ব্যাকরণে বানান নিয়ে কিছু নিয়ম আছে, তবে সেগুলো সর্বজনস্বীকৃত নয়। ফলে পণ্ডিতরাই নানা বানানের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন।
সংস্কৃত থেকে আগত শব্দের বানানবিধি আর বিদেশি শব্দের বানানবিধি এক নয়। এসব ক্ষেত্রে এখন অনেক সহজবোধ্যতা তৈরি করা হয়েছে। এখন আর সূর্য্য (সূর্য), সর্ব্ব (সর্ব), চক্রবর্ত্তী (চক্রবর্তী), বিদেশী (বিদেশি) দেখা যায় না। সরলীকরণ হয়েছে অনেক বানানে। বিদেশি বানানকে একটি কাঠামোতে নিয়ে আসা হয়েছে। ষ্টোর ও ষ্টেশন এখন স্টোর ও স্টেশন।
এতসব করার পরেও বানানবিধি অভিন্ন হয়েছে, এমন বলা যাবে না। বিভিন্ন পত্রিকার বানানরীতিও বিভিন্ন। এতে সাধারণ মানুষ পড়েন বিড়ম্বনায়। তিনি কোন বানানটিকে সঠিক বলে ধরে নেবেন? শিক্ষার্থীরাও অভিন্ন বানান শিখতে পারছে না।
এমন সমস্যার সঙ্গে রয়েছে অজ্ঞতাহেতু ভুল। দোকানের সাইনবোর্ডে, বাস, টেম্পু বা রিক্সায় এমন এমন বানান লেখা হয়, যা শুধু ভুলই নয়, হাস্যকরও বটে। এমনই বহু শব্দ পাওয়া যাচ্ছে কথ্য ও লিখিত ভাষ্যে, যা প্রমিত উচ্চারণ ও বানানবিধিকে তোয়াক্কা না করে আঞ্চলিক ধরনটিকেই সর্বসাধারণ্যে প্রচলিত করেছে।
একথা অবশ্য সত্য যে, লিখতে গিয়ে জীবনে কখনও ভুল করেননি, এমন মানুষ সম্ভবত পৃথিবীতে বিরল। লিখতে গিয়ে হাত থেকে ভুল শব্দ বা বানান বের হয়নি, এমন মানুষও পাওয়া দুষ্কর।
ভুলের মধ্যে বানানভুলই হলো সবচেয়ে মারাত্মক। এতে অর্থের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে লেখার গুণ ও মানের পতন ঘটে।
শব্দের বানান ভুলে পেছনে দুটি কারণকে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এক) শব্দের সঠিক বানান না জানা বা ভুলে যাওয়া; দুই) লিখতে লিখতে কলম-বিচ্যুতি বা আজকাল টাইপের সময় আঙুলের-বিচ্যুতি।
শব্দের বানান জানা না থাকলে মানুষ সাধারণত উচ্চারণানুগ বানান লিখতে চেষ্টা করে। আর তখনই স, শ, ষ কিংবা ন, ণ ইত্যাদিতে ভুল করেন। বানান না জানলে কেবল উচ্চারণ দিয়ে ষাঁড় শব্দটি লেখা সম্ভব নয়। না জানার কারণে সেটি সাড় ও শাড় হয়ে যেতে পারে।
কিছু শব্দের বানান মনে রাখা বেশ সহজ। যেমন, ফুল, পাতা, লতা, আম, কলা। এখানে বানান ও উচ্চারণে পার্থক্য নেই। কারণ এই শব্দগুলোতে কোনও বর্ণেই সমোচ্চারিত প্রতিরূপ বাংলা বর্ণমালায় নেই। ণ-ত্ব এবং ষ-ত্ব বিধান মনে রাখলেও ন-ণ, র-ড়, স-ষ শব্দগুলোর ব্যবহার বানান বিশেষে কেমন হবে, সেটাও নির্ভুল করা যায়।
বানানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বিপদ হয় যেসব শব্দে একাধিক সমোচ্চারিত বর্ণের উভয়টিই রয়েছে, সেসবে। যেমন, মুমূর্ষ। এখানে কোথায় হ্রস্ব এবং কোথায় দীর্ষ ঊ-কার লাগবে তা নিয়ে দোলাচল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার, নিরিবিলি-র মতো শব্দে সবই হ্রস্ব-ইকার, সুতরাং মনে রাখা সহজ। গবেষণায় দেখা গেছে, হ্রস্বস্বর যত সহজে মনে থাকে, দীর্ঘস্বর ততটা সহজ নয়। হরীতকী-র দুটি দীর্ঘ-ঈ- কার দিতে ভুল করেন অনেকেই।
শব্দে একাধিক সমোচ্চারিত ব্যঞ্জনধ্বনি থাকলেও সমস্যা হয়। আরেকটি সমস্যা হচ্ছে উচ্চারণ বিকৃতির কারণে। যেমন, মতি (মোতি), শত (শতো) ইত্যাদি। বিশেষ করে ইংরেজির তুলনায় বাংলা বানানে মনে রাখার অসুবিধা বেশি। তবে বানানের নিয়ম-কানুনগুলো স্মৃতিতে ধরে রাখলে বানান ভুলের শঙ্কা কম। পাশাপাশি প্রচুর পড়াশোনা ও লেখালেখি করলে প্রতিনিয়ত স্মৃতিতে অসংখ্য শব্দ গেঁথে যায়। ফলে বানান ভুল কম হয়। লেখার সময় অমনোযোগিতা এড়ানো সম্ভব হলে কলমচ্যুতির বিপদ কমে যায়।
বানান ভুলের হার কমাতে বানানের আর্দশ তালিকা সামনে থাকা ভালো। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এমন তালিকা প্রকাশ করে। আর প্রয়োজন প্রচুর পড়া ও লেখার চর্চা। মনোযোগ এবং অবিরাম চেষ্টায় কাজগুলো করা হলে বানান-দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি ভাষাচর্চায় কৃতিত্ব অর্জন করাও মোটেই কঠিন নয়।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৮
এমপি/ জেএম