পবিত্র কুরআনের সুরা বনি ইসরাইলে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘পৃথিবীতে দম্ভভরে পদচারণা করো না। নিশ্চয় তুমি তো ভূপৃষ্ঠকে কখনোই বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনোই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না’।
অন্য সকল ধর্মগ্রন্থেও অহঙ্কারকে মানবচরিত্রের একটি নিকৃষ্টতম দিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কথায় বলে, অহঙ্কার পতনের মূল। কিন্তু তারপরও অর্থ-সম্পদ, প্রভাব প্রতিপত্তি আর ক্ষমতা মানুষরুপী কিছু হায়েনাকে প্রায়শই অহঙ্কারী করে তোলে। যেমনটি করেছে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে।
![Saka_01 Saka_01](files/July2015/July27/Saka_01_704008686.jpg)
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই ঘৃণ্য মানবতাবিরোধী অপরাধীকে একাত্তরের সেসব যুদ্ধাপরাধের দায়ে সর্বোচ্চ সাজার রায় দিয়েছেন। আগামী বুধবার (২৯ জুলাই) তার আপিল মামলার চূড়ান্ত রায় দেবেন আপিল বিভাগ।
চূড়ান্ত রায়েও মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকবে- এ আশাবাদ নিয়ে এখন দেশের সর্বোচ্চ আদালতের দিকে তাকিয়ে আছেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দেশবাসী। সেটি হলে শুধু একজন জঘন্য অপরাধীই সাজা পাবেন না, একজন দাম্ভিক-অহঙ্কারীরও পতন হবে।
সালাউদ্দিন কাদের চোধুরীই সম্ভবত বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে অহঙ্কারী ব্যক্তি। অপরকে হেয় প্রতিপন্ন করে কথা বলতে তার জুড়ি নেই। তার বাক্যবাণ থেকে রক্ষা পাননি নিজদল বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতা থেকে শুরু করে আদালতের বিচারক পর্যন্ত। সকল নিয়ম-নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জীবনভর স্বেচ্ছাচারী ব্যবহার করে গেছেন তিনি। কিন্তু এর জন্য কখনো তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়নি। আর এ কারণেই বারবার দাম্ভিকতার চূড়ান্ত প্রদর্শনী দেখাতে পেরেছেন তিনি।
ফাঁসির চূড়ান্ত রায় ও তা কার্যকরের মাধ্যমে চূর্ণ হবে তার সব দম্ভ, সব অহঙ্কার। বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতায় সাকা চৌধুরী একজন ঘৃণ্য যুদ্ধাপরাধী হিসেবে লিপিবদ্ধ থাকবেন, এর বেশি কিছু না।
![Saka_03 Saka_03](files/July2015/July27/Saka_03_543304563.jpg)
কিন্তু সাকা চৌধুরীর একগুঁয়েমি আচরণের কারণে অন্য কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। সাকা চৌধুরীকে নির্বাচিত করতে প্রায় ২০০ কোটি খরচ করে লবিং করা হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। উপরন্তু এ ঘটনার জের ধরে মালয়েশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে ফাটল ধরে। কারণ মহাসচিব পদে মালয়েশিয়ারও প্রার্থী ছিল। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যায় বাংলাদেশিদের জন্য। সাকা চৌধুরীর অহঙ্কারের মূল্য চুকাতে হয় রাষ্ট্রের ক্ষতিসাধন করে।
পবিত্র সংসদে দাঁড়িয়ে একের পর এক অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন সাকা চৌধুরী। সংসদে দাঁড়িয়ে সাকা চৌধুরী একবার বলেছিলেন, ‘মাননীয় স্পিকার, আমি তো *দনা হয়ে গেলাম’। তার স্পিকার এ বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার কথা বললে সাকা চৌধুরী বলে ওঠেন, ‘মাননীয় স্পিকার, আমি আবারও *দনা হয়ে গেলাম’।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ২০০১ সালে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বিএনপি। এর জবাবে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘এতোদিন জানতাম, কুকুর লেজ নাড়ায়। এখন তো দেখছি, লেজ কুকুরকে নাড়াচ্ছে’।
বিগত জোট সরকারের আমলে তৎকালীন নির্বাচন কমিশন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর কাছে সম্পদের হিসাব চাইলে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘ওদের কাছে কি জবাবদিহি করবো? ওদেরকে তো চাকরি দিয়েছি আমরা। ওরা আমাদেরকে জ্বি স্যার, জ্বি স্যার করতো। এদের কথার আবার কিসের জবাব?’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার জন্য সংসদে আইন পাস করা হলে সাকা চৌধুরী বলেছিলেন, ‘এ আইনের নাম হওয়া উচিত ছিলো মালেকুল মউত আইন’।
![Saka_02 Saka_02](files/July2015/July27/Saka_02_859878627.jpg)
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালে তার মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকাজ শুরু হওয়ার পর আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী একের পর এক কটূক্তি করে গিয়েছেন প্রসিকিউটর ও বিচারকদের প্রতি। এমনকি জেলখানায় থাকার সময় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে সমকামিতার অভিযোগ পর্যন্ত দায়ের করা হয়। বিচারকাজের একদম শুরুর দিকেই সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেছিলেন, ‘আমি রাজাকার। আমার বাপ রাজাকার। এখন কে কি করতে পারেন করেন’।
ট্রাইবুন্যালে বিচারের রায় পড়ার সময় পুরোটা সময় সাকা চৌধুরী হাসছিলেন এবং বিভিন্ন কটূক্তি করেছিলেন। ৩ নম্বর অভিযোগ পড়ার সময় তিনি বলেন, ‘৩০ লাখ তো মারা গেছে। বলে দিলেই হয়, আমি ২০ লাখ মেরেছি’। আরেক বার তিনি বলেন, ‘তোমার বোনকে বিয়ে করার কথা ছিলো, সেটা বল না? হু ধানের কল চুরি করছি, ঘরে ঢুকছি, তারপর কি করছি বল। লাল মিয়া, সোনা মিয়া বল, পাঁচ কেটে ছয় করার দরকার? মিয়া তো ঠিকই আছে’।
এসব মন্তব্য থেকে প্রমাণিত হয়, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী তার কৃতকর্মের জন্য বিন্দুমাত্রও অনুতপ্ত নন। আরও প্রমাণিত হয়, তিনি আসলে মানুষ নন, মানুষরুপী হিংস্র নরপিশাচ।
চূড়ান্ত রায়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির আদেশ হলে তার মাধ্যমে জাতি যেমন দায়মুক্ত হবে, তেমনি এ রায় হয়ে থাকবে সকল অহঙ্কারীর প্রতি এক বাস্তব শিক্ষা। পাপ কখনো বাপকেও ছাড়ে না। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিণতি দেখে সকলের শিক্ষা নেওয়াও সম্ভব হবে। অহঙ্কার এবং দাম্ভিকতা পরিহার করা উচিৎ। কেননা অহঙ্কার আসলেই পতনের মূল। আর এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী।
সাবেক ছাত্রনেতা
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১৫
ইএস/এএসআর