সম্প্রতি নির্মিত ‘আয়নাবাজি’ সিনেমাটি নিয়ে দেশ-বিদেশে বাঙালি দর্শকদের মধ্যে বেশ হইচই পড়ে গেছে। গত ৩ ডিসেম্বর সিডনির অবার্নের রিডিং সিনেমা হলে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা’র শো’র আগে দর্শকদের উদ্দেশ্যে সিনেমাটির পরিচালক অমিতাভ রেজা চৌধুরী বলেন, “গত সপ্তাহ পর্যন্ত প্রায় এক কোটি আশি লাখ মানুষ প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে আয়নাবাজি সিনেমাটি দেখেছেন।
সুতরাং এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ছবিটির দর্শকপ্রিয়তা কিংবা বাণিজ্যিক সাফল্য নিকট অতীতে নজিরবিহীন। সাধারণত যে কোনো সিনেমার দর্শকপ্রিয়তা কিংবা বাণিজ্যিক সফলতা নির্মাতাকে সিক্যুয়াল বানাতে উৎসাহিত করে। সিক্যুয়াল সিনেমা বানানোর দৃষ্টান্ত হলিউড-বলিউডে অনেক আছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, অমিতাভ রেজা ‘আয়নাবাজি’র সিক্যুয়াল বানাবেন কি না?
নিশ্চয়ই এটা মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন। এই প্রশ্নের উত্তর নির্মাতার কাছ থেকে জানার আগে আসুন কিছু বিষয় বিশ্লেষণ করা যাক।
ছবিটির শেষ কয়েক মিনিট যদি স্মরণ করেন, তাহলে কি মনে পড়ে? খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে অনেকগুলো ঘটনা ঘটে। রাজনীতিবিদ ক্লাবে বিলিয়ার্ড খেলছেন আর মুঠোফোনে কথা বলছেন। এক পর্যায়ে আয়নার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘...হ্যাং হিম’ (ফাঁসি দিয়ে দাও/ঝুলিয়ে দাও)। আয়নার অনেক কিছুই জানে হলিউড স্টুডিওর গাউসুল এবং সাংবাদিক সাবের। সাংবাদিক সাবের হলিউড স্টুডিওতে গিয়ে দেখেন, গাউসুল এরমধ্যেই খুন হয়ে গেছেন।
হ্যান্ডসাম, চৌকস পুলিশ অফিসার আরিফিন শুভ’র আগমন। পুলিশ অফিসার তেজোদ্দীপ্ত ভঙ্গিতে নিজের ভিজিটিং কার্ড দিয়ে সাংবাদিক সাবেরকে বলেন, “...এসি আকরাম, বিসিএস সেকেন্ড। সব অপরাধীর শিকড় উপড়ে ফেলবো। ”
অন্যদিকে আয়না বৃদ্ধ জেল-পুলিশকে হিপ্নোটাইজড করে কিংবা অভিনয়ের ভেল্কি দেখিয়ে পালিয়ে যান। অভিনয়ের জোরে ফাঁসির দণ্ড থেকে বেঁচে যাবার আনন্দে বিজয়ীর ভঙ্গিতে মাথা থেকে টুপিটি আকাশের দিকে ছুঁড়ে দেন।
এসব কিসের ইঙ্গিত? ছবিটির যদি সিক্যুয়াল বানানোর কোনো পরিকল্পনা না-ই থাকবে, তাহলে পুরো ছবিতে যেখানে উকিল, পুলিশ এবং জেলখানার ওপেন-সিক্রেট দুর্নীতি, দুর্বলতা দেখানো হলো, সেখানে হঠাৎ করে এই চৌকস পুলিশ অফিসারের আগমন হলো কেন?
তার মানে কি এমন নয় যে, আয়নাবাজি-২ এর গল্পটি শুরু হবে, সংবাদমাধ্যমের হেডলাইন-ব্রেকিং নিউজ দিয়ে? সংবাদ শিরোনাম হবে অনেকটা এরকম- ‘ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রাজনীতিবিদের জেল থেকে পলায়ন’।
চৌকস পুলিশ অফিসার এসি আকরামকে এই চাঞ্চল্যকর ঘটনার দায়িত্ব দেওয়া হবে। পুলিশ খুঁজতে থাকবে রাজনীতিবিদকে আর সাংবাদিক খুঁজবে আয়নাকে। গাউসুলের পরই অপরাধীদের কাছে যৌক্তিকভাবে টার্গেট হওয়ার কথা সাংবাদিক সাবেরের। সাবের চাকরি হারাতে পারেন, সড়ক দুর্ঘটনার নাটকে তাকে হত্যা করার চেষ্টা হতে পারে। কিন্তু সাংবাদিক সাবের কোনো না কোনোভাবে বেঁচে যাবেন। পুলিশ অফিসার সাংবাদিককে দেখতে যাবেন। পুলিশকে বিভিন্ন ঘটনার ক্লু দেবেন সাবের, কিন্তু সব তথ্য দেবেন না। প্রকৃত ধর্ষক এবং খুনির ক্লু পেয়ে পুলিশ আরও তৎপর হবে। পুলিশ একে একে ধর্ষিতা মেয়েটির ঘটনা থেকে শুরু করে গাউসুলের খুনের ঘটনার রহস্য পর্যন্ত জানবে, রাজনীতিবিদকে খুঁজে বের করতে চাইবে।
এক পর্যায়ে পুলিশ এবং সাংবাদিক দু’জনেই আয়নাকে খুঁজবেন। কিন্তু প্রথমে আয়নার দেখা পাবেন সাংবাদিক। কারণ পুলিশ আয়নাকে চেনেন না কিন্তু সাংবাদিক চেনেন। তাছাড়া সাংবাদিক আয়নার প্রেমিকাসহ আরও অনেক কিছুই জানেন। অন্যদিকে পুলিশ অফিসারকে রাজনীতিবিদের লোকেরা মোটা অংকের ঘুষ দিতে চাইবেন, এমনকি রাজনীতিবিদ নিজে ফোন করে বদলি কিংবা চাকরি খাওয়ার হুমকি দেবেন। কিন্তু সৎ পুলিশ অফিসার তাতে দমে যাবার পাত্র নন।
বেশ কিছু নাটকীয়তার পর এক পর্যায়ে পুলিশ আয়নাকে খুঁজে পাবে। এমনকি গ্রেফতারও করবে। আয়নার জীবন আবারও বিপন্ন হওয়ার মুখোমুখি হবে। কিন্তু আয়না আবারও পুলিশকে ফাঁকি দিতে সক্ষম হবেন। কারণ আয়নাবাজি সিনেমাটির মূলকথা হচ্ছে, ‘সবার ওপরে অভিনয় সত্য, তাহার ওপরে নাই’।
পুনশ্চ: নায়িকা চরিত্রে নতুন কাউকে নেওয়া হতে পারে। কারণ নাবিলার অভিনয় দুর্বলতা গোপন করার ব্যর্থচেষ্টা পরিচালক আবার করতে চাইবেন বলে মনে হয় না।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৬
এইচএ/