ঢাকা, বুধবার, ১ মাঘ ১৪৩১, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪ রজব ১৪৪৬

মুক্তমত

কবীর চৌধুরী : কাছের মানুষ দূরের মানুষ

সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, কানাডা থেকে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১১
কবীর চৌধুরী : কাছের মানুষ দূরের মানুষ

স্যার চলে গেলেন! হ্যাঁ, তিনি তো পরিণত বয়সেই চলে গেলেন। তারপরও তাঁর এই মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না মন।

কারণ, তাঁর মৃত্যুতে আমাদের অপরিসীম ক্ষতি হয়ে গেল। তিনি শুধু জাতীয় অধ্যাপকই ছিলেন না; ছিলেন জাতির বিবেক, জাতির অভিভাবক।

১৩ ডিসেম্বর, বিজয়ের মাসে বিদায় নিলেন আবুল কালাম মোহাম্মদ কবীর বা কবীর চৌধুরী। একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর, তাঁর ছোটো ভাই মুনীর চৌধুরীকে পৃথিবী থেকে বিদায় করে দিয়েছে গোলাম আযমেরা। ডিসেম্বর আমাদের বিজয়ের মাস; একই সঙ্গে বেদনার মাসও।

কি লিখবো? কলম থেমে যাচ্ছে, চোখ ভিজে যাচ্ছে, মন বিষণ্নতায় স্মৃতিকাতর হচ্ছে। বন্ধু রিটনের ভাষায় বলতে হয়- ‘মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার স্বপক্ষশক্তির অন্যতম প্রধান প্রেরণাপুরুষ, সময়ের সাহসী মানুষ, বর্ণাঢ্য যুবরাজ কবীর চৌধুরী, একাত্তরের ঘাতক দালালদের বিরুদ্ধে সদা সোচ্চার মানুষটি... যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না দেখেই চলে গেলেন!’

তিনি একাধারে প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, খ্যাতিমান প্রাবন্ধিক এবং অনুবাদক। এ সবের চেয়ে তাঁর বড় পরিচয়- তিনি একজন অসাধারণ রুচিশীল, বিনয়ী ভালো মানুষ; সার্বিক দিক দিয়ে বিরল ব্যক্তিত্ত্বসম্পন্ন মানুষ। যা আমাদের সময়ে ও সমাজে সত্যি অদ্বিতীয়।

নানানভাবে, নানান কাজের মাধ্যমে তাঁর সাথে দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক। যেমন- তাঁর বনানীর বাসায় ‘অলক্ত‌’‌ সাহিত্য পুরস্কারের মিটিং, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কর্মসূচি, বিটিভি সাহিত্যানুষ্ঠান ‘দৃষ্টি ও সৃষ্টি’তে নজরুলের ‘ঝিঙে ফুল’ কবিতার অপূর্ব অনুবাদ পাঠ, জাতির ক্রান্তিকালে সংবাদপত্রে বিবৃতি প্রদান, মুক্তিযুদ্ধের কবিতা অনুবাদ এ ভাবেই জড়িয়ে ছিলাম স্যারের সাথে। আমরা যৌথভাবে ২/১টা কাজ করেছি। বের করেছি- Pomes of Liberation War. আমার সম্পাদনায় আর তাঁর অনূদিত ‘মুক্তিযুদ্ধের কবিতা’ সংকলনটি ২০০০ সালে প্রকাশ করেছিলো অন্যপ্রকাশ। কথা ছিলো আমরা এভাবে ‘বাংলাদেশের কবিতা’ সংকলন করবো; কিন্তু তা আর কোনোদিনই হবে না।

আজ তাঁকে হারিয়ে স্মৃতির উথাল পাতাল ঢেউয়ে মনে পড়ছে, কতটা স্নেহ করতেন আমাকে।

তাঁর ভালোবাসার দৃষ্টান্ত অনেক। আমার মতো সামান্য এক কবির ‘তবু কেউ কারো নই’ গ্রন্থ সম্পর্কে সাহিত্য পত্রিকা সূচিপত্রের প্রথম বর্ষের প্রথম সংখ্যায় ফেব্রুয়ারি ১৯৮৭-এ লিখেছিলেন- “দুলাল সচেতনভাবে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করেছেন, প্রায়ই ব্যবহার করেছেন ড্রামাটিক মনোলোগের ফরম...  একঘেয়েমি ভাংতে চেষ্টা করেছেন ছন্দ, চরণ ও স্তবকবিন্যাসের ব্যবহারের মধ্য দিয়ে। ” তাঁর এই ঋণ কিভাবে শোধ করবো?

তিনি আমার এবং আমাদের কতো কাছের মানুষ, আপনজন ছিলেন; মাত্র মুহূর্তের ব্যবধানে তিনি এখন দূরের মানুষ। বহু দূরের, অনেক দূরের...

[email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।