ঢাকা: নগরায়ন ও পরিবর্তিত সমাজ ব্যবস্থায় যৌথ পরিবার ভেঙে সৃষ্টি হচ্ছে একক পরিবার। এই সকল পরিবারে নবজাতকের পরিচর্যার পুরো দায়িত্ব বর্তায় মা-বাবার উপর।
নবজাতক ভূমিষ্ঠ হওয়ার অব্যবহিত পূর্বে ও পরে উদ্ভুত বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে একজন স্ত্রীর পাশে তার স্বামীর উপস্থিতি অতি প্রয়োজনীয়, বিশেষ করে একক পরিবারগুলোতে। নবজাতকের জন্মের সময় বাবার সান্নিধ্য একজন মায়ের মানসিক শক্তিকে বহু গুণ বাড়িয়ে দেয়।
![](files/koria_sm_684651020.jpg)
এই বিষয়ে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক, অতিরিক্ত সচিব আ.ক.ম সাইফুল ইসলাম চৌধুরীর মতামত হলো, বিদ্যমান সরকারি ছুটি বিধিমালায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য পরিমিত ছুটির বিধান রয়েছে। পিতৃত্বকালীন ছুটি হিসাবে কোন অতিরিক্ত ছুটি সংযুক্ত করা হলে কর্মক্ষেত্রে জনবল সংকট দেখা দিতে পারে। তবে কর্তৃপক্ষ বিকল্প জনবলের সংস্থান রেখে উক্ত কর্মকর্তা/কর্মচারীকে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে অর্জিত ছুটি হতে সমন্বয়ের মাধ্যমে ছুটির সুযোগ দিতে পারেন।
সরকারি কর্মক্ষেত্রে পিতৃত্বকালীন ছুটির যথেচ্ছ ব্যবহারের ঝুঁকি থাকলেও বেসরকারি পর্যায়ে এই চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেখানে কর্মস্থলে নিজের কাজে ও বাসায় নবজাতকের যত্নে অংশ নিতে যেয়ে বাবার ক্ষেত্রে দুই দিকেই গুণগত ঘাটতি দেখা দেয়। মা ও নবজাতকের জন্য সময় দিতে না পারায় বিবেকের দংশনে ভোগেন অনেক বাবা। তার মধ্যে জন্ম নেয় তীব্র মানসিক চাপ ও দ্বন্দ্ব। এই চাপ ও দ্বন্দ্ব মোকাবেলায় কখনো কখনো দাম্পত্য জীবনেও অশান্তি তৈরী হয়। নতুন শিশু জন্মের মত উৎসবমুখর একটি ঘটনা তখন ম্রিয়মান হয়ে যায়।
![](files/ma_2_937859909.jpg)
আর আত্মিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে হলে বাবাকে নবজাতকের কাছাকাছি থাকা প্রয়োজন। পিতৃত্বকালীন ছুটি-এই কাছাকাছি থাকার প্রক্রিয়াকে নিশ্চিত করতে পারে।
‘সন্তান লালন-পালনের দায়িত্ব একা মায়েরই’ এই সনাতন চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে এসেছে আজকের বাবারা। সন্তান জন্মের সময় স্ত্রীর পাশে না থাকার কথা ভাবতেই পারেন না এ সময়ের একজন দায়িত্ববান স্বামী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শাহ এহসান হাবীব পিতৃত্বকালীন ছুটির বিষয়ে অভিমত ব্যক্ত করেন এভাবে- দেশে নারীদের কর্মক্ষেত্র ও কর্মপরিধি বিস্তৃত হওয়ায় কর্মজীবী মায়েদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা বহুলাংশে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করেছে। ফলে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন ঘটেছে।
পিতৃতান্ত্রিক সামাজিক কাঠামোতে জেন্ডার সমতায়নের প্রয়োজনে অর্থনৈতিক সংস্থানের পাশাপাশি নবজাতকের লালন-পালনের ক্ষেত্রেও বাবার দায়িত্ব পালন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এই প্রেক্ষিতে পিতৃত্বকালীন ছুটির সুযোগ তৈরি হলে সময়োপযোগী parental care দেওয়া সম্ভব হবে। যা পরবর্তীতে শিশুর সামাজিকীকরণ ও ব্যক্তিত্ব গঠনে সহায়ক হবে।
নবজাতকের যত্নে বাবার অংশীদারিত্বমূলক ভূমিকা নিশ্চিত করতে, কর্মজগৎকে আরো কর্মীবান্ধব করতে এবং নবজাতক শিশুকে অধিকতর নিরাপদ রাখতে- মায়ের প্রসবকালীন ও তৎপরবর্তী জটিল সময়টুকুর জন্য পিতৃত্বকালীন ছুটির বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করাটা সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
* হোসাইন মোহাম্মদ জাকি, গবেষক, সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদ। ই-মেইল: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৪