ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

তথাকথিত জাতীয় ঐক্য হবে না

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৮
তথাকথিত জাতীয় ঐক্য হবে না মোহাম্মদ এ. আরাফাত

বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে এক ছাতার নিচে এনে, ছোট দলের বড় নেতাদের এক মঞ্চে নিয়ে এসে জাতীয় ঐক্যের নামে যে মোর্চা বানানোর পরিকল্পনা চলছিল, তা সম্ভবত অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে গেল। 

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর মধ্যেই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে যোগ দেবেন বলে জানা গেছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী হতে তার আপত্তি থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

 

এদিকে ড. বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন যে, জামায়া‌তের স‌ঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন না করা পর্যন্ত বিএ‌ন‌পির সা‌থে ঐক্য হ‌বে না। অন্যদিকে আ. স. ম. আব্দুর রব জানিয়েছেন জামায়াতকে না ছাড়লে বিএনপির সাথে কোনো রকম ঐক্য হবে না। একই কথা বলেছেন ড. কামাল হোসেন। এরা দুইজনের কেউই একাত্তরের গণহত্যাকারী সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর সাথে রাজনৈতিক ঐক্য গড়তে রাজি নন।  

অন্যদিকে বিএনপির পক্ষে কোনো ভাবেই জামায়াতকে ছাড়া সম্ভব নয়, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটে জামায়াত একটি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবেই থাকছে বলে বিএনপি ও জামায়াত উভয়ই জানিয়েছে। তাছাড়া গত দুই দশকেরও বেশি সময়ের রাজনীতির ধারা অনুসরণ করলে স্পষ্ট হয়ে যায়, জামায়াত আর বিএনপির মধ্যে যে গাঁটছড়া বাঁধা আছে তা হুট করে ভেঙে যাওয়া প্রায় অসম্ভব একটি ব্যাপার। এবং জামায়াতকে ছাড়া বিএনপি আসলে অচল একটি দল। এই দুই দশকে জামায়াতকে যত পৃষ্টপোষকতা দেয়া সম্ভব সেটি বিএনপি দিয়েছে; জামায়াতও বিএনপিকে এমন ভাবে গ্রাস করেছে যে বিএনপি কার্যত এখন জামায়াতের মতোই একটি সন্ত্রাসী দল।  

জামায়াতকে ত্যাগ করা মানে রাজনৈতিক ভাবে বিএনপির দেউলিয়া হয়ে যাওয়া। সুতরাং অন্তিমে বিএনপি জামায়াতকে ত্যাগ করবে না এবং সেই ক্ষেত্রে ড. বদরুদ্দোজা চৌধুরী, কামাল হোসেন, আ. স. ম. আব্দুর রব বা কাদের সিদ্দিকীর মতো নেতাদের পক্ষে ঐক্যে আসার জন্য একটিমাত্র পথই খোলা থাকছে। সেটা হলো ন্যূনতম আদর্শটুকুও বিসর্জন দিয়ে জামায়াতের আধিপত্য মেনে নিয়ে জোটবদ্ধ হওয়া। তারা সেটা করবেন না বলেই জানাচ্ছেন।

তাহলে বাকি থাকলেন কেবল মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি একা এই ঐক্যকে কতদূর টেনে নিয়ে যেতে পারেন সেটাই এখন আগ্রহের সাথে দেখার বিষয়।  

সত্য হলো, বাংলাদেশের রাজনীতিতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির মূল নেতৃত্ব সব সময়ই আওয়ামী লীগ দিয়ে এসেছে, আর এর বিপরীত ধারা অর্থাৎ স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি বেঁচে থেকেছে বিএনপির ছত্রছায়ায়। কাজেই যে জাতীয় ঐক্যের কথা শোনা যাচ্ছিল, তা সফল হলেও শেষ পর্যন্ত তা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শিবিরের মধ্যে এক ধরনের ঢিলেঢালা জোট ছাড়া আর কিছু হতো না। এখন কাদের সিদ্দিকী,  আ. স. ম. আব্দুর রব, ড. কামাল হোসেন, ড. বদরুদ্দোজা চৌধুরী অর্থাৎ যাদের ভোট না থাকলেও ইমেজ আছে তারা সরে দাঁড়ানোর কথা বলাতে এ ঐক্য সৃষ্টি হওয়ার আগেই নড়বড়ে হয়ে গেল।  

জামায়াতকে যেহেতু কোনো অবস্থাতেই বিএনপি ত্যাগ করবে না, কাজেই শেষ পর্যন্ত তারা বিএনপির সঙ্গে থাকলেও জোটে তাদের অবস্থান হবে জামায়াতের করুণার উপরে নির্ভরশীল। আর বিএনপির সাথে না এলে তো কথিত ঐক্য হচ্ছেই না।  

সুতরাং, কাগজে কলমে যাই হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত এই তথাকথিত জাতীয় ঐক্য বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে না এবং কার্যত এর অস্তিত্ব হবে গুরুত্বহীন।

সৌজন্যে: বাংলাদেশ প্রতিদিন

বাংলাদেশ সময়: ১৯১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৮

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।