ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

যে শিক্ষা দিয়ে গেলো ‘ফণী’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৭ ঘণ্টা, মে ৫, ২০১৯
যে শিক্ষা দিয়ে গেলো ‘ফণী’

এই ক’দিন আমাদের মুখে মুখে, ফেসবুকে দাপটে বেড়িয়েছে ‘ফণী’। সব জল্পনা-কল্পনার পর বিপদ যখন প্রায় কেটেই গেলো, এবার ‘ফণী’কে নিয়ে কিছু কথা বলাই যায়। ফণী চলে গেলো, তবে দিয়ে গেলো বড় রকমের শিক্ষা। শুরুর শিক্ষাটা প্রস্তুতির। লাখ লাখ লোককে নিরাপদে পৌঁছে দেওয়ার সাফল্যতো একটা শিক্ষাই। সুদূর অতীতের দুর্যোগের চেয়ে এবার অনেক বেশি পরিণত মনে হয়েছে প্রস্তুতি পর্ব। এজন্য মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের তৎপরতা ও কেন্দ্রের সুষ্পষ্ট নির্দেশনার সমন্বয়ে ‘ফণী’ আঘাত হানার আগে স্বস্তি মিলেছে অনেকটা। 

পরের শিক্ষাটা ‘চার সংখ্যার’! ১০৯০। আবহাওয়ার হটলাইনের সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয় গত বছর উন্নয়নমেলায়।

শুরুতে ভেবেছিলাম, অ্যাকুওয়েদার, মার্সওয়েদার আর গুগলের যুগে এ সেবা কতোটা উপযোগী! পরক্ষণেই বদলে ফেলেছি ভাবনা। চিন্তায় এসেছে সেই সব উপকূলীয় মানুষগুলোর কথা, যাদের কাছে পৌঁছায়নি প্রযুক্তির আশীর্বাদ। একটু আক্ষেপও করেছিলাম, আহা! যদি সবাই জানতো সহজলভ্য বিনামূল্যের এই সেবার কথা। সে সুযোগ শেষমেষ করেই দিলো ‘ফণী’। মন্ত্রী মোস্তফা জব্বারের স্ট্যাটাসে জানলাম, ‘ফণী’ ঘিরে ৩০ লাখ মানুষ ১০৯০-তে ফোন করে সেবা নিয়েছেন।  

শুধু ইতিবাচক নয়, নেতিবাচক শিক্ষাও দিয়ে গেছে ‘ফণী’। আমরা যে দুর্যোগ নিয়েও হাসি-তামাশা আর ট্রল করার মতো অবিবেচক রয়ে গেছি; তা ‘ফণী’ না এলে কি জানতাম? ফেসবুক পেজ আর গ্রুপে লাইক আর শেয়ার বাড়ানোর জন্য কেউ কেউ অন্য পুরনো ঝড়ের ভিডিও পোস্ট করে লিখেছেন- ‘দেখুন ফণী’। সোশ্যাল মিডিয়ায় এ বিভ্রান্তির জগত থেকে বের হওয়া বড় একটা চ্যালেঞ্জ। কারণ, ঘটনা যতোই গুরুগম্ভীর আর বিপদসংকুল হোক না কেন, কেউ কেউ তা নিয়ে ‘ফান’ করতে ছাড়ে না।  

নেতিবাচক শিক্ষার এখানেই শেষ নয়। দুর্যোগের আগে ডাউন হয়ে গেলো আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট। ‘বেশি’ ভিজিটর হওয়াতেই নাকি এই বিপত্তি! এখনো আমরা ওয়েবসাইটগুলোকে ‘এয়ারপোর্টের ভিআইপি লাউঞ্জ’ ভাবতে পছন্দ করি। সত্যিকার অর্থে জনসেবামুখী এসব ওয়েবসাইট হতে হবে ‘জনবহুল রেলস্টেশন’র মতো ভার বহনে সক্ষম। কনকারেন্ট ইউজারের সংখ্যা যে দুর্যোগের সময় বেশি হবে, সেটা মাথায় রাখতে হবে ভবিষ্যতে।  

সামনের দুর্যোগমুক্ত রোদ ঝলমলে দিনে এসব শিক্ষাগুলো সঙ্গে নিয়ে এগোনো বড়ই জরুরি। ভাগ্যিস ‘ফণী’ পূর্ণশক্তি নিয়ে আসেনি! ক্ষয়ক্ষতির হিসেব-নিকেশ তাই নিঃসন্দেহে তুলনামূলক কম হয়েছে। সৃষ্টিকর্তাকে অশেষ ধন্যবাদ আমাদের রক্ষা করার জন্য। তবু তো ঝরে গেছে কিছু প্রাণ, ভেঙেছে-ভেসেছে ঘরবাড়ি, ব্যাহত হয়েছে স্বাভাবিক জীবন। দুর্যোগ এমনই। বেশি হোক আর কম, কষ্ট আর দুর্দশা ছাড়া আর কিছু দিতে পারে না।

mon

 

 

লেখক
সিনিয়র সহকারী সচিব
ইমেইল: [email protected]

 

বাংলাদেশ সময়: ১১৫১ ঘণ্টা, মে ০৫, ২০১৯
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।