ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

স্বাক্ষর জালিয়াতি ও প্রতিকার

সাফ্ফাত আহম্মদ খান  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৯ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০২৪
স্বাক্ষর জালিয়াতি ও প্রতিকার প্রতীকী ছবি

প্রত্যেকটি মানুষ পৃথক ব্যক্তিসত্তার অধিকারী। একজন মানুষকে যেমন আঙুলের ছাপ চোখের রেটিনা ইত্যাদি দিয়ে এককভাবে শনাক্ত করা যায়, তেমনি তার হাতের লেখা ও স্বাক্ষরও তাকে অন্য সবার থেকে আলাদা করে।

তাই তো যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টে যেমন দলিল, চুক্তিপত্র, ব্যাংকের চেক বই ইত্যাদিতে ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত করতে যুগ যুগ ধরে স্বাক্ষরের ব্যবহার হয়ে আসছে।  

হাতের লেখার ক্ষেত্রে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো-
* ভিন্ন দুজন ব্যক্তির পক্ষে কখনোই একই রকম লেখা সম্ভব নয়।
* ঠিক একইভাবে কারও পক্ষে দ্বিতীয়বার লিখা সম্ভব নয়।

স্বাক্ষর মানব পরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ। এমনকি এই ডিজিটাল যুগে এসেও এর ব্যবহার এতটুকুও কমেনি। তাই তো দুষ্কৃতকারীরা ব্যক্তির ক্ষতি করতে স্বাক্ষর জালিয়াতিকে অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা সম্ভব।

সাধারণভাবে তিন ধরনের স্বাক্ষর জালিয়াতি সম্পর্কে বলা যেতে পারে।
Blind forgery (অন্ধ জালিয়াতি): যখন কেউ সঠিক স্বাক্ষরটি সম্পর্কে না জেনে স্বাক্ষর জাল করার চেষ্টা করে তাকে Blind forgery বলা হয়। এক্ষেত্রে জাল স্বাক্ষরটির আসল স্বাক্ষরের সঙ্গে মিল থাকে না, যা সহজেই জাল হিসেবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়।

Trace-over signature forgery (ট্রেস-ওভার জালিয়াতি): মূল স্বাক্ষরের ওপর আলাদা কাগজ বসিয়ে তার ছায়ার ওপর স্বাক্ষরের প্রতিলিপি করাকে Trace-over signature forgery বলা হয়। এ ধরনের স্বাক্ষরটি একটু খেয়াল করলেই জাল হিসেবে শনাক্ত করা সম্ভব।

Skilled forgery (দক্ষ জালিয়াতি): এ ধরনের জালিয়াতির ক্ষেত্রে দক্ষতার মাধ্যমে অবিকল মূল স্বাক্ষরের অনুরূপ স্বাক্ষর দেওয়া হয় যা সাধারণভাবে বোঝা যায় না। খালি চোখে দেখলে তা আসল স্বাক্ষরের মতোই মনে হবে। এ ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করে অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ দিয়ে প্রমাণ করতে হয়।

যদিও জাল স্বাক্ষর প্রমাণ করা যায়, তারপরও আপনি যদি চান কেউ যেন সহজে আপনার স্বাক্ষরটি জাল বা নকল করতে না পারে, তাহলে নিম্নোক্ত কৌশলগুলো প্রয়োগ করতে পারেন ।

১. আপনার স্বাক্ষরটি একটু স্টাইলিশ বা বিশেষভাবে অঙ্কিত করুন যাতে অনুলিপি বা ট্রেস-ওভার জালিয়াতি করা সহজে সম্ভব না হয়।
২. চেক স্বাক্ষর করার ক্ষেত্রে জেল কলম ব্যবহার করতে পারেন।
৩. স্বাক্ষরে অলঙ্করণ ব্যবহার করুন যা জটিল এবং সময়ে সময়ে পরিবর্তন করুন।
৪. স্বাক্ষরে লম্বা স্ট্রোক (বাড়তি দাগ) আঁকুন এবং ছোট হাতের অক্ষর লিখুন কারণ এটি অনুকরণ করা কঠিন।

আপনি যদি স্বাক্ষর জালিয়াতির শিকার হন তাহলে একজন হস্তাক্ষর বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে পারেন। যাতে তারা আপনাকে জাল স্বাক্ষর প্রমাণে সাহায্য করতে পারে। অথবা যোগাযোগ করতে পারেন বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অব ফরেনসিক সাইকোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেসে (www.forensicbd.org)। বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান এটি, যারা দেশে ও বিদেশে ফরেনসিক বিষয়ক বিভিন্ন সেবা এবং শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি দেশি-বিদেশি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে আধুনিক যন্ত্রর মাধ্যমে হাতের লেখা, স্বাক্ষর এবং ফিঙ্গার প্রিন্ট যাচাই করে, যা আপনার বিভিন্ন আইনগত প্রয়োজনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

লেখক
ফরেনসিক ডকুমেন্ট পরীক্ষক ও হস্তলেখা বিশ্লেষক
কম্পিউটার হ্যাকিং ও ফরেনসিক ইনভেস্টিগেটর 
নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অব ফরেনসিক সাইকোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস 

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৮ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০২৪
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।