ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

চবিসাসের রজতজয়ন্তী: উৎসব রাঙা দিনের গল্প

মাহবুব এ রহমান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০২২
চবিসাসের রজতজয়ন্তী: উৎসব রাঙা দিনের গল্প ছবি: লেখক

মাঘের মাঝামাঝি সময়টাতে সবুজাভ ক্যাম্পাসে পাহাড় বেয়ে নেমে আসে শীত। ভোরের ঘন কুয়াশায় একটু দূরের অবস্থাও বোঝা মুশকিল।

এমন ভোরে ক্লান্তিহীনভাবে সাজসজ্জার কাজ করছিলেন কয়েকজন তরুণ। বেলা বাড়তেই কুয়াশা ভেঙে মাথা তুলে রক্তিম সূর্য। শুরু হয় সোনালি রোদমাখা ঝলমলে সকাল।  

সূর্যের ঝলমলে আলোর সঙ্গে মিতালি পেতেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (চবিসাস) একঝাঁক পরিচিত মুখ। ২৮ জানুয়ারি ছিল সেই কাঙ্ক্ষিত দিন। বয়সের ব্যবধান ভুলে একসঙ্গে মিশে যাওয়ার দিন। ১৯৯৬ সালের ৬ ডিসেম্বর ১০ জন সদস্য নিয়ে যাত্রা শুরু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির। প্রতিষ্ঠার ২৫ বছর পেরিয়ে ভরা যৌবনে আজ সংগঠনটি। এ উপলক্ষে ‘গৌরবে পঁচিশ, সৌরভে চবিসাস’ প্রতিপাদ্যে রজতজয়ন্তী উৎসবের আয়োজন করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি।  

এদিন সকালের শাটল আর বাস চেপে ক্যাম্পাসে পৌঁছান সমিতির বর্তমান ও সাবেক নেতারা। সকাল ১০টা বাজতেই ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ মিলনায়তনের নিরবতা ভাঙে মাইকের শব্দে। জ্বলে ওঠে সাদা বাতি। মুহূর্তেই মুখর হয়ে ওঠে দৃষ্টিনন্দন মিলনায়তন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে একে একে প্রবেশ করেন অতিথিরা। কেক কাটার মধ্য দিয়ে শুরু হয় আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম।

সংগঠনটির সভাপতি ইমরান হোসাইনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মুনাওয়ার রিয়াজ মুন্নার সঞ্চালনায় স্মৃতিচারণ করেন সাবেক নেতারা। সোনালি সময়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অনেকে হয়ে পড়েন আবেগাপ্লুত। কেউবা অনুজদের পরামর্শ দেন ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার নানান বিষয় নিয়ে। বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, ভারপ্রাপ্ত প্রক্টরসহ অন্যান্য অতিথিরা।  

ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর সোয়া একটা। জুমাবার হওয়ায় শেষ হয় অনুষ্ঠানের আলোচনা সভা পর্ব। নামাজ শেষে খাবার পর্ব সেরে শুরু হয় সাবেকদের নিয়ে ক্যাম্পাস ভ্রমণ। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন মোড় ঘুরতে গিয়ে পুরোনো ঘ্রাণ খুঁজেন সাবেকরা। সেই সঙ্গে অনুজদের সঙ্গে মেতে ওঠেন হাসি-আনন্দে। সবাই যেন ক্ষণিকের জন্য ফিরে গিয়েছিলেন ক্যাম্পাস জীবনে। বোটানিক্যাল গার্ডেন, হতাশার মোড় ও বঙ্গবন্ধু উদ্যান ঘুরে সবাই ফিরে আসেন শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে। ততক্ষণে সূর্যের তেজ কমতে শুরু করেছে। ঘনিয়ে আসছে সন্ধ্যা।  

শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ভ্রাম্যমাণ পিঠার দোকানে জমে ওঠে ভিড়। সবাই মিলে হরেক ভর্তাসমেত চিতই, দুধ চিতই, ভাপা ও পাটিসাপটাসহ উপভোগ করেন নানান পিঠার স্বাদ। কিছুক্ষণ গান ও আড্ডার পর সবার গন্তব্য আলাওল হল। সেখানে শুরু হয় রাতের আয়োজন বারবিকিউ পার্টির। সদস্যদের কাজ আর আর সাবেকদের আড্ডা-মাস্তির ফাঁকে প্রস্তুত হয় খাবার।  

সবশেষে সাইদ ভাইয়ের দোকানে চায়ের স্বাদ নিতে ভুলেননি কেউ। ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে চুমুকের পর চলে গানের তালে নাচ। হঠাৎ বাসের হর্ন। এসে হাজির নির্ধারিত গাড়ি। মুহূর্তেই পরিবেশটা কেমন গুমোট হয়ে ওঠে। বিদায়ের ক্ষণ এলো বলে। শহর থেকে আগত সাবেকরা বিদায় নেন। ইতি ঘটে তুমুল আড্ডায় মুখরিত এক উৎসবের।  

লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০২২ 
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।