ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

ভারতীয় ‘ক্রিকেট কূটনীতি’ আমাদের বেকায়দায় ফেলতে পারে?

রফিকুল বাহার, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০১৫
ভারতীয় ‘ক্রিকেট কূটনীতি’ আমাদের বেকায়দায় ফেলতে পারে? ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

আইসিসির (ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল) প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন বাংলাদেশের পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল, যিনি লোটাস কামাল হিসেবেই বেশি পরিচিত। মেয়াদ শেষের ৩ মাস আগে তিনি কেন এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিলেন কিংবা তার এ সিদ্ধান্তে কতটা উপকৃত হবে বাংলাদেশ-তা এখনও আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়।



ভারতের সঙ্গে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই তিনি সরাসরি অবস্থান নিয়ে কথা বলেন। একজন আইসিসি প্রেসিডেন্ট প্রকাশ্যে এ ধরনের কথা বলাটা রীতিবিরুদ্ধ।

আবার আইসিসির ঘোষণা অনুযায়ী কোনো সভায় সভাপতিত্ব করা ও আইসিসির অধীনে অনুষ্ঠিত ক্রিকেট টুর্নামেন্টে ট্রফি বিতরণ করার কথা প্রেসিডেন্টের।

সেই হিসেবে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের চ্যাম্পিয়নদের হাতে ট্রফি তুলে দিতে পারেননি বাংলাদেশের লোটাস কামাল। এ ট্রফি তুলে দিয়েছেন আইসিসির চেয়ারম্যান ভারতের সাবেক বোর্ড প্রধান শ্রীনিবাসন, যিনি ভারতের উচ্চ আদালতের নির্দেশে বোর্ড থেকে অপসারিত হয়েছিলেন। আইসিসির সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েই শ্রীনিবাসন বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ট্রফি তুলে দেওয়ার কাজটি করেছেন সুচারুভাবে ও কৌশলে।

গত বিশ্বকাপ ক্রিকেটের হিসাব থেকে জানা যায়, আয়ের ৮৫ শতাংশ অর্থ ও স্পন্সরের যোগানদাতা হলো ভারত।

বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বে ভারতের একাধিপত্য কেবল অর্থ আর স্পন্সরের কারণেই নয়। আরও কারণ রয়েছে: স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া যখন সিডনিতে সেমিফাইনাল খেলছে ভারতের বিরুদ্ধে তখনও গ্যালারিতে উপসি’ত দর্শকদের অধিকাংশই ভারতীয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো শ্রীনিবাসন যখন আইসিসির চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন তখন বিশ্ব ক্রিকেটের ক্ষমতাবান এ কাউন্সিলের কার্যনির্বাহী সকল ক্ষমতাই চলে যায় চেয়ারম্যানের কাছে। প্রেসিডেন্ট সেখানে হয়ে যান আলংকারিক বা সিরিমনিয়াল।

বিশ্বকাপ ক্রিকেটে আম্পায়ারিং নিয়ে আইসিসির প্রেসিডেন্ট লোটাস কামালের প্রকাশ্য প্রতিক্রিয়া ও মেয়াদ শেষের আগে পদত্যাগের ইস্যু বাংলাদেশ ক্রিকেটকে কোথায় নিয়ে যায় সেটিও একটি ভাবনার বিষয়। এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স নিঃসন্দেহে ঈর্ষণীয় এবং উজ্জ্বীবিত করার মতোই। সেই ক্রিকেটারদের এখন এগিয়ে নেয়ার যে বিশাল চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সামনে তা কীভাবে বাস্তবায়ন করবে বিসিবি।

আইসিসির ১০টি পূর্ণ সদস্য দেশের একটি হলো বাংলাদেশ। আর আইসিসিতে চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য জায়গা কেবল ৩টি দেশের জন্য নির্ধারিত। একটি হলো ইংল্যান্ড যারা এ খেলাটি শুরু করেছিল। ক্রিকেটের আরেক পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়া। শেষেরটি হলো ভারত।

একসময় ইংরেজদের খেলা ক্রিকেটের সব সিদ্ধান্ত আসতো অস্ট্রেলিয়া থেকে কিংবা বলা যায় অস্ট্রেলিয়ার মতো করেই। এ দুই পরাশক্তিকে যুক্তি আর বাস্তবতা দেখিয়ে ভারত বললো, তোমাদের কথায় সব হবে কেন? বিশাল অর্থ আর বিপুল সমর্থনের অথবা ক্রিকেট বাণিজ্যের ‘মার্কেট লিডার’ হিসেবে আমাদের পিছনে রাখবে কেন? ‘কেন’ শেষ পর্যন্ত প্রশ্নের আকারে থাকেনি। সে নিজেই ৩ শক্তির একটি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলো। আইসিসিতে ভারতীয় ক্রিকেটকর্তাদের প্রভাব বলয় এতোটাই শক্তিশালী আর প্রতিষ্ঠিত যে অনেক বছরের রীতিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে শ্রীনিবাসন হয়ে যান ক্রিকেট ফাইনালের প্রধান অতিথি।

লোটাস কামাল এ সরকারের একজন মন্ত্রী। আন্তর্জাতিক একটি সংস্থার বড় পদ থেকে পদত্যাগের আগে নিশ্চয়ই তিনি সরকারের নীতিনির্ধারকদের সাথে আলাপ-আলোচনা করেছেন। সেই আলোচনার সারমর্ম কী সেটি আমরা জানি না। হতে পারে মেয়াদের ৩ মাস আগে পদত্যাগ করে ১৬ কোটি বাংলাদেশির আবেগের জায়গায় নিজেকে তুলে ধরেছেন। আবার এমনও হতে পারে ভারতীয় ক্রিকেটে শ্রীনিবাসনের বিরোধীপক্ষও রয়েছে, সেই পক্ষ কোনো না কোনোভাবে লোটাস কামালের পদত্যাগের ইস্যুকে শ্রীনিবাসনের বিরুদ্ধেও কাজে লাগাতে পারে!

কোন অনুমানটি সত্য সেটি এতো সহজে বুঝা যাবে না। আস্তে আস্তে যখন বুঝতে পারবো তখন আমাদের ক্রিকেটের অনেক ক্ষতি হয়ে যায় কি না? আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ‘ভারতীয় কূটনীতি’ সফল ও নানা কৌশলে সমৃদ্ধ। সেই তুলনায় আমরা অনেক পিছিয়ে। লোটাস কামালের এ পদত্যাগ যদি প্রতিবেশী ভারত সিরিয়াসলি নিয়ে থাকে তাহলে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভোগান্তি শুরু হবে এখন অন্য মাত্রায়। সেটি কেমন এমন প্রশ্ন জাগতে পারে অনেকের মনে। ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে টেস্ট, ওয়ানডে কোনো ক্রিকেটই খেলতে চাইলো না। নিজেরা তো চাইলো না অন্যদেরও প্রভাবিত করলো না খেলার জন্য। সেই জায়গায় বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্মাদনা ও ক্রিকেটারদের মেধা ও কৌশলের বিচ্ছুরণ কি থেমে যাবে না?

১২৫ কোটি মানুষের দেশ ভারত। আমরা হলাম ১৬ কোটির বাংলাদেশ। ক্রিকেট নিয়ে দুই দেশেরই আবেগ, উত্তেজনা, সংস্কৃতি প্রায় এক। এই যে অস্ট্রেলিয়া ৫ বার চ্যাম্পিয়ন হলো সেই দেশের লোকসংখ্যা হলো ২ কোটি ৩৭ লাখ ৭৫ হাজার। তারা কিন’ অস্ট্রেলিয়ান রুলস ফুটবল এবং রাগবি নিয়েই বেশি মাতামাতি করে। ইংলিশরা তো ফুটবলেরই পাগল, লোকসংখ্যা ৫ কোটি ৭৫ লাখ। বাজার অর্থনীতিতে প্রায় একাই ক্রিকেট বাজারকে শাসন করে ভারত। আমাদের আশংকা সেখানেই।

লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, সুপ্রভাত বাংলাদেশ, চট্টগ্রাম।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৮ঘণ্টা, এপ্রিল ০২,২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।