বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণ বহু বছর ধরে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এই প্রক্রিয়া আমাদের শ্রমবাজার, অর্থনীতি ও বৈদেশিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করে তুলেছে।
২০২২ সালে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণ আবার চালু হলে মাত্র ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সিকে নিয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়।
সীমিতসংখ্যক এজেন্সিকে অনুমোদন দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত বাজারে প্রতিযোগিতার অভাব সৃষ্টি করেছে, যার ফলে নিয়োগ ব্যয় কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অভিবাসী শ্রমিকদের অনেকেই সরকার নির্ধারিত ৭৮ হাজার টাকার জায়গায় চার থেকে ছয় লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করেছেন, যা তাঁদের ওপর বাড়তি অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করেছে।
আমি ব্যক্তিগতভাবে শত শত অভিবাসী কর্মীর অভিজ্ঞতা শুনেছি, যাঁরা ঋণগ্রস্ত হয়ে বিদেশে গেছেন এবং সেই ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে প্রথম বছর অনেকটা মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হয়েছেন। অনেকে কাজের শর্তাবলি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা না রেখেই গেছেন, যার ফলে পরে নানা জটিলতার সম্মুখীন হয়েছেন।
আমার মতে, সব বৈধ ও যোগ্য রিক্রুটিং এজেন্সিকে অভিবাসন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। এতে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণের সুযোগ কমবে এবং শ্রমিকরা উপকৃত হবেন। সরকারি পর্যায়ে একটি কেন্দ্রীয় ডিজিটাল রিক্রুটমেন্ট প্ল্যাটফর্ম চালু করা যেতে পারে, যেখানে কর্মী ও নিয়োগকারী উভয়ই সরাসরি যুক্ত হতে পারবেন। এতে মধ্যস্বত্বভোগী কমবে এবং স্বচ্ছতা বাড়বে।
বিদেশে যাওয়ার আগে কর্মীদের প্রশিক্ষণ, অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা এবং লিখিত চুক্তি বোঝার সক্ষমতা অর্জনের ব্যবস্থা করতে হবে। কর্মী প্রেরণের প্রতিটি ধাপে সরকারি মনিটরিং ও একটি কার্যকর অভিযোগ ব্যবস্থাপনা চালু রাখতে হবে, যাতে যেকোনো অনিয়ম দ্রুত সমাধান করা যায়। মালয়েশিয়ায় অভিবাসনব্যবস্থা আরো কার্যকর ও মানবিক করার জন্য সরকার, রিক্রুটিং এজেন্সি ও সিভিল সোসাইটির পদক্ষেপ প্রয়োজন। অভিবাসনের মর্যাদা ও সফলতা নিশ্চিত করতে হলে এখনই সময় সিন্ডিকেট নির্ভরতা পরিহার করে একটি অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
লেখক: ম্যানেজার, ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম
সূত্র: কালের কণ্ঠ