মাত্র ৪০ শতাংশেরও কম শিশু প্রাথমিক শিক্ষা পায় এবং প্রাথমিক স্কুলে পড়াশুনা করা প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের চারজনের মধ্যে মাত্র একজন একটি বাক্য পড়তে পারেন।
বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্রতম দেশগুলোর মধ্যেও একটি দেশ লাইবেরিয়ার মানুষ মাত্র গত সপ্তাহেই নতুন প্রেসিডেন্টকে নির্বাচিত করেছেন।
তবে বছরখানেক ধরেই স্কুলগুলোর প্রাপ্যতা ও গুণগত মান উন্নয়নে একটি কর্মসূচি চালাচ্ছে দেশটির সরকার। পিএসএল নামক কর্মসূচিটি অনেকের কাছে বিতর্কিত হলেও মূল্যায়নকারীরা বলছেন, এটি শিক্ষার মান উন্নয়নের পাশাপাশি শিশুদের বিদ্যালয়মুখী করছে।
লাইবেরিয়ান শিক্ষামন্ত্রী ওয়ার্নারসহ মন্ত্রীরা গত বছর ৯৩টি সরকারি স্কুল পরিচালনায় আটটি বেসরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। বেশিরভাগই আন্তর্জাতিক স্কুলগোষ্ঠী, কিছু অভ্যন্তরীণ সংস্থাও সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সঙ্গে অবৈতনিক এ স্কুলগুলো পরিচালনা করছে।
সমর্থকেরা এটিকে সাহসী উদ্ভাবন হিসেবে সমর্থন করে বলছেন, এতে শিক্ষার মানের উন্নতি হবে। বিরোধীরা বলছেন, এটি রাষ্ট্রীয় স্কুল ব্যবস্থাকে বেসরকারিকরণের একটি পথ।
পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের সমর্থকেরা দাবি করেন যে, উন্নত প্রাইভেট সেক্টর ব্যবস্থাপনার ফলাফল অনিবার্যভাবে উন্নত হবে।
অন্যদের অভিযোগ, শিক্ষার ‘ব্যক্তিগতকরণ’ হচ্ছে এবং এ উন্নতিগুলো সম্পূর্ণ স্কুল ব্যবস্থায় টেকসই হবে না বা হতে পারে না।
এক বছর পরে এসে সরকারের নিজস্ব হোমওয়ার্কের পরিবর্তে ওয়াশিংটনের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার ও ক্যালিফোর্নিয়ার সানদিয়াগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ১৮৫টি স্কুলের ৩ হাজার ৪৯৯ জন শিক্ষার্থীর মাঝে পিসিএল কর্মসূচির প্রভাব নিয়ে পরীক্ষা ও গবেষণা করেন।
তাদের ফলাফল বলছে, প্রাইভেট- পার্টনারশিপ বা অংশীদারিত্বমূলক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সরকারি স্কুলগুলোর তুলনায় বছরের অর্ধেকেরও বেশি সময় বিদ্যালয়ে ইংরেজিতে ও একটি অতিরিক্ত বছরের দুই তৃতীয়াংশ সময় গণিতে শিক্ষা পেয়েছে। শিক্ষালাভ ও পরীক্ষার হার পার্টনারশিপ স্কুলে ৬০ শতাংশ হলেও সরকারি স্কুলে মাত্র ৪০ শতাংশ। অর্থাৎ, পড়ার সম্ভাবনা পিসিএল স্কুলে বেশি, ছাত্ররা প্রতি সপ্তাহে প্রায় দ্বিগুণ সময় শিক্ষায় ব্যয় করে।
পিএসএল স্কুল ভালো করেছে, কিন্তু তারা আরো অর্থ পেয়েছে। প্রথম বছরে প্রত্যেক শিশুপ্রতি মাসে সরকারের সাধারণ বাজেটের ৫০ ডলারের সঙ্গে পিএসএল স্কুলগুলো বিদেশি তহবিল থেকে অন্তত আরও ৫০ ডলার বেশি অতিরিক্ত বরাদ্দ পেয়েছে, যা একক ক্ষেত্রে বছরে শিশুপ্রতি ১০০০ ডলার পর্যন্তও দাড়িয়েছে।
মূল্যায়নকারীরা দেখিয়েছেন যে, সরকারির তুলনায় পিএসএল স্কুলগুলোর ৩৭ শতাংশ বেশি শিক্ষক উচ্চতর প্রশিক্ষিত। নতুন স্নাতকোত্তর এই শিক্ষকদের বাছাই করে নিয়োগ করা হয়েছে। যদি লাইব্রেরিয়ার সমস্ত স্কুলে এ কর্মসূচি চালু হয়, তাহলে প্রশিক্ষিত শিক্ষক বাড়ার ক্ষেত্রে সেটি প্রয়োজনীয় হবে।
ইংল্যান্ডের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা অংশীদারিত্ব গ্রুপের নির্বাহী চেয়ারম্যান ডেভিড লয়স প্রকল্পটিতে লাইবেরিয়ার সরকারকে পরামর্শ দিচ্ছেন। তার মতে, লাইবেরিয়ান মন্ত্রীরা ঠিক কাজটিই করেছেন। একাডেমিক প্রোগ্রামের আকার বাড়ার লক্ষ্য রাতারাতি অর্জিত হবে না, যেখানে ইংল্যান্ডের সাত বছর লেগেছিল।
বিশ্বব্যাপী শিক্ষার সংস্কারক ও লাইবেরিয়ার শিশুদের জন্য এটি একটি প্রতিশ্রুতিশীল পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সরকারি ক্ষমতা বাড়ানো ও খরচ কমিয়ে আনা। উভয়টিই সম্ভবত প্রয়োজন হবে, যদি একটি আশাপ্রদ সংস্কার সত্যিই লাইবেরিয়ার শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৮
এএসআর