ঢাকা, শুক্রবার, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২৭ জিলহজ ১৪৪৫

মুক্তমত

একটি কূটনৈতিক মধ্যাহ্নভোজের গল্প

মাসুদা ভাট্টি, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৪
একটি কূটনৈতিক মধ্যাহ্নভোজের গল্প

দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজের আমন্ত্রণ জানিয়ে আসছিলেন এক সাংবাদিক বন্ধু। আমি আসলে জানতাম না এ ধরনের কূটনৈতিক মধ্যাহ্নভোজে ঠিক কী ধরনের আলোচনা হয় বা ঘটনা ঘটে।

তাই বহুবার আমন্ত্রিত হয়েও যাওয়া হয় নি। মাঝে একদিন কথা দিয়েও যেতে পারি নি ঢাকা শহরের জ্যাম-এ আটক থাকার কারণে। সে অবশ্য অবরোধ-পূর্ব আমলের কথা, তখনও ঢাকা শহরে জ্যাম হতো!!

কিন্তু বিগত সপ্তাহে আর কোনো ভাবেই না করা যায় নি, দূর প্রাচ্যের একটি দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছি এবং যথাসময়ে গিয়ে গুলশানের একটি রেস্তোরাঁয় উপস্থিত হয়েছি। নির্দিষ্ট সময়ের একটু পরে গিয়েও প্রথমে আয়োজকদের কাউকে পাওয়া যায় নি। কিছুক্ষণ পরে এলেন তিনি এবং সঙ্গে আরো আমন্ত্রিতরা। বেশিরভাগই দেশের প্রথম সারির দৈনিক সংবাদপত্রগুলোর কূটনৈতিক রিপোর্টারগণ। কিছুক্ষণের মধ্যেই এলেন মান্যবর রাষ্ট্রদূত। কুশলাদি বিনিময় হলো, পরিচয় পর্ব হলো, দেখা গেলো দু’একজনকে তিনি আগে থেকেই চেনেন।

এরপর মেনু পছন্দের ব্যাপার। দেখা গেলো সাংবাদিকদের মধ্যে বাংলা ভাষায় সে দেশের খাবার নিয়ে বেশ কথাবার্তা চালাচালি হতে। কেউ কেউ প্রশ্ন তুললেন, এখানে নির্দিষ্ট দেশটির জাতীয় খাবার পরিবেশন করা হয় কি না? সেটা কি, কৌতূহল প্রকাশ করলে জানা গেলো, সেটা হচ্ছে কুকুরের মাংস। এ-ওর মুখ চাওয়া-চাওয়ি শেষে বাঙালি পরিবেশকদের হাতেই ছেড়ে দেওয়া হলো মেনু ঠিক করার ভার। কিন্তু সেখানে যেনো মুরগি থাকেই এমন নির্দেশনাও দেওয়া হলো। খাবারের অপেক্ষাতেই আলাপ শুরু হলো।

প্রশ্নটি শুরু করেছিলাম আমিই, বললাম, মাননীয় রাষ্ট্রদূত, চীন, ভারত, রাশিয়ার মতো ‘এশিয়ার দৈত্যগণ’ বাংলাদেশের নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানালো, আপনার দেশ কেন পিছিয়ে রইলো? রাষ্ট্রদূত উত্তর দেয়ার আগেই আমাদের সাংবাদিকদের ভেতর থেকে উত্তর এলো, এই সরকার অবৈধ, এই সরকারের কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। মান্যবর রাষ্ট্রদূতও সঙ্গে সঙ্গে তাল দিলেন। নির্বাচন ঠিক হয় নি, মানুষজন আসে নি। তাকে শেষ করতে না দিয়েই একজন সাংবাদিক বললেন, এদেশে গণতন্ত্র নেই, এ দেশে একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছে শেখ হাসিনার সরকার। আমি আমন্ত্রণকারী সাংবাদিক বন্ধুর দিকে তাকাই, শুরু হলো কি? রাষ্ট্রদূত কিছু বলার আগেই তার মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে যেভাবে নিজের রাজনৈতিক অবস্থানকে সাংবাদিক বন্ধুরা তার সামনে পরিষ্কার করে তুলছেন তাতে এখানে আসার উদ্দেশ্য আসলে কী সেটা নিয়েই আমি সন্দিহান হয়ে পড়ি।

কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝতে পারি যে, কূটনৈতিক রিপোর্টার হিসেবে যে ক’জন বন্ধু ওখানে আছেন তারা আসলে একথাই বলতে এসেছেন যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেন অবিলম্বে এই অবৈধ সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে। সেজন্য প্রয়োজন হলে অবশ্যই সরকারের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা (স্যাংশন) আরোপ করতে হবে; একজন বললেন, বিদেশিরা চাপ দিলেই এই সরকার সুড় সুড় করে ক্ষমতা ছেড়ে পালাবে; ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে যেনো কোনোভাবেই বৈধতা না দেওয়া হয়---এমন দাবি জানানো হলো।

রাষ্ট্রদূত প্রশ্ন করলেন: বাংলাদেশের মানুষ কী মনে করছে এই নির্বাচন নিয়ে? অনেকে তো ভোট দিতে গিয়েছে, তাই না?

সমস্বরে উত্তর: না কেউ ভোট দিতে যায় নি, সব জাল ভোট পড়েছে। আমি নিজে নির্বাচন কাভার করেছি।

প্রশ্ন হলো, কূটনৈতিক রিপোর্টারদের কি নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহের দায়িত্ব দেয়া হয়? আমাদের বার্তা সম্পাদক বন্ধুগণ বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন। এমনিতে হয়তো হয় না, কিন্তু বিশেষ বিশেষ কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয় হয়তো। কিন্তু সেদিন সকলেই নির্বাচন কভার করেছেন। এর ফাঁকে বলে নিই, সেখানে আমরা সাংবাদিক ছিলাম মোট ছয় জন (আমি সহ), আর ছিলেন মান্যবর রাষ্ট্রদূত এবং তার সহকারী। সহকারী ভদ্রলোক কোনো কথা বলেন নি, তিনি হয়তো শুধুই নোট নিয়েছেন, তা-ও স্মৃতিতে, তাকে কোনো কাগজপত্র বহন করতে দেখি নি।

কেন নির্বাচনের দিন মানুষ ভোটকেন্দ্রে যায় নি? রাষ্ট্রদূত মহোদয়ের এ প্রশ্নের উত্তরে একজন সাংবাদিক বললেন, বিএনপিনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আহ্বানে দেশের সকলেই নির্বাচন বর্জন করেছেন। আমি বললাম, এখানে শুধু তার আহ্বান কাজ করেছে বলে আমি মনে করি না, নির্বাচনের আগে বিগত এক বছর ধরে চলে আসা সহিংসতা এবং নির্বাচনের অব্যবহিত আগে তার তীব্রতার কারণেই অনেকে নির্বাচনকেন্দ্রে যেতে ভীত বোধ করেছে। কিন্তু যারা গিয়েছে তারা প্রকৃতই ভোটার এবং তাদের এই যাওয়ারও একটা মূল্য রয়েছে, যা আমাদের চিন্তা করতে হবে।

সঙ্গে সঙ্গে একজন সাংবাদিক বন্ধু বললেন, বিএনপিকে শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ ক্ষমতায় দেখতে চেয়েছে বলে জরিপ প্রকাশিত হয়েছে এবং এই নির্বাচনে বিএনপি যায় নি বলে এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নয়।

রাষ্ট্রদূত জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে বিএনপি নির্বাচনে এলো না কেন? আপনাদের কী মনে হয় বিএনপি’র নির্বাচনে আসা উচিত ছিল? ৯০ ভাগ মানুষ তো বিএনপিকে চাইতো তাই না?

কে কার আগে উত্তর দেবে তা নিয়ে একটু দ্বন্দ্ব হলো, তারপর একজন বললেন, অবশ্যই বিএনপি’র নির্বাচনে না আসাটাই ঠিক হয়েছে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে আসবে কেন বিএনপি? রাষ্ট্রদূত আমার দিকে তাকালেন। বললাম, বিএনপি’র নির্বাচনে আসাটা জরুরি ছিল এ কারণে যে, যে সকল কারণ দেখিয়ে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দারি করে আসছেন তা প্রমাণ করা দলটির জন্য সহজ হোতো, নির্বাচনে এলে। যদি ক্ষমতাসীন সরকার নির্বাচনে কোনো রকম কারচুপি কিংবা অন্য কোনো অন্যায় কৌশল অবলম্বন করতো তাহলে সেটি সহজেই ধরা পড়ে যেতো। কারণ দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা আগের চেয়ে অনেক বেশি স্বচ্ছ হয়েছে। কোটি কোটি ভুয়া ভোটার নেই, মিডিয়া একটি শক্তিশালী ভূমিকা নিয়েছে এবং দেশের ভোটাররাও আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন, মোবাইল ফোনে ছবি তোলা এবং তা মুহূর্তে সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়া এখন বাস্তবতা।

রাষ্ট্রদূত কিছু বলার আগেই একজন সাংবাদিক বললেন, এই সরকার সব টিভি চ্যানেলগুলিকে কিনে রেখেছে, এই সরকারই তাদের লাইসেন্স দিয়েছে ফলে তারা সরকারের বিরুদ্ধে কিছুই প্রকাশ করতো না। এখন এই কথার কী উত্তর দেবো? তাছাড়া আমরা তো কথা বলতে এসেছি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে, নিজেদের মধ্যে বিতর্ক করতে তো আসি নি। তাই চুপ থাকতে হলো।

রাষ্ট্রদূত জানতে চাইলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে কেবল মধ্যবিত্তরাই এসেছে তাই না? দেশের একটি ইংরেজি দৈনিকের সাংবাদিক সঙ্গে সঙ্গে বললেন, ১৫৪ আসনে তো ভোটই হয়নি। রাষ্ট্রদূত বললেন, হ্যাঁ, আমি সেটা জানি। কিন্তু যেখানে হয়েছে সেখানে তো কেবল মধ্যবিত্তরা ভোট দিয়েছে তাই নয়? সেই সাংবাদিক বন্ধুর উত্তর, আমার বাড়ির দারওয়ান, একেবারে নিম্নবিত্তের মানুষ, সে পর্যন্ত আমাকে বলেছে, স্যার আমার ভোট কোথায়? রাষ্ট্রদূত বুঝলেন যে, তার প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে না। তিনি ঘোরালেন কথা। বললেন, এই মুহূর্তে ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটি কী করতে পারে? আবার একযোগে:কেন স্যাংশন! একজন একটু বাড়িয়ে বললেন, বাংলাদেশে জাতিসংঘের সৈন্য পাঠানো যায় না? দেশের একটি ফাইন্যান্সিয়াল দৈনিকের রিপোর্টার তিনি। ইংরেজি দৈনিক। রাষ্ট্রদূত তার দিকে তাকাচ্ছেন। আমিও তাকালাম। জিজ্ঞেস করলাম, জাতিংঘের সৈন্যদের এদেশে ডেকে আনাটাই আপনার কাছে একমাত্র সমাধান? তিনি বললেন, অবশ্যই। জাতিসংঘ এলেই দেখবেন সব ঠিক হয়ে গেছে। কী আর বলবো?

খাওয়া চলছে। নানা পদের খাবার। মাঝে মাঝে বাংলায় নানাবিধ মন্তব্য হচ্ছে খাওয়া-দাওয়া বিষয়ক। এবং খুব বোঝা যাচ্ছে যে, আমার উপস্থিতি ওখানে ঠিক মানাচ্ছে না। বিশেষ করে, আমি তাদের সঙ্গে তো তাল মিলিয়ে কথা বলতে পারছি না। বরং উল্টো-পাল্টা কথা বলছি। রাষ্ট্রদূত আমার দিকে ফিরলেন, জিজ্ঞেস করলেন, মাইনাস টু-তো ফেল করলো, তাহলে এর সমাধান কি? বললাম, দেখুন, সমাধান, জনগণ। এদেশ নানা ঘাত-প্রতিঘাত এবং ঐতিহাসিক বাস্তবতার ভেতর দিয়ে এগিয়ে এসেছে এবং এগুচ্ছে। সব ঘটনারই ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া এবং পরম্পরা রয়েছে। আজকের যে নির্বাচন, নির্বাচনী সহিংসতা, তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসা এবং বাতিল হওয়া সবকিছুরই ধারাবাহিকতা এবং কার্যকারণ রয়েছে। আপনার উচিত এই বিষয়গুলি একটু গভীরভাবে জানার চেষ্টা করা, যদি আপনি জানতে চান, তাহলে দেখতে পাবেন যে, উভয় পক্ষের নানা যৌক্তিকতা থাকতে পারে কিন্তু তাই বলে এদেশের মানুষকে যেভাবে কষ্ট দেয়া হচ্ছে তা এদেশের মানুষের আসলে প্রাপ্য নয়। বাংলাদেশ নানা দিক দিয়ে স্বতন্ত্র, মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েও এখানে গণতন্ত্রের চর্চা হচ্ছে এবং গণতন্ত্রের পক্ষে মানুষ রাস্তায় নামছে- বিষয়টি কিন্তু অন্য কোথাও পাবেন না। আর যদি পশ্চিম বা আপনাদের পক্ষ থেকে এদেশে গণতন্ত্রের জন্যই আওয়াজ তুলতে চান তাহলে আগে মধ্যপ্রাচ্য কিংবা অন্য যেসকল দেশে গণতন্ত্র নেই তাদের সম্পর্কে কথা বলে তারপর এদেশ সম্পর্কে বলতে হবে। কারণ, এদেশের মানুষ একটু ব্যাখ্যা চাইতেই পারে যে, সৌদি আরব কিংবা কাতার বা কুয়েতের সঙ্গে যখন তাদের সম্পর্ক থাকতে পারে, সেখানে তো গণতন্ত্র নেই, এখানে তবুও নির্বাচন হচ্ছে, গণতন্ত্র হোঁচট খেতে খেতে এগুচ্ছে, এদের নিয়ে এতো মাথাব্যথ্যা কেন তাদের? প্রশ্নটি কিন্তু ইতোমধ্যেই উঠতে শুরু করেছে, সুতরাং এগুলো ভেবে দেখতে হবে আপনাদের। আর সমাধানের কথা যদি বলেন তাহলে, সমাধানও এখান থেকেই হতে হবে, কেউ চাপিয়ে দিতে পারবে না, বা দিলেও তা এদেশের জনগণ মেনে নেবে না। আপনিই তো বললেন, মাইনাস টু ব্যর্থ হয়েছে, মাইনাস টু কিন্তু এদেশের মানুষের মাথা থেকে আসে নি।

রাষ্ট্রদূত, মাথা নাড়ছেন, সঠিক সঠিক বলে। কিন্তু আমাদের সাংবাদিক বন্ধুরা বলতে শুরু করলেন, এদেশে কিন্তু বিরোধী দলের অফিস ভাঙচুর আর বিরোধী দলের নেতাদের এরকম কোনোদিনই গ্রেফতার করা হয় নি। বিশেষ করে রাস্তায় এভাবে বিরোধী দলের নেতাদের পেটানোর ঘটনা অতীতে আর কখনও ঘটেনি। বিরোধী দলের মহাসচিবকে এভাবে আর কখনও গ্রেফতার করা হয়েছে বলেন? বলেন আপনি? জলিল ভাইকে কি গ্রেফতার করা হয়েছিল?

বলতে চাইলাম, এই সব প্রশ্নের উত্তর আপনাদের অবশ্যই পরে দেওয়া যাবে। তারা শুনবেন না। বলতেই থাকলেন। রাষ্ট্রদূতও তাদের সঙ্গে সুর মেলালেন, বেগম জিয়াকে বন্দী করে রাখা হয়েছে, সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বন্দী অবস্থায় তার সঙ্গে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতগণ দেখা করলেন কী করে? বন্ধ হয়ে যাওয়া সংবাদপত্র এবং টেলিভিশন চ্যানেলটি যে দেশের ভেতর ধর্মীয় সহিংসতা ছড়িয়ে দিচ্ছিলো সেকথাও কিন্তু কারো অজানা নয়। আমাকে বলা হলো, আপনার সঙ্গে একদম একমত নই। এদেশে গণতন্ত্র নেই, আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল নয়। মাননীয় রাষ্ট্রদূত, আপনাদের উচিত, এখনই ব্যবস্থা নেয়া। রাষ্ট্রদূত হাসলেন। বললেন, ধরুন, অদূর ভবিষ্যতে যদি বাংলাদেশের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ বা অন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়াও হয় তাহলে কেমন হবে? সমস্বরে, ভালো হবে, খুবই ভালো হবে। রাষ্ট্রদূত আমার দিকে তাকালেন, বললাম, উল্টোটাও হতে পারে মাননীয় রাষ্ট্রদূত। এদেশের মানুষ হয়তো ভাবতে পারে একটি রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা করতে গিয়ে আপনারা এদেশের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। সেক্ষেত্রে আফগানিস্তান কিংবা পাকিস্তানের মতো এদেশেও আপনাদের চলাচল এবং নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থার প্রয়োজন পড়তে পারে, যা কোনোভাবেই এদেশের গণতন্ত্রকে সহায়তা দেবে না। চারদিক থেকে বলা হলো, একমত নই, মোটেও একমত নই।

এরপর আর কথা বলার কোনো ইচ্ছে হলো না। শুনলাম অনেকক্ষণ। রাষ্ট্রদূত বললেন, সাংবাদিক বন্ধুরাও বললেন। বিষয়টি পরিষ্কার হলো যে, কেন এদেশের রাষ্ট্রদূতগণ মাঝেই মাঝেই একমুখি আচরণ করেন। তাদের তথ্যভাণ্ডারই বা এতো দুর্বল কেন। মধ্যাহ্নভোজটি আরো সুন্দর এবং উপভোগ্য হতে পারতো যদি আলোচনাটা প্রকৃত অবস্থাকে তুলে ধরতো। কিন্তু তা তো হয়নি। শেষ হলো কূটনৈতিক মধ্যাহ্নভোজ।

পুনশ্চ: লেখাটি সম্পর্কে ফেইসবুক স্ট্যাটাসে অনেকেই মন্তব্য করেছেন উপস্থিত সাংবাদিকদের নাম প্রকাশ করার জন্য। বিষয়টি নিশ্চিতভাবেই নীতিগত হতো না, কারণ, এই অনাড়ম্বর মধ্যাহ্নভোজ কোনো ‘অফিসিয়াল’ কিছু ছিল না, ছিল নিছক মত-বিনিময়। সে কারণেই, এই মধ্যাহ্নভোজের গল্পের সকল চরিত্র কাল্পনিক কিন্তু ঘটনা সত্য!!


ঢাকা॥ ১৯ জানুয়ারি, রবিবার॥ ২০১৪॥
[email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।