দেশে সীমিত সুযোগ, চাহিদার অপ্রতুলতার পাশাপাশি পর্যাপ্ত হাতে-কলমে শিক্ষার অভাব। আর এই অভাব পূরণে রাশিয়ার সরকার সুযোগ দিয়েছে উচ্চ প্রযুক্তির নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার।
টিমের সদস্যরা চলতি বছরের (২০১৮ সাল) জুনে কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে সব শিক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করে তারা। তরুণ তুর্কি স্বপ্নবাজ শিক্ষার্থীরা অধীর আগ্রহী দেশের সেবায় নিজেদের আত্মনিয়োগ করবে বলে। অচিরে তারা দেশে ফিরতে যাচ্ছে। তারা চায় তাদের অর্জিত জ্ঞান সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগিয়ে দেশে নির্মাণাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে।
জাতীয় পরমাণু গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় সংক্ষেপে ‘মেফি’ রাশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়। ছয়জন নোবেলজয়ী কাজ করেছেন এখানে। তাছাড়া রাশিয়ার পারমাণবিক গবেষণার ক্ষেত্রে পথিকৃৎ ও অদ্বিতীয়। বিশ্বের নামকরা নানা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রয়েছে সরাসরি কো-অপারেশন। প্লাজমা ফিজিক্স, নিউট্টিনো ডিটেক্টর, লেজার ও আইসোটোপ প্রযুক্তিসহ নিউক্লিয়ার বিদ্যার সব বিষয়ে সমৃদ্ধ।
বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজস্ব অত্যাধুনিক ল্যাব, রিচার্স রিঅ্যাক্টর, পারটিক্যাল ডিটেক্টর, যার মাধ্যমে ছিল হাতে-কলমে জ্ঞান অর্জনের সব সুযোগ-সুবিধা। তাছাড়া বিভিন্ন পাওয়ার প্ল্যান্টে শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে বাস্তব ধারণা ও ব্যবহারিক জ্ঞান।
যেখানে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে একদল শিক্ষার্থী নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন অনন্য মর্যাদায়। কৃতিত্বের সঙ্গে মেধার স্বাক্ষর রেখে ডিস্টিংশনসহ রেকর্ড সিজিপিএ পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন রাশানদের।
শিক্ষার্থীদের অনুভূতি ও স্বপ্ন সম্পর্কে জানতে চাইলে নওগাঁর ছেলে সাজ্জাদ দেওয়ান বাংলাদেশ সরকার ও রাশিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বিশ্বের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পেরে আমি গর্বিত। এখন একটাই স্বপ্ন, দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কাজ করতে চাই। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আর্থ-সামাজিক ও বিজ্ঞানের উন্নয়নের ক্ষেত্রে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
শিক্ষার্থী আল-আমিন বলেন, দেশে উচ্চতর গবেষণা ও পারমাণবিক প্রযুক্তি উন্নয়নে কাজ করতে চাই। শুধু হালের রূপপুরই নয়, ভবিষ্যতে দেশে আরো নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট হবে বলে আমি আশাবাদী।
শিক্ষার্থী শিহাব সিদ্দিক সমাবর্তন সম্পর্কে বলেন, প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে সমাবর্তন ছিল স্বপ্নের মতো। অনেক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও নিউক্লিয়ার ফিজিক্স নিয়ে পড়াটা অসাধারণ ছিল।
নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে সালমা আক্তার সুমি বলেন, লক্ষ্য নিজেকে আরো দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করা। যাতে ভবিষ্যতে রূপপুরে সফলতার সঙ্গে কাজ করতে পারি।
নিউক্লিয়ার রেডিইয়েশনাল সেফটি নিয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করা ছাত্রী নাজমুন নাহার তন্নী জানান, সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নিজের সমস্ত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কাজ করতে চান, দেশ ও দশের জন্য।
স্বপ্নগুলো আজ অঙ্কুরোদগম হয়ে প্রতীয়মান হচ্ছে। ধীরে ধীরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দৃশ্যমান থেকে স্পষ্টতর হচ্ছে। এখন দরকার শুধু সঠিক পরিচর্যার, যাতে স্বপ্ন বেঁচে থাকে আর বাস্তবে রূপ লাভ করে। তারুণ্যের উদ্যোমে পরিবর্তিত হবে বাংলাদেশ, মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বিশ্ব দরবারে। এখন সংগ্রাম ক্ষুধা নিবারণের নয়, সংগ্রাম জাতি হিসেবে গৌরব অর্জন আর প্রশংসা কুড়ানোর। আমরাই গড়ব আগামীর ভবিষ্যৎ।
মোহাম্মদ হামিদুল হক
শিক্ষার্থী
জাতীয় পরমাণু গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়, মস্কো, রাশিয়া।
বাংলাদেশ সময়: ০৩১০ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৮
এসআই/এএ