রোমের অতি ধনীরা এখানে সপ্তাহান্তে ভ্রমণে আসতেন। প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের ছিল সমুদ্র সৈকতের মোজাইক-টাইলস্ করা সুইমিং পুলের সঙ্গে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, যেখানে তারা ইচ্ছাগুলো উপভোগ করতেন।
ইতালির ক্যালডারিয়া-পেপ্পেড পশ্চিম উপকূলের নেপলস থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরের একটি রিসোর্ট শহর ছিল বায়া, যা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে টেররিয়ান সাগরের কয়েক কিলোমিটার ভেতরে ডুবে যায়।
সমুদ্রগর্ভে হারিয়ে যাওয়া প্রাচীন ইতালির এই শহরটিতে প্রাচীনকালে কবি ও সেনাপতিসহ সবার যাতায়াতও ছিল বায়ায়। মহান বক্তা সিসেরো উপসাগর থেকে পশ্চাদপসরণের সময় এখানে বসে তার বক্তৃতা রচনা করেন। কবি ওয়ার্জিল ও প্রকৃতিবিদ প্লিনি গণস্নানের এ স্থানটিকে বসবাসের জন্য বেছে নেন তাদের আয়ু বাড়াতে।
বিশুদ্ধ পানি ও একটি হালকা জলবায়ুও প্রথমে বাইয়াতে রোম সাম্রাজ্য বিস্তারে আকৃষ্ট করে।
সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচের ওই ধ্বংসাবশেষগুলো আকিষ্কারের আগে পর্যন্ত প্রত্নতত্ত্ববিদদের কাছে বায়া একটি নিরাপরাধ প্রদেশ ছিল। ভূ-গর্ভস্থ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটিকে চলতি শতকের শুরুতে সামুদ্রিক সুরক্ষিত এলাকা মনোনীত করা হয়। এরপর ২০০২ সাল থেকে থ্রি-ডি স্ক্যানিং প্রযুক্তি ও সামুদ্রিক পুরাতত্ত্বের অন্যান্য অগ্রগতি শহরটির বিস্তারিত জানতে সহায়তা করে।
প্রাচীনকালের ওই অধ্যায়ের নতুন কিছু উদ্ভাবন প্রথমবারের মতো কলঙ্কময় কিছু বিষয় দেখিয়েছে। ডুবুরি, ঐতিহাসিক ও ফটোগ্রাফাররা ভূ-পৃষ্ঠের মন্দিরের ভেতরে ভেসে আসা ঘূর্ণমান বৃত্তাকার স্তম্ভগুলো ও সমুদ্রের নিচের পোর্টোসিস আবিষ্কার করে বুঝতে পারেন, এটি মন্দির নয়, একটি প্রমোদ ভবন ছিল।
বর্তমানের সমুদ্র সৈকতের উপকূল বরাবর সে সময় ছিল গণস্নানাগার ও ছোট প্রমোদতরীর বিশেষ পোতাশ্রয়, একটি হোটেল এবং কিছু সি-ফুড রেস্তোরাঁ। উত্তর-পশ্চিমের নেপলস ছিল একটি সংকীর্ণ রাস্তা আচ্ছাদিত।
প্রত্নতত্ত্ববিদেরা ইতোমধ্যেই ভূ-গর্ভস্থ বায়া শহরের রোমান কলাম, প্রাচীন রাস্তা এবং বিস্তৃতভাবে পাকা প্লাজাগুলোকেও শনাক্ত করেছেন। সম্রাট ক্লডিয়াসের বোন অক্টাভিয়া ক্লৌদিয়া মূর্তি ও ইউলিসিস ডাইভটার গ্রোটাসের প্রবেশদ্বারটি চিহ্নিত করেন, তবে তাদের বাহ্যিক অস্ত্রগুলো ভেঙে গেছে।
এ ধরনের আরও ডুবো ভাস্কর্য আবিষ্কৃত হয়, যেগুলোর বেশিরভাগই প্রতিলিপি। মূলগুলো বায়া দুর্গের পাহাড়টিতে খুঁজে পাওয়া যেতে পারে, যেখানে ক্যাম্পানিয়া প্রত্নতাত্ত্বিকরা সমুদ্র থেকে টানা একটি জাদুঘর পরিচালনা করেন।
বায়ার আরও ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হচ্ছে ধীরে ধীরে। এসব আবিষ্কারে রোমের সবচেয়ে ভয়ানক লজ্জাজনক রহস্যের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে।
ভূ-তাত্ত্বিকেরা প্রথমে ধ্বংসাবশেষগুলো পরীক্ষা করে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। পাহাড়ের অংশগুলোকে একবার সমুদ্রতল থেকে নিচে ডুবিয়ে দেওয়ার কথাও বলেছিলেন। দুই দশক পরে ইতালির কর্মকর্তারা শহরটির নিচের অংশগুলো জরিপে সাবমেরিন কমিশন করে।
এতে জানা যায়, অগ্ন্যুৎপাতে রোম সাম্রাজ্যের ভূ-গর্ভস্থ চাপ বায়া শহরকে ঘিরে স্থির হয়ে পড়ে এবং পড়ে যায়, যা প্রাচীন ধ্বংসাবশেষকে ধীরে ধীরে সমুদ্রপৃষ্ঠের দিকে ধাক্কা দিয়ে গিলে ফেলে।
স্থলভাগে প্রাচীন রোমান শহরটির অনেক ধ্বংসাবশেষ ছাড়াও পারকো আর্কিওলোকো দেল টের্মের অংশবিশেষ সমুদ্রস্তরের ওপরে ও কাছাকাছি এখনও দৃশ্যমান হয়। ১৯৫০ এর দশকে পম্পেই, অ্যামেদো মাইউরি ও হারকিউলানেয়াম শহর আবিষ্কৃত হয়, যেগুলোর ঐতিহাসিক স্থানের মোজাইক চত্ত্বর ও গম্বুজ গণস্নানাগারের অবশেষও এ বৈশিষ্ট্যময়।
পারকো আর্কিওলোকো দেল টের্মে ও আশেপাশে বায়ার আগের মহিমার একটি ছায়া দেখা যায়, যদিও এটি এখনও আবেগ ও আনন্দের আত্মা ধারণ করে। প্রত্নতত্ত্ববিদরা এখন একটি লুকানো প্রবেশদ্বার আবিষ্কারে ভূ-গর্ভস্থ শহরটির অনুসন্ধান করতে পারেন, যেখানে অন্তত কিছু দর্শনীয় ধনভাণ্ডার রয়েছে।
তবে ভূমিকম্পবিদরা ভবিষ্যতে বায়ার উপকূল বরাবর আরও অগ্ন্যুৎপাতের পূর্বাভাস দিচ্ছেন, যাতে শহরটির ভাগ্য আবার পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে। কেবলমাত্র গত এক বছরেই ২৪টি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০১৭
এএসআর