গত মার্চেই ক্লেপিটান তার শীতকালীন নিবাস আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চল থেকে প্রায় ১৪ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ফিরে গেছে ক্রোয়েশিয়ার ছোট্ট গ্রাম ব্রড্স্কি ভারসে। গত ১৬ বছরে এই নিয়মের কোনো হেরফের করেনি সে।
শুভ্র পালকের ম্যানিলাও অধীরচিত্তে অপেক্ষা করছিল ক্লেপিটানের ফেরার। গত কয়েক বছরে যুগলটির কোলজুড়ে জন্মেছে ৬২টি শিশু সারস। এবারের গ্রীষ্মেও আবার মা হতে চায় ম্যানিলা।
প্রাণীজগতে ভালোবাসার এই বিস্ময়কর উদাহরণ ক্লেপিটান ও ম্যানিলাকে এনে দিয়েছে খ্যাতি। আদর্শ যুগল হিসেবে তাদের নাম উচ্চারিত হয় ক্রোয়েশিয়ানদের মুখে মুখে।
১৯৯৩ সালে ম্যানিলাকে একটি পুকুরের পাশে আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় একটি স্কুলের তত্ত্বাবধায়ক ভকিচ। শিকারির গুলিতে মৃতপ্রায় সারসটি উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে আসেন তিনি।
একটা স্টোররুমে কাটে ম্যানিলার শীতকালগুলো। আর বসন্ত আসতেই বাড়ির ছাদে বড় একটা পাখির-বাসা তৈরি করে দেওয়া হয় তার জন্য। শীতকালীন পরিযাত্রা শেষে বসন্তের দক্ষিণা হাওয়ায় ভর করে প্রতিবার এখানেই প্রাণের বন্ধুটির কাছে ফিরে আসে ক্লেপিটান।
আগস্টে ক্লেপিটানকে আবার শীতকালীন পরিযাত্রার জন্য বেরিয়ে পড়তে হয়। হাজার হাজার কিলোমিটার পারি দিয়ে তাকে যেতে হয় আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলে। যাওয়ার আগে তাদের কোলজুড়ে জন্ম নেওয়া নতুন সারসগুলোকে ওড়ার প্রশিক্ষণ দিতে ভোলে না সে।
আর পুরো শীতকালটা ম্যানিলা কাটায় ভকিচের সঙ্গে। ৭১ বছর বয়সী ভকিচ ম্যানিলাকে গোসল করায়, শুষ্ক আবহাওয়ায় ত্বকের ক্ষয় থেকে বাঁচতে তার পায়ে লোশন মেখে দেয়।
ভকিচ একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, আমি মাছ ধরতে গেলে ম্যানিলাকে সঙ্গে করে নিয়ে যাই। তাছাড়া আমরা একসঙ্গে টেলিভিশনও দেখি! আমি যদি সেদিন তাকে পুকুর থেকে উদ্ধার না করতাম, তবে কোনো শেয়াল এসে তাকে খেয়ে ফেলতো। আমি তার জীবন বাঁচিয়েছি, তাই আমিই তার সব দেখাশোনা করি।
বাংলাদেশ সময়: ০০২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১৮
এনএইচটি/এএ