ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

মুক্তমত

তাৎক্ষণিকভাবে মনকে ভাল রাখবেন!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০১৬
তাৎক্ষণিকভাবে মনকে ভাল রাখবেন!

ঢাকা: মাঝেমাঝে আমি ২ ধরনের মানুষ নিয়ে খুব বিপদে পড়ি। একদল বলে, ‘কাজ নাই, চাকরি নাই, কাজ খুঁজে পাই না, একটা কাজ দেন।

’ আরেকদল বলে, ‘মন খারাপ, কিচ্ছু ভাল লাগে না, সবকিছু অসহ্য লাগে, বিরক্ত লাগে, তিতা মনে হয়, দুনিয়া অনেক নিষ্ঠুর, খালি পীড়া দেয়। ’ মন ভাল করার টিপস দেন।

কাজ আর মন নিয়েই যেহেতু এই দুই দল লোকের সমস্যা তখন অকুপেশনাল থেরাপির প্রেক্ষাপট থেকে আমি দু’টো পরামর্শ দেই-

১) ছোট হোক কিংবা মাঝারি হোক কিংবা বড় হোক একটা Productive কাজের সাথে যুক্ত হয়ে যান, আপনার মন কিংবা মুড পরিবর্তন হতে বাধ্য। কারণ মানুষ যখন একটা কাজের সাথে যুক্ত হয়ে যায় তখন তার ব্রেইন ফাংশানটা খুব ভালভাবে হয় আর সেই সাথে মন, দেহ সচল হয়ে পড়ে। কাজের সিস্টেম এর সাথে তার সংস্পর্শ চলে আসে। কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট মানুষজনের সাথে যোগাযোগ হয়, অনুপ্রেরণা লাভ করা যায়। পাশাপাশি দিন কিংবা মাস শেষে অর্থ বা টাকা দারুণ একটা উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। আস্তে আস্তে নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বড় এবং সম্মানিত কাজ সে তখন নিজেই খুঁজে নিতে পারে নিজের চিন্তাচেতনা, সিদ্ধান্ত নেবার দক্ষতা, প্রব্লেম সলভিং স্কিল এবং আরও অন্যান্য স্কিল ব্যবহার করে।

উদাহরণ: আমার অনার্স লাইফের একটা পিরিয়ডে খুব খারাপ একটা সময় যাচ্ছিল। পড়াশোনাও ভাল লাগছিল না। নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছিল। এমন অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার জন্য দেখতাম আমার আশেপাশে বন্ধুরা কি করছে, বড় ভাইরা তাদের কাজের পাশাপাশি আর কি করছে। নেটেও নিজে থেকে একটু ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করলাম। ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ শুরু করলাম। প্রথম দিকে কিছু বুঝতাম না, পরিশ্রম করতে হত। সময়ের সাথে সাথে সব বুঝে উঠলাম, কিছু অর্থ আসলো। মন ঠিক হল, আরও পরিশ্রম করার মানসিকতা তৈরি হল। নিজের পড়াশোনার দিকেও ভালভাবে মনোনিবেশ করতে পারলাম। পাশাপাশি কিছু দক্ষতাও অর্জন হলো।

২) মন হচ্ছে আপনার পাখনা, আপনি উড়ে উড়ে মাছির মত খারাপ জায়গায়ও বসতে পারেন আবার মসজিদের মিনারের মত পবিত্র জায়গায়ও বসতে পারেন। পছন্দ আপনার এবং সেই পথে চালনা করার ক্ষমতাও আপনার। আপনার মন যদি ক্ষণিকের জন্যও খারাপ হয়ে যায়, তাহলে তৎক্ষণাৎ কারণগুলো নিয়ে অহেতুক দুশ্চিন্তা করবেন না।

খারাপ হবার বিষয়টা তৎক্ষণাৎ মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন এবং নিজের ভাল লাগে বা পছন্দনীয় কাজে নিজেকে জড়িয়ে ফেলুন। যেমন হতে পারে ঘোরাঘুরি, কেনাকাটা, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়া, শিশুদের সাথে মজা করা বা খেলা করা, স্পেশাল কোন খাওয়া দাওয়া করা, রান্না করা, ফেসবুকিং, ইউটিউবে জনপ্রিয় কোন গান না নাটক দেখা, দাবা/ লুডু/ কেরাম/ দলীয় খেলায় অংশগ্রহণ করা, ছবি তোলা, বিভিন্ন ধরনের বই পড়া, প্রিয়জনের সাথে একটু দেখা করা, দুঃখ শেয়ার করা, ক্রিয়েটিভ কাজের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলা, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অভিনয় করা, বিভিন্ন সেমিনার/ওয়ার্কশপ বা পাবলিক ইভেন্টে অংশ নেয়া এবং নিজেকে মেলে ধরা ইত্যাদি।

উদাহরণ: আমার স্টুডেন্ট লাইফ এ কিংবা এখনো মাঝেমাঝে কিছু ফ্রি সময় আমি পাই, তখন মনে হয় ভাল লাগে না কিছুই। নিজেকেই অলস অলস লাগে। আমি তখন যেটা করি সেটা হচ্ছে লেখালেখি বা নতুন ছন্দের কোন কিছু বের করা। ক্রিয়েটিভ মানুষদের কাজ দেখি, তাদের ইতিহাস পড়ি, গ্রাফিক্স কিংবা ভিডিও কিভাবে বানায় তা শিখি, বিভিন্ন দেশের/ সংস্কৃতি সম্পর্কে গুগলে পড়ি, মাঝে মাঝে ফ্রেন্ডদের সাথে মেসেঞ্জার কিংবা চ্যাটে আলোচনা করি বা পকেটে টাকা থাকলে স্পেশাল কোন খাবার খাই ইত্যাদি ইত্যাদি।

দুনিয়া অনেক বড়, কাজের পরিধিও অনেক বড়। আপনি অলস, আপনি বেকার এটা আপনার জন্য অভিশাপ না, এটা আপনার বিলাস। নিজেকে মেলে ধরুন, কাজ আপনাকে টেনে নিবে।

একটা কাজ বা পেশা তখনই কাজ হবে যখন এটা আপনার সময়কে ভালভাবে ব্যবহার করতে সাহায্য করবে, আপনাকে অর্থবোধক ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে এগিয়ে নেবে এবং শেষে আপনার প্রাপ্তি থাকবে, আত্মতৃপ্তি থাকবে।

লেখক:
শ ম ফারহান বিন হোসেন
ক্লিনিক্যাল অকুপেশনাল থেরাপিস্ট
সিআরপি-মিরপুর।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৬
আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।