ঢাকা, বুধবার, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ০৩ জুলাই ২০২৪, ২৫ জিলহজ ১৪৪৫

মুক্তমত

ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে হবে ক্রিকেটীয় চিন্তায়

অঘোর মন্ডল, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৪
ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে হবে ক্রিকেটীয় চিন্তায় ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

 টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আবহ তৈরি হয়ে গেছে। দলগুলো বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছে।

বাংলাদেশ অধিনায়ক আনুষ্ঠানিক সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছেন,  তারা দেশের মানুষকে আর কাঁদাতে চান না। যদি কাঁদতেই হয়, সেই কান্না যেন হয় আনন্দের। অধিনায়ককে ধন্যবাদ দিতে হবে তাঁর উপলব্ধির জন্য। অন্তত তিনি বুঝতে পেরেছেন, এদেশের মানুষ একের পর এক ব্যর্থতা আর দেখতে চান না। বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না, অধিনায়ক তার দলের ফোকাস ক্রিকেটেই ফেরাতে চাইছেন।

কিন্তু বিশ্বকাপের আবহে অন্যদের ফোকাস যে ক্রিকেট থেকে নড়ে গেছে! আর ফোকাস নড়ে যাওয়ার একটাই কারণ-- টাকা। বিশ্বকাপ সামনে রেখে চারিদিকে টাকা উড়ছে। এ আর রহমানের কনসার্টের পেছনে টাকা। বিভিন্ন শহরের সৌন্দর্য বর্ধনের নামে টাকা। কিন্তু এই কনসার্ট আর সৌন্দর্য বর্ধনের সঙ্গে ক্রিকেটের কোনো সম্পর্ক নেই! আইসিসি’রও কোনো সম্পর্ক নেই। ২০১১ সালের বিশ্বকাপের আগেও এই সৌন্দর্য বর্ধনের নামে কয়েকশ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু বাড়ে নি ক্রিকেটীয় কোনো সৌন্দর্য! একটা বিশ্বকাপের; হোক সেটা ফুটবল, রাগবি, হকি কিংবা ক্রিকেট আয়োজক দেশে একটা লিগ্যাসি থেকে যায়। যা দেখে মানুষ বলতে পারে এখানে বিশ্বকাপ হয়েছিল। সে কারণে এই মাঠটা তৈরি হয়েছিল। বাংলাদেশ কি তেমন কিছু পেয়েছিল সেই বিশ্বকাপ থেকে? না পায় নি। পেলে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে এতো সংস্কার করতে হতো না বিভিন্ন স্টেডিয়ামের। অথচ ২০০৭ এর  বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেলো গোটাকয় নতুন স্টেডিয়াম। যা এখন তাদের ক্রিকেটীয় অবকাঠামোগত সম্পদ। বিশ্বকাপ এসেছে বলে আমরা বিভিন্ন শহরে লাল-নীল বাতি জ্বালাচ্ছি। স্টেডিয়ামের সংস্কার করছি।

বিশ্বকাপ শেষে বাতি নিভে যায়। আমাদের ক্রিকেট যে অন্ধকারে সেই অন্ধকারেই থেকে যায়! এবারও ঢাকা শহরের সৌন্দর্য বাড়াতে একশ পনের কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ক্রিকেট সৌন্দর্য বর্ধনে না তৈরি হয় একটা মাঠ, না হয় একটা প্র্যাকটিস গ্রাউন্ড! বোর্ড কর্তারা মাঠের সংস্কার চান। কিন্তু ক্রিকেটের গতিপথ নির্ধারণে যে সংস্কার দরকার সেটা করতে খুব একটা আগ্রহী নন তারা। আগ্রহ দেখাবেন কেন? টিম ব্যর্থ হলে ক্ষমা চাওয়ার জন্য তো মুশফিক-সাকিব কেউ না কেউ আছেন।

 টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে মাঠ-ঘাট-রাস্তা সংস্কার করে ঔজ্জ্বল্য বাড়ানোর চেষ্টা। কিন্তু ক্রিকেটীয় ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে যে কাজগুলো করা দরকার সেটা কি হচ্ছে? অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কাপ পর্বেই উঠতে পারলো না। কেন পারলো না, সেই প্রশ্নের উত্তর কি জানা গেছে?

 আসলে দোষটা আমজনতার। একটা ম্যাচ ভাল খেললে আমরা অসম্ভব আবেগতাড়িত হয়ে উচ্ছ্বাসে ভেসে যাই। আম জনতার কথা কি বলবেন; দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে ক্রীড়ামন্ত্রী, বিসিবি কর্তা, আমরা সবাই একটা জয়ের কৃতিত্ব ভাগাভাগি করতেই ব্যস্ত হয়ে পড়ি! অপ্রিয় হলেও সত্যি, আমরা চটকদারিতে বিশ্বাসী। তাই আইসিসি না চাইলেও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেরও একটা উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করতে হবে আমাদের। আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকলেও বিসিবি ব্যস্ত এ আর রহমানের কনর্সাট আয়োজনে! অবশ্য অসুবিধা কি! টাকাতো দিচ্ছে‘জনগণ’ নামক গৌরী সেন!
বিশ্বকাপ কিংবা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন করে বিশ্ব ক্রিকেটে টিকে থাক যায় না। এটাই হচ্ছে কঠিন সত্য। তার কিছুটা হলেও কি টের পাচ্ছে না বাংলাদেশ? নিজের মাঠে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ; অথচ গোটা দেশ সংশয়াচ্ছন্ন বাছাই পর্বের বাধা পেরিয়ে মূল পর্বে বাংলাদেশ খেলতে পারবে কি না! র‌্যাংকিং-এর উন্নতি না হলে আগামীতে বিশ্বকাপেরও বাছাই পর্ব পেরুনোর লড়াইয়ে নামতে হতে পারে বাংলাদেশকে। আর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে হলে টপ এইটে ঢুকতে হবে সেটা তো আমরা এখন ভুলেই গেছি।

আসলে আমাদের ক্রিকেট এক অদ্ভূত সন্ধিক্ষণে আছে। টেস্ট স্ট্যাটাস আছে। কিন্তু খেলতে হবে সব কিছু যোগ্যতার ভিত্তিতে। সেই বিষয়টা-ই আমাদের কাছে কম গুরুত্ব পাচ্ছে। বিশ্ব ক্রিকেটে সেরা দলগুলোর পাশাপাশি একই সমান্তরালে হাঁটতে হলে ঢাকা শহরে লাল-নীল বাতি জ্বালিয়ে ঔজ্জ্বল্য বাড়ালে চলবে না। বাড়াতে হবে ক্রিকেটীয় চিন্তাশক্তির আরো ঔজ্জ্বল্য। প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গির আরো স্বচ্ছতা বাড়ানো। ভুল। শেষ বাক্যটায় একটু ভুল বলা হলো। শুধু দৃষ্টিভঙ্গির স্বচ্ছতা নয়। স্বচ্ছতা থাকতে হবে সব জায়গায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।