ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

অফবিট

৪১ বছর পর পাকিস্তান থেকে বাড়ি এলেন হারিয়ে যাওয়া একলিমা 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০২২
৪১ বছর পর পাকিস্তান থেকে বাড়ি এলেন হারিয়ে যাওয়া একলিমা 

সাতক্ষীরা: ৪১ বছর আগে নিখোঁজ হওয়ার পর সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে পাকিস্তানে সন্ধান মেলে একলিমা বেগমের। এরপর যোগাযোগ করে নিজ গ্রাম সাতক্ষীরার তালার উপজেলার গঙ্গারামপুরে ফিরেছেন তিনি।

তার আগমনকে কেন্দ্র করে গঙ্গারামপুর গ্রামে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।  

বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে নিজ বাড়িতে পৌঁছান গঙ্গারামপুর গ্রামের মৃত ইসমাইল শেখের হারানো মেয়ে একলিমা বেগম। এসময় পরিবারের সদস্যরা ও গ্রামবাসী ফুল ছিটিয়ে গলায় মালা পরিয়ে বরণ করে নেন একলিমা ও তার পাকিস্তানি সংসারের বড় ছেলে আশরাফ খানকে। খুশিতে কান্নায় ভেঙে পড়েন একলিমা বেগম ও তার স্বজনরা।

এদিকে একলিমা বেগমের আগমন উপলক্ষে রঙিন কাগজ ও বেলুনে সেজেছে তাদের গঙ্গারামপুরের বাড়িটি। বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা গ্রামবাসীর মধ্যে। তার আগমনকে ঘিরে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটেছে সবার। সেই সঙ্গে তাকে এক নজর দেখতে উৎসুক মানুষের ভিড় জমেছে বাড়িতে।

আরও পড়ুন: ৪১ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া একলিমার খোঁজ মিলল পাকিস্তানে! 

নিজ গ্রামে পৌঁছে একলিমা বেগম বলেন, এত বছর পর সবার কাছে এসে খুব ভালো লাগছে। এভাবে আবার সবার কাছে ফিরতে পারব, কখনও ভাবিনি।

একলিমা বেগমের ভাতিজা জাকারিয়া ইসলাম বলেন, বহু চেষ্টার পরে ফুফুকে দেশে আনতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। তারা ২৫ দিন এখানে থাকবেন। ইচ্ছা আছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা তাদের ঘুরিয়ে দেখাব।

একলিমা বেগমের ছেলে আশরাফ খান বলেন, আমাদের বাবা অনেক ছোট বেলায় মারা গেছেন। মা অনেক কষ্ট করে আমাদের বড় করেছেন। মায়ের দেশে ফেরার ইচ্ছে পূরণ করতে পেরে ভালো লাগছে। এখন এখানকার সবাই আমাদের ওখানে যাবে, আমরা আসব, এভাবেই চলবে।

প্রসঙ্গত, স্বামীর মৃত্যুর পর অনেকটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন একলিমা বেগম। তিন ছেলে-মেয়ে রেখে ১৯৮১ সালের কোনো একদিন হারিয়ে যান তিনি। সে সময় পরিবারের সদস্যরা বহু খোঁজাখুঁজি করেও সন্ধান পাননি একলিমার।

দীর্ঘ ৪১ বছর পর ফেসবুকের কল্যাণে পাকিস্তানের শিয়ালকোটের দিলওয়ালিতে খোঁজ মেলে একলিমা বেগমের।

একলিমার বয়স এখন ৬৫ বছর। তার কেবল মনে ছিল বাবা-মা-ভাইদের নাম আর তালার গঙ্গারামপুর গ্রামের কথা।

পাকিস্তানের শিয়ালকোটের দিলওয়ালিতে পরিবারের সঙ্গে অবস্থানরত একলিমা মৃত্যুর আগে অন্তত একবার নিজ মাতৃভূমিতে আসার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। তার এ আকুতির কথা ভিডিও করে সেখানকার পরিবারের সন্তানেরা ফেসবুকে যশোরের একটি গ্রুপে পোস্ট করেন।

তাদের করা ভিডিওটি চোখে পড়ে একলিমা বেগমের বড় ভাই মৃত মকবুল শেখের ছেলে মো. জাকিরায়া শেখের। ভিডিওতে একলিমার বলা নামগুলো তার দাদা-বাবা ও চাচাদের সঙ্গে মিলে যাওয়ায় তিনি বিষয়টি নিয়ে বাড়িতে আলোচনা করেন এবং ভিডিও দেখিয়ে নিশ্চিত হন যে ভিডিও’র একলিমা বেগমই তার হারিয়ে যাওয়া ফুফু। এরপর তারা পারিবারিকভাবেই ভিডিও কলে যোগাযোগ করেন একলিমার সঙ্গে।

পরে যাবতীয় আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেয় একলিমার পরিবার। যার সুবাদে নিজ গ্রামে ফিরতে পেরেছেন তিনি।
ভাতিজা জাকারিয়া ইসলাম জানান, একলিমা পাকিস্তানের একটি শেল্টার হোমে ছিলেন। সেখানে মুহাম্মদ সিদ্দিক নামে একজনের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং পরে তারা বিয়ে করেন। মুহাম্মদ সিদ্দিক কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। সেখানে তাদের পরিবারে দু’টি ছেলে এবং দু’টি মেয়ে রয়েছেন।

একলিমা বেগমের প্রথম ঘরের এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছেন বাংলাদেশে। মেয়ে দু’টি এখন স্বামীর সংসারে। আর ছেলে হেকমত আলী কাজ করেন ঢাকার একটি কারখানায়।  
 
বাংলাদেশ সময়:  ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।