ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

আনন্দ-উচ্ছ্বাসে ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটিতে সমাবর্তন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৯
আনন্দ-উচ্ছ্বাসে ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটিতে সমাবর্তন টুপি উড়িয়ে নিজেদের অর্জন উদযাপন করেন ইডিইউ গ্র্যাজুয়েটরা।

চট্টগ্রাম: সকাল সাড়ে ৯টা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই গাউন-টুপি পরিহিত গ্র্যাজুয়েটরা সঙ্গে দুজন অভিভাবককে নিয়ে একে একে প্রবেশ করলেন ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি (ইডিইউ) ক্যাম্পাসে। সকাল থেকেই আনন্দ-উচ্ছ্বাসের আবহে মেতে ছিলেন সাড়ে ৬শ গ্র্যাজুয়েট। এ দৃশ্য ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির প্রথম সমাবর্তনের।

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য সমাবর্তন নতুন কিছু না হলেও অনেক নতুনের সমাহার ঘটিয়ে ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির `১ম সমাবর্তন ২০১৯’ আয়োজন ছিল ব্যতিক্রম। বৃহস্পতিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) প্রাক সমাবর্তন সমাবেশের মধ্য দিয়ে শুরু হয় চারদিনের কর্মসূচি।

রোববার (১০ মার্চ) অনুষ্ঠিত হয় প্রধান আয়োজন। সোমবার (১১ মার্চ) গালা নাইটের মধ্য দিয়ে শেষ হয় জাঁকজমকপূর্ণ এ উৎসবের।

ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির প্রথম সমাবর্তনে গ্র্যাজুয়েটদের সুযোগ-সুবিধা ও চাহিদাকেই সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সন্তানের সাফল্যে গর্বিত পিতা-মাতা দুজনকেই অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়ার মাধ্যমে যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শনই ছিলো আয়োজকদের লক্ষ্য। অনুষ্ঠানে ভিড়ের মধ্যেও কোনো প্রকার বিঘ্ন ছাড়াই যেন তারা সন্তানের বিশেষ মুহূর্তটির সাক্ষী হতে পারেন, সে লক্ষ্যে সমাবর্তনের অনুষ্ঠানস্থল বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে গড়ে তোলা হয় উঁচু বেদী।

সমাবর্তনে মঞ্চে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, ইডিইউর চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান, কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন ও ইডিইউর ভাইস চেয়ারম্যান সাঈদ আল নোমানসহ অন্যরা। ১০ মার্চের মূল অনুষ্ঠান সকাল ১০টায় জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক সিকান্দার খানের স্বাগত বক্তব্যে অনুষ্ঠানটি মূল পর্বে প্রবেশ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও মহামান্য রাষ্ট্রপতির পক্ষে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, শিক্ষাজীবনের এই পর্যায়ে এসে তোমরা যে ডিগ্রি অর্জন করেছো, তাতে তোমাদের পরিশ্রমের পাশাপাশি রয়েছে অভিভাবক, শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয় সর্বোপরি রাষ্ট্রের সীমাহীন ত্যাগ। গ্র্যাজুয়েটরা গভীর কর্তব্যবোধের সাথে একজন নাগরিকের যথাযথ ভূমিকা পালন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মন্ত্রী।

ইউনিভার্সিটিগুলোর অভিভাবক সংস্থা ‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন-বাংলাদেশ’ এর চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান ছিলেন বিশেষ অতিথি। তিনি বলেন, অনেকে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি থাকলে চাকরি পাওয়া যায়। এটা ভ্রান্ত ধারণা। আমাদের শিক্ষা সার্টিফিকেটধারী হয়ে গেছে, কর্মধারী নয়। কিন্তু সকলের মনে রাখা প্রয়োজন, যার দক্ষতা আছে, চাকরি তারই পিছু নেয়।

সমাবর্তন বক্তা হিসেবে অনুষ্ঠানে যোগ দেন একুশে পদকপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক ও কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন। প্রিয় এই লেখককে কাছে পেয়ে সেলফি-অটোগ্রাফ নিতে বিন্দুমাত্র ভুল করেনি ইডিইউভিয়ানরা। নিজের লেখালেখি, বিভিন্ন গল্প-উপন্যাস নিয়ে পাঠকদের নানা প্রশ্নেরও উত্তর দেন তিনি। অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তব্যে তরুণ গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দীপিত করতে তিনি বলেন, মানুষ বড় হলে দেশ বড় হয়। আর দেশ আলোকিত হয় মানুষ আলোকিত হলে। জন্মে যে বাংলাদেশকে দেখেছ, মৃত্যুর সময় যেন তার চেয়ে বড় বাংলাদেশকে দেখে যেতে পারো, সেই স্বপ্ন দেখতে হবে তোমাদের।

সমাবর্তনে গ্র্যাজুয়েটদের সঙ্গে ইডিইউর ভাইস চেয়ারম্যান সাঈদ আল নোমান|নিজের প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সবসময় নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখা বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান, সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান এই আয়োজনে না এসে পারেননি। তিনি বলেন, দেশের জন্য, মানুষের জন্য এই প্রতিষ্ঠানে অনেক ভালো ভালো গবেষণাধর্মী কাজ হোক, সেটাই সকলের কাম্য এবং আমারও কাম্য। সকলের সহযোগিতা ছাড়া কোনো বড় প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেটির প্রয়োজন আরো বেশি বলে আমার মনে হয়।

তিনি আরো বলেন, অতীতের দিকে যখন তাকাই, তখন মনে পড়ে আমার ছেলে সাঈদ আল নোমান এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব নিয়ে আসে, যা চট্টগ্রামসহ সারাদেশে উন্নত মানবসম্পদ গড়ে তুলবে। আজ অত্যন্ত গৌরবের সাথে আমি বলতে পারি, আমাদের সমস্ত পরিশ্রম এবং সাধনা সার্থক হয়েছে।

ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য সিকান্দার খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় তার দালান-কোঠার মাধ্যমে পরিচিত হয় না। পরিচিত হয় তার শিক্ষকমণ্ডলী ও শিক্ষার্থীদের দ্বারা। তাই প্রতিষ্ঠানের সুনাম যাতে ক্ষুণœ না হয়, সেভাবে নিজেদের পরিচালিত করার অনুরোধ জানান তিনি।

ইডিইউর ভাইস চেয়ারম্যান তার বক্তব্যে অভিভাবকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ইডিইউর উপর আস্থা রাখায় আমরা কৃতজ্ঞ। অভিভাবকদের সম্মান জানানোই ছিলো এই সমাবর্তনের অন্যতম লক্ষ্য। সম্মানিত করতেই আর সবার চেয়ে একটু উপরে স্থান দিতে চেয়েছি আপনাদের। আপনাদের সম্মানিত করতে পেরে ইডিইউ আজ গর্বিত।

তিন সহস্রাধিক মানুষের এই আয়োজনে গ্র্যাজুয়েট ও তাদের অভিভাবকসহ অতিথিদের আপ্যায়নে কোনো ত্রুটি রাখেনি ইডিইউ কর্তৃপক্ষ। এ সমাবর্তনে অন্যতম আকর্ষণ ছিলো এর মেডেল। ইডিইউ ডিস্টিংকশনসহ পাশ করা ১শ ২০জন গ্র্যাজুয়েটকে মেডেল দিয়েছে। যার মধ্যে ছিলো সুম্মা কাম লডে, মেগনা কাম লডে ও কাম লডে- আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সর্বোচ্চ এই তিনটি গ্রেডে উত্তীর্ণ হওয়া গ্র্যাজুয়েটরা। স্থায়িত্বের কথা মাথায় রেখে গোল্ড, নিকেল ও ব্রাস এর মিশ্রণে আন্তর্জাতিক মানে প্রস্তুতকৃত তিন ধরণের মেডেলের বর্তমান অধিকারী ৩.৫০ বা তদুর্ধ্ব গ্রেড পেয়ে স্নাতক শেষ করা ইডিইউভিয়ানরা।

ইডিইউর ভাইস চেয়ারম্যান সাঈদ আল নোমানের সঙ্গে গ্র্যাজুয়েট দুই জমজ ভাই। ইডিইউ তাদের সর্বোচ্চ গ্রেড অর্জনকারীদের স্বীকৃতিস্বরূপ স্যুভেনিয়র হিসেবে দিয়েছে একটি বিশেষ মেডেল। এই মেডেল ও সার্টিফিকেটগুলো রাখার জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে কাঠের ফ্রেম। এছাড়া, সমাবর্তনের আগের দিনই রিহার্সাল প্রোগ্রামে অংশগ্রহণকারী সবাইকে দিয়ে দেয়া হয় গাউন। এই গাউনগুলো নিজেদের কাছে রেখে দেওয়ারও সুযোগ পেয়েছে অংশগ্রহণকারীরা।

মৌলিকত্ব, নতুনত্ব ও স্থায়িত্ব- এই থিমের উপর ভিত্তি করেই সাজানো হয় ইডিইউর সমাবর্তনের সব আয়োজন। মূল ক্যাম্পাসের পাশে খোলা মাঠের এক পাশে থাকা পাহাড়কে অবিকৃত রেখে গড়ে তোলা হয়েছে গ্রিক-রোমান কলোসিয়ামের ধাঁচে নতুন স্থাপনা, যেন নতুন ক্যাম্পাস!

এই সমাবর্তনের সমাপ্তি ঘটে ১১ মার্চ রাতে, গালা নাইটের মাধ্যমে। গানের তালে তালে কখন যে সমাবর্তনের একেবারে অন্তিম মুহূর্ত চলে আসে, কারো সেই খেয়ালই ছিলো না। কিন্তু রাতের শেষেই তো নতুন দিন। সেই দিনের জন্য রাতকে যে সমাপ্ত হতেই হয়!
লেখক: জনসংযোগ কর্মকর্তা, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।