ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

মুক্তমত

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও যুক্ত হোক মেট্রোরেল

মো. মিঠুন মিয়া | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৬
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও যুক্ত হোক মেট্রোরেল

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ধারাবাহিকতায় উন্নয়নের মহাসড়কে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। কার্যকর নেতৃত্ব ও সমন্বিত উদ্যোগের কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও বাংলাদেশ মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলস (এমডিজি) অর্জনে অনন্য সাফল্য দেখিয়েছে।



জাতিসংঘ প্রণীত সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস (এসডিজি) বাস্তবায়নে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে নেতৃত্বের আসনে এখন বাংলাদেশ।

ঢাকা শহরকে রূপকল্প-২০২১ অনুযায়ী যানজট নিরসন করে একটি পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়তে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজধানীর সৌন্দর্য বর্ধন ও যানজট নিরসনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সাহসী ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে রাজধানীতে যানজট নিরসনে এবং জনসাধারণকে দ্রুত ও উন্নত গণপরিবহন সেবা দিতে বহুল প্রত্যাশিত মেট্রোরেলের কাজ শুরু হয়েছে। এতে ঢাকাবাসী দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণের ক্ষেত্রে আরও একধাপ এগিয়ে গেলো।

এতো দিন আমরা বইপত্রে মেট্রোরেলের বিষয়ে পড়ে এসেছি, কিন্তু আজ চোখে দেখছি মেট্রোরেলের কাজ চলছে। নতুন প্রজন্মের স্বপ্নের এবং বর্তমান সরকারের মেগা প্রকল্প এটি। যা দেশের ইতিহাসে প্রথম। ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত ২০ কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ নির্মিতব্য এই মেট্রোরেলের স্টেশন হবে ১৬টি।

মেট্রোরেল উত্তরা থেকে পল্লবী, খামারবাড়ী, ফার্মগেট, শাহবাগ, টিএসসি, দোয়েল চত্বর, প্রেসক্লাব ও মতিঝিল পর্যন্ত যাবে। ভ্রমণে সময় লাগবে মাত্র ২৮ মিনিট। ঘণ্টায় এই মেট্রোরেল প্রায় ৬০ হাজার যাত্রী বহন করতে পারবে। আর এই মেট্রোরেল হচ্ছে জাইকার সহযোগিতায়। ২০১৯ সালের মধ্যেই এর নির্মাণ কাজ শেষ হবে। ঢাকার মতো বড় শহরে মেট্রোরেলের খুব প্রয়োজন ছিল।

রাজধানীর গণপরিবহন ব্যবস্থা অপ্রতুল। ক্রমবর্ধমান চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিশ্বমানে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে মেট্রোরেল চালু হলে যানজট কমে যাবে। একই সঙ্গে নিরাপদ, দ্রুত, ব্যয় সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব ও আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি সমৃদ্ধ গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং উচ্চ শিক্ষার অবাধ সম্ভাবনার দ্বার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। পুরান ঢাকার যানজট ও শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার কল্যাণ চিন্তা করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীদেরও মেট্রোরেলের সুবিধার মধ্যে আনা জরুরি। আর এজন্য প্রেসক্লাব থেকে মেট্রোরেলের একটি স্টেশন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত করা কোনো কঠিন বিষয় নয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মতিঝিল পর্যন্ত হোক মেট্রোরেল স্টেশন।

অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বেশি টাকা খরচ করে ভর্তি হলেও নানা সমস্যা আর সংকটের মধ্য দিয়ে শিক্ষাজীবন পার করছেন সংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় বৃহত্তর প্রতিষ্ঠান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এখানে নেই আবাসন সুবিধা। রয়েছে পরিবহন সংকট, সমৃদ্ধ নয় গ্রন্থাগার ও সেমিনার কক্ষ, স্বল্প শ্রেণিকক্ষে চলে পাঠদান। দীর্ঘ প্রায় সাড়ে তিন বছর চেষ্টা করেও কয়েকশ’ কোটি টাকার সম্পত্তি এবং আবাসিক হলগুলোর দখলমুক্ত করতে পারেনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ফলে আবাসন-সুবিধাবঞ্চিত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য দ্রুতই হলের ব্যবস্থা করা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আবাসন-সুবিধা না থাকায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীকেই ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় মেস বা বাসা ভাড়া করে থাকতে হচ্ছে। অনেকে আবার ক্যাম্পাসের আশপাশে থাকার জায়গা না পেয়ে চলে যাচ্ছেন ঢাকার বাইরে। এক্ষেত্রে মেট্রোরেলের সুবিধা তাদের শিক্ষাজীবনে নতুন মাত্রা যোগ করবে।

পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার থেকে নয়াবাজার মোড়ে হেঁটে যেতে সময় লাগে মাত্র তিন মিনিট। কিন্তু গাড়িতে যেতে সময় লাগে কমপক্ষে ৩০ মিনিট। একই রকম সময় অপচয় হয় নারিন্দা থেকে রায়সাহেব বাজার মোড়ে যেতে। ওই দুই সড়কের মতো পুরান ঢাকার আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের একই অবস্থা। বিশেষ করে সদরঘাটের ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকা থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ অবস্থা। পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকা থেকে এক ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে গুলিস্তান যেতে। সব সড়কেই চলছে রিকশা। এ ছাড়া অনেক সড়কের দুই পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। সড়কের দুই পাশে ফুটপাত ও গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে প্রতিদিনই ওই এলাকায় যানজট লেগে থাকে। যানজট নিরসন ও নাগরিক জীবন নিশ্চিত করাই যদি মেট্রোরেলের মুখ্য উদ্দেশ্য হয়, তাহলে সবার আগে বিবেচনায় আনতে হবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ পুরান ঢাকাবাসীকে। পুরান ঢাকার ভয়াবহ এই যানজট পেরিয়ে শিক্ষাজীবন পার করতে হচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। এতে কেবল শিক্ষার্থীরা নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিক্ষকরাও।

এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ হাজার শিক্ষার্থীকে এই মেট্রোরেলের সুবিধার মধ্যে আনতেই হবে। এতে শিক্ষার্থীরা যেমন উপকৃত হবেন, তেমনি সুফল পাবেন পুরান ঢাকাবাসী। এছাড়া পুরান ঢাকায় রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠানসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের প্রবেশদ্বার সদরঘাট। রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। পুরান ঢাকা পর্যন্ত মেট্রোরেল করা হলে জেলা দায়রা জজ আদালত, ঢাকা জেলা পরিষদ, বাংলাদেশ ব্যাংক (সদরঘাট শাখা), ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, মিটফোর্ড হাসপাতাল, সদরঘাট টার্মিনাল, কবি নজরুল, সোহরাওয়ার্দী কলেজসহ অনেক শিক্ষা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সুবিধা পাবে। যানজটে বসে আর লঞ্চ ধরার তাড়া করতে হবে না ঘরমুখী মানুষকে। কমে যাবে ওই এলাকার যানজট। সুফল মিলবে নাগরিক জীবনের।

অনাবাসিক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অন্তত যাতায়াতের সুবিধার বিষয় নজরে এনে মেট্রোরেলের ১৬টি স্টেশন থেকে একটি স্টেশন বেশি করা খুব একটা কষ্টসাধ্য বিষয় নয়। এর জন্য যে ব্যয় হবে তার চেয়ে সুফলই বেশিই হবে। স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে জগন্নাথ বিশ্বেবিদ্যালয়ের ২০ হাজার শিক্ষার্থী। শাহবাগ থেকে মেট্রোরেলের একটি স্টেশন হবে জাতীয় প্রেসক্লাবে। এই প্রেসক্লাব থেকে একটি স্টেশন করতে হবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। যেহেতু ভিক্টোরিয়া পার্ক পুরান ঢাকার প্রাণকেন্দ্র, তাই ওই এলাকার সঙ্গে মেট্রোরেল যুক্ত হলে আরও ভালো হয়।

বর্তমান সরকার জনকল্যাণে নিয়োজিত সরকার। উন্নয়নের সেবা সবার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে দৃঢ় পরিকর রাজনৈতিক প্রজ্ঞাসম্পন্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিক্ষাখাতে এই সরকারের অবদান আকাশচুম্বী। যথাযথ শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে এই সরকার দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সমাধান করছে শিক্ষকদের সমস্যাসহ নানা সংকট। কাজেই বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ সর্বাগ্রে বিবেচনা করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালকে মেট্রোরেলের সুবিধার মধ্যে আনতে সরকার সব করণীয় ঠিক করবে। এজন্য সব বাধা অন্তরায় পেরিয়ে সর্বোচ্চ উদার মনমানসিকতার পরিচয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ হাজার শিক্ষার্থীকে মেট্রোরেলের সুবিধার সঙ্গে যুক্ত করবেন - এমনটি প্রত্যাশা।

লেখক
মো. মিঠুন মিয়া
সাংবাদিক ও সাবেক শিক্ষার্থী
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৬
আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।