ঢাকা: সোহাগী জাহান তনু একটি প্রতীক। ভালোবাসার মূর্ত প্রতীক।
আমরা, অভাগা এই জাতি সোহাগী তনু কে মূর্তিয়মান হতে দেইনি। দেইনি তার আশা পূরণ হতে। দুঃখিত সোহাগী! পারলে এ অভাগা জাতিকে ক্ষমা করো।
সোহাগী জাহান তনু একটি ছিড়ে ফেলা অপ্রস্ফুটিত ফুল। তনু আমার বোন, আপনার মেয়ে, কারো বা ভাগনি, ভাতিজী, অথবা কারো বান্ধবী। আর কতো ফুলকে প্রস্ফুটিত হওয়ার আগে এভাবে ছিড়ে ফেলা হবে? আর কতো? আমাদের মানবতা কি জাগ্রত হবে না? বাঙ্গালি কি প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে? যে দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হতে শুরু করে বিরোধীদলীয় নেত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, ক্ষমতাশালী অনেক মন্ত্রী, সাংসদ ও দলীয় নেত্রী মেয়ে, সে দেশে তনুর মতো নিরপরাধ মেয়েদের ধর্ষিত হয়ে খুন হতে হয়। খুনি, ধর্ষক থাকে ধরা ছোয়াঁর বাহিরে, অথবা বের হয়ে যায় আইনের ফাঁক গলে। বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। বড়ই আফসোস!
ধরে নিলাম তনু বা তার মতো যারা প্রাণ দিয়েছে তারা আমার বা আমাদের কেউ না। একবার ভাবুনতো, আমার, আপনার ঘরেও মেয়ে আছে। আমার মনে হয় বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে ঘরে মেয়ে নাই একথাটা কেউ বলতে পারবে না, যেহেতু মেয়ে জন্মের হার বেশি। আমাদের পরিবারে তিন ভাই ছিলাম, কোন বোন ছিলো না। আজ আমার দুই ভাইয়ের ঘরে পাঁচ মেয়ে, কোন ছেলে নেই। আমিও চাই আমার প্রথম সন্তান মেয়ে হউক। আপনাদের ঘরেও নিশ্চয় তাই। তাহলে কেনো আমরা সচেতন হচ্ছি না, কেনো বিচার চাচ্ছি না অথবা প্রতিবাদ করছিনা এসব নির্মম হত্যার? আজ তনু ও অন্য আরো যারা এসব নিষ্ঠুরতার শিকার, তারাতো আপনার, আমার কেউ হতে পারতো ? অথবা ভবিষ্যতে যে হতে পারেনা তা কে বলবে ? আপনি কি আপনার ছোট্ট বোন বা মেয়েটির জন্য চিন্তিত নন? তাদের জীবন নিষ্কন্টক হউক তা কি চান না? যদি চান, তো আসুন সবাই মিলে বিচার চাই, প্রতিবাদ করি এইসব নিষ্ঠুরতার।
ঘরের ছোট্ট ছেলে সন্তানটিকে নৈতিকতা শিক্ষা দেই, যেন নারীকে সম্মান করতে শিখে। নারীকে ভোগের পণ্য না ভাবে। তনু নামটি হতে পারে একটি খরস্রোতা নদী, যা ধুয়েঁ মুছে পরিষ্কার করে দিতে পারে সহস্র বছরের পচাঁ দুর্ঘন্ধময় আবর্জনা। শুধু বিন্দু বিন্দু জলকণা এক হয়ে যেমন নদীটিকে খরস্রোতা করে ঠিক তেমনি আমি, আপনি ও আমাদের সবাইকে প্রতিবাদী হয়ে একত্রিত হতে হবে, সমাজের সকল অন্যায় অবিচার ও নিষ্ঠুরতাকে ভাসিয়ে দেওয়ার জন্য। একত্রিত হতে হবে সকল পাপ কালিমা ও মনের সংকীর্ণতাকে ধুয়েঁ মুছে পরিষ্কার করার জন্য। তনু নামটি হতে পারে একটি দিয়াশলাইয়ের কাঠি যা একটি ঘষায় পুড়িয়ে দিতে পারে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে স্তুপ হওয়া সকল ঝন্জাল। শুধু একটু হাতের স্পর্শ প্রয়োজন। হাতে হাত রাখুন, দলমত নির্বিশেষে গর্জে উঠুন, দেখবেন সমাজের সকল পাষণ্ডরা পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। কোন নতুন পিশাচ আর আমার সোনার দেশে জন্ম নিবে না ।
পরিশেষে, আসুন ঘুম থেকে উঠি, নিজে সচেতন হই, অন্যকে সচেতন করি। বিচার দাবি করি এসব নিষ্ঠুর হত্যার। এই সাথে জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করি এসব হত্যা বন্ধ করতে শক্ত আইন ও দ্রুত বিচার বাস্তবায়নের জন্য, যাতে আর কেউ ভুল করেও এসব নিষ্ঠুর জঘন্য অপরাধ করতে ভয় পায়, হৃদয় একবার হলেও কেপেঁ উঠে।
Dr. A K M Mominul Islam (Bulbul)
Associate Professor
Bangladesh Agricultural University, Mymensingh
বাংলাদেশ সময়: ০৫০৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৬
আরআই