ঢাকা, শুক্রবার, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২৭ জিলহজ ১৪৪৫

মুক্তমত

১৫ মিনিটের হেলিকপ্টার ভ্রমণ, এক গ্লাস খেজুর রস ও ৫টি চকলেট পান!

রফিকুল বাহার, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৪
১৫ মিনিটের হেলিকপ্টার ভ্রমণ, এক গ্লাস খেজুর রস ও ৫টি চকলেট পান! ছবি: সংগৃহীত

সাংবাদিক হিসেবে হেলিকপ্টারে চড়ার অভিজ্ঞতা এটাই প্রথম নয়। এর আগে ওয়ান-ইলেভেনের সময় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) হাসান মাসহুদের সঙ্গে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-বান্দরবান-রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল।

তখন দুর্নীতিবিরোধী ক্যাম্পেইন চালাতে কমিশন প্রধানের সঙ্গে একদিনের এক বিশেষ সফরে গিয়েছিলাম। এরপর গিয়েছিলাম সেনাবাহিনীর আমন্ত্রনে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে। পাহাড়ি-বাঙালি উত্তেজনা নিয়ে সরেজমিন প্রতিবেদন তৈরির জন্য সাংবাদিক প্রতিনিধি দলকে নিয়ে এই হেলিকপ্টার ভ্রমণ।

সরকারি বাহিনীর এই হেলিকপ্টারে ওঠার জন্য নাম-ঠিকানা সবই যাচাই করে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা। বিশাল আকৃতির সেই হেলিকপ্টারে আসন ব্যবস্থা খুব বেশি আরামদায়ক ছিল না। প্রচণ্ড গরম। সে সঙ্গে কপ্টারের পাখার শব্দে কান বন্ধ হয়ে যায়!

রোববার আবারও একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হেলিকপ্টারে চড়ে বাড়বকুণ্ড যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। অত্যাধুনিক এই হেলিকপ্টারে যাত্রীর আসন চারটি। পাইলটের আসন ব্যবস্থা দু’টি। রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। কানে শব্দ অনুভূত না হওয়ার জন্য বিশেষ হেডফোনও রয়েছে। ওই হেডফোন দিয়ে পাইলটের ধারা বর্ণনা শোনা যায়। প্রয়োজনে কোনো কিছু জানার থাকলে সেটিও জিজ্ঞাসা করা যায় পাইলটকে। হেলিকপ্টারের ইন্টেরিয়র অনেকটা দামি বিএমডব্লিউ কারের মতই।

চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আমরা যাত্রা শুরু করি সকাল সাড়ে নয়টায়। বঙ্গোপসাগরের উপকূল ঘেঁষে ভাটিয়ারির শিপইয়ার্ড ও বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির উপর দিয়ে আমরা চলে যাই বাড়বকুণ্ডের পিএইচপি ফ্লোট গ্লাসের কারখানায়। মাত্র ১৫ মিনিট সময় লাগে। কারখানা চত্বরে ইট বিছিয়ে তৈরি করা হয় নতুন হেলিপ্যাড।

হেলিকপ্টারের শব্দ শুনে কাজ ফেলে উৎসাহী ও কৌতূহলী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসে ভিড় জমায়। কাঁচ কারখানার অফিসে আমাদের আপ্যায়ন করা হয় খেজুরের টাটকা রস দিয়ে। কারখানার পেছনের বিশাল পাহাড়ি এলাকার বাগান থেকে আনা খেজুরের রস। পানির গ্লাসে খেজুরের রস ঢালার পর মনে হচ্ছিল ডাবের পানি। মুখে চুমুক দিতেই অসাধারণ এক স্বাদ। মিষ্টি ও শীতল এক পানীয় পান করার মতই। বেশ কয়েক বছর আগে খেজুরের রস খেয়েছিলাম। সেটি ছিল ঘোলাটে ধরনের। স্বাদ ছিল কিছুটা টক।

পরে জানা গেল পিএইচপির মালিকানাধীন ১১৩ একরের এক পাহাড়ি এলাকায় এসব খেজুর গাছের চাষ। বিশাল এই বাগানের দেখভাল করেন পিএইচপি গ্রুপের পরিচালক আমির হোসেন সোহেল। হেলিকপ্টারে চড়ে তিনিও এসেছিলেন আমাদের সঙ্গে, ছিলেন তরুণ ব্যবসায়ী বি-রিচ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শামসুল ইসলাম ও বাংলানিউজ২৪.কমের চট্টগ্রাম ব্যুরো চিফ তপন চক্রবর্তী। সোহেল অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করেছেন। মুখস্থ রাখার অসাধারণ এক ক্ষমতা তার। ১৫০ জন বন্ধুবান্ধব ও কর্মকর্তার টেলিফোন নাম্বার মুখস্থ। বাগানে ১ লাখ ১০ হাজার ৫৯৮টি বিভিন্ন জাতের গাছ রয়েছে। এর ১ হাজার তাল গাছ, ১০ হাজার ৩৫৪টি বাঁশ গাছ ইত্যাদি নানা তথ্য তার ঠোঁটস্থ। ২টি লেকের মত পুকুরও রয়েছে। তাতে কতটি মাছ আছে সে প্রশ্ন করা হলে রুমে হাসির রোল ওঠে।

পান-সুপারিও পরিবেশন করা হয় আমাদের সামনে। এই পান খাওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করতে আমির হোসেন সোহেল অভিনব গল্প শোনান। গল্পটি এরকম-পান আনা হয়েছে হাটহাজারীর এক পানবরজ থেকে। সাইজে ছোট, স্বাদে মিষ্টি। এই পানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘চকলেট পান’। খেলে মুখ জ্বলে না, জিহ্বাও ভার হয় না। প্লেটে রাখা ৫টি পান ৫ মিনিটে সাবাড় করে ফেললেন তিনি।

সকাল সাড়ে দশটায় আমরা বাড়বকুণ্ডের সেই কাঁচ কারখানার হেলিপ্যাড থেকে রওনা দিয়ে পেছনের পাহাড়ি বাগান দেখলাম। সারি সারি অসংখ্য পাহাড়ের মাঝে আমির হোসেন সোহেলদের সেই বাগান আলাদা করা যায়। সেখানে জঙ্গল নেই। সারিবদ্ধভাবে লাগানো অসংখ্য গাছ। ১৫ মিনিটে আমরা পৌঁছে গেলাম চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।

ফিরে এসে বিমানবন্দরের লাউঞ্জে বসে হেলিকপ্টার ব্যবহারের যৌক্তিকতা তুলে ধরে তরুণ এই শিল্পপতি বলেন,  এটা কেবল বিলাসিতা নয়, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দ্রুত শেষ করার অন্যতম এক আকাশ যান। উত্তরবঙ্গে কোল্ড স্টোরেজ দেখার জন্য যাতায়াতে লাগতো চারদিন। সেই কাজ আমি হেলিকপ্টারের মাধ্যমে সেরেছি মাত্র ১১ ঘণ্টায়। ঢাকার অদূরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে মেঘনার তীরে যেসব শিল্পকারখানা গড়ে ওঠেছে সেগুলো দেখভাল করার জন্য মালিকরা ব্যবহার করেন এই হেলিকপ্টার। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে জরুরি যান হিসেবে বিকাশ ঘটছে এখন হেলিকপ্টারের।

রাজনৈতিক হানাহানি, অবরোধ, ভাঙচুর, সহিংসতার মধ্যেও নীরবে চলছে দেশের অগ্রগতি। স্বাধীনতার পরে ১৮০ ডলার গড় আয়ের এই বাংলাদেশের মানুষের গড় আয় এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯০০ ডলারে। স্বাধীনতার পরে খেলনা হেলিকপ্টার উড়াতে দেখেছি যেসব সৌখিন ও ধনাঢ্যদের, তাদের কেউ কেউ এখন নিজেরাই হেলিকপ্টার কিনে তাতে চড়ছেন। আবার কেউ কেউ হেলিকপ্টার ভাড়া নিয়ে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছেন।

রফিকুল বাহার: নির্বাহী সম্পাদক, সুপ্রভাত বাংলাদেশ

বাংলাদেশ সময়: ২২২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৪
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।