ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

সহিংস আন্দোলন উচ্চশিক্ষার শত্রু

প্রফেসর আনোয়ারুল আজিম আরিফ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৫
সহিংস আন্দোলন উচ্চশিক্ষার শত্রু প্রফেসর আনোয়ারুল আজিম আরিফ

বর্তমানে বাংলাদেশে একটি জনবিচ্ছিন্ন মহল কর্তৃক তথাকথিত আন্দোলন ও অবরোধের নামে যে সহিংসতা ছড়ানো হচ্ছে, তাকে সমগ্র দেশবাসী এবং বিশ্ব বিবেক তীব্র ধিক্কার জানিয়েছে। কারণ জনবিচ্ছিন্ন, অমানবিক ও রক্তলোলুপ পথে জনকল্যাণকর কিছু অর্জন করার নজির ইতিহাসে নেই।

জনগণও এমন মানবতাবিরোধী অপকর্মে কখনোই শরিক হয় না। বাংলাদেশেও হচ্ছে না।

ক্রমেই সন্ত্রাসী আন্দোলন নিন্দিত ও জনবিচ্ছিন্ন হচ্ছে। সমাজের সর্বস্তরে উচ্চারিত হচ্ছে ঘৃণাযুক্ত প্রতিবাদ। জনগণ রুখে দাঁড়াচ্ছে দেশব্যাপী। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট সরকার পাড়ায়-মহল্লায় প্রতিরোধ কমিটি গঠন করে জনগণের ঐক্য মজবুত করেছে। প্রশাসনও সার্বিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সচেষ্ট হয়েছে।

এদিকে তথাকথিত অবরোধের বিরুদ্ধে শিক্ষার গতিশীলতা ও মর্যাদা সমুন্নত রাখার শপথ নিয়েছেন বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ। বিশেষত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রম পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছে। ক্লাস, পরীক্ষাসহ সার্বিক কার্যক্রমে তথাকথিত অবরোধের বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়তে দেন নি শিক্ষক সমাজ ও ছাত্র সমাজ। বিভিন্ন বিভাগ ও অফিসে উপস্থিতি ও তৎপরতা অত্যন্ত স্বাভাবিক। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাও বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে।

সামান্য কিছু বিচ্ছিন্ন ব্যতিক্রম ছাড়া বাংলাদেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একই উদ্দীপনা ও গতিশীলতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হয় যে, দেশের জনগণের মতো শিক্ষিত সমাজও ক্ষতিকর-হিংসাত্মক তথাকথিত আন্দোলনকে মেনে নিচ্ছেন না। এমতাবস্থায় আন্দোলনকারীদের মধ্যে বিবেক ও সদবুদ্ধি জাগ্রত হবে বলেই সকলে আশা করছেন।

তথাকথিত আন্দোলনকারীরাও নিজেদের ব্যর্থ-আন্দোলনের ভবিষ্যত-সাফল্য, জনসম্পৃক্ততা ও গণমুখিনতার বিষয়ে সচেতন হবেন বলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস অবশ্যই গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাস। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান তার দীর্ঘ জীবনে গণতান্ত্রিক ও জনমুখী আন্দোলনের উজ্জ্বল উদাহরণ। গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার রক্ষায় বঙ্গবন্ধু-কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার জীবনও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে ভরপুর। বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনের ইতিহাসের এমন দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ আর নেই।

এখন আন্দোলনের নামে যে সহিংসতা ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ হচ্ছে, সেগুলো কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক নয়।

জনসম্পৃক্ত তো নয়ই। যে কারণে মানুষ তথাকথিত অবরোধ-হরতাল উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমেছে। সব কিছুই স্বাভাবিক রয়েছে। অফিস-আদালত-স্কুল-কলেজ-পরীক্ষা সবই চলছে। মানুষ তথাকথিত আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কাজে সামান্যতমও সমর্থন বা সহানুভূতি জানাচ্ছে না। বরং চারিদিকে এই অরাজকতার বিরুদ্ধে বইছে তীব্র নিন্দার ঝড়।

বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষাঙ্গন এদেশের সমৃদ্ধি আর উন্নয়নের ভ্যানগার্ড। যে কোনো মূল্যে এখানে শিক্ষার গতিশীলতা বজায় রাখা নীতিবান, আদর্শবাদী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতান্ত্রিক মতাদর্শপন্থিদের মহান দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনে বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজ ঐক্যবদ্ধ। ইতিমধ্যেই তারা স্ব স্ব ক্ষেত্রে নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের মাধ্যমে এটাই জানিয়ে দিয়েছেন যে, সন্ত্রাসী অপশক্তির হাতে উচ্চশিক্ষাকে জিম্মি হতে দেবো না। কারণ সহিংস আন্দোলন উচ্চশিক্ষার শত্রু। এই শত্রুকে সম্মিলিতভাবে পরাজিত করতেই হবে।

মহাজোট সরকার জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের সর্বস্তরে যে কল্যাণ, উন্নয়ন ও গতিশীলতার জোয়ার এনেছে, তাকে সর্বশক্তি দিয়ে রক্ষার করতে ও এগিয়ে নিতে হবে। স্ব স্ব ক্ষেত্রে দেশপ্রেমিক, গণতান্ত্রিক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালনকারী ও মানবতাবাদীদের ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। কোনোভাবেই তথাকথিত আন্দোলন আর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিকাশ হতে দেওয়া যাবে না। এদের সমূলে উৎপাটিত ও নির্মূল করতে হবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা দীর্ঘদিনের লড়াই-সংগ্রামের পর আঁধার বিনাশী আলোর বিজয় ছিনিয়ে এনেছি।

স্বাধীনতা বিরোধী, প্রতিক্রিয়াশীল-অপশক্তি আর প্রতিবিপ্লবীদের পরাজিত করে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের শক্তির বিজয় সমুন্নত রাখাও আমাদের মহান দায়িত্ব। জননেত্রী শেখ হাসিনার গণতান্ত্রিক ও দেশপ্রেমিক সুশাসনের পক্ষে স্ব স্ব ক্ষেত্র থেকে শক্তি ও সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে জনবিরোধী, সহিংস ও অমানবিক তৎপরতা ও তথাকথিত আন্দোলনের অবসান ঘটাতে হবে।

মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত দেশমাতৃকাকে অপশক্তির চারণ ক্ষেত্রে পরিণত হতে দেওয়া যায় না। শান্তিপ্রিয় মানুষের সামনে থেকে রক্তপাত ও হিংসার দুঃস্বপ্ন মুছে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাকে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সফল ও সার্থক  করার চলমান লড়াইয়ে শামিল হওয়াই বিদ্যমান বাস্তবতার অপরিহার্য দাবি।
 
প্রফেসর আনোয়ারুল আজিম আরিফ: মুক্তিযোদ্ধা ও ভাইস চ্যান্সেলর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।