাসিক গুহায় ৯ হাজার বছর আগে মানুষের বসবাসেরও প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সালাবুরু বলেন, ‘আমরা গুহায় কথিত ভাষা জানি না। তবে অনুমান করতে পারি যে, প্রোটলভুয়ালটি নামক প্রাচীন ভাষা বর্তমান বাস্কের সঙ্গে কিছুটা প্রাসঙ্গিক’।
‘এটাই প্রমাণ করে যে, ইস্কারা কয়েক হাজার বছর ধরে বেঁচে থাকা ভাষা। এর জোরেই ফ্রাঙ্কোর একনায়কত্বকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল’।
বাস্ক ভাষার সেরা পণ্ডিত কোল্ডো মিটসেলেনা বলতেন, ‘অলৌকিক ঘটনার জোরেই বেঁচে থাকতে সক্ষম হয়েছে বাস্ক‘। আর সালাবুরু বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষেই এটি একটি অলৌকিক ঘটনা, যেটা বাস্ককে শিক্ষিত না করেই বেঁচে আছে’।
বাস্কের জাতীয়তাবাদী নেতা কারমেল এরেক্যাটক্সো বলেন, ‘বাস্ক প্রধান মধ্যযুগীয় মাছ ধরার গ্রাম গ্যাটেরিয়ায় ইস্কারার আধুনিক সংস্করণ স্প্যানিশ ও গ্রেসিয়াস ভাষার দ্বারা প্রভাবিত। আমি তাই আশাবাদী যে, বাস্ক টিকে থাকবে। কেনান, এটি এগিয়ে ও পিছনে গেলেও নিজেই বিবর্তিত’।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৭
এএসআর