ঢাকা, রবিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

এমপির ইন্ধনে ৯ ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৯ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২৩
এমপির ইন্ধনে ৯ ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত!

রাজশাহী: পবা ও মোহনপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনের ইন্ধনে কাটাখালি পৌরসভা আওয়ামী লীগের নয়টি ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে সভায় করে দুই নেতার ওপর রাগ করে তিনি এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ করছেন ওয়ার্ডগুলোর নেতাকর্মীরা।

মঙ্গলবার (১৬ মে) দুপুরে নগরের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন কাটাখালি পৌর আওয়ামী লীগের নয় ওয়ার্ডের নেতারা। সেখানেই তারা এ অভিযোগ তোলেন। তাদের ভাষ্য, আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের পক্ষে সভা করেছিলেন দলের জেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। ওয়ার্ড সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে তার এ সভার রাগ হন এমপি আয়েন উদ্দিন। তারপরই কাটাখালি পৌরসভা আওয়ামী লীগের নয়টি ওয়ার্ড কমিটি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন কাটাখালি পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ মানিক। তিনি বলেন, কোনো কিছু না জানিয়ে রাজশাহীর কাটাখালি পৌরসভা আওয়ামী লীগের নয়টি ওয়ার্ডের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এমপি আয়েন উদ্দিনের সাথে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদের দ্বন্দ্বের জেরেই সবগুলো কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী লিটনের পক্ষে নিজ এলাকায় লোক দেখানো প্রচারণা চালালেও এমপি আয়েন উদ্দিন মূলত বিপরীত স্রোতে অবস্থান করছেন। আর ব্যক্তিগত আক্রোশের জেরেই তিনি এমনটি করেছেন।

মানিক আরও বলেন, আসাদ কাটাখালি পৌরসভা সদর থেকে চলে যাওয়ার পরই তাদের ওপর নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। এমপি ও তার লোকজন আসাদের সাথে সাক্ষাতের বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। এ কারণেই এমপি আয়েনের নির্দেশে কাটাখালি পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু শ্যামা ও সাধারণ সম্পাদক জহুরুল আলম রিপন তাদের নয়টি ওয়ার্ডের কমিটি বিলুপ্ত করেন। এটি দলের মধ্যে একটি গঠনতন্ত্রবিরোধী কাজ।

পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জহুরুল আলম রিপন ছাত্রজীবনে রাজশাহী কলেজে জাতীয় পার্টির ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্র সমাজের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। ২০০৩-০৪ সালে তিনি বিএনপির রাজনীতি করতেন। ২০১৪ সালে কাটাখালি পৌরসভায় মেয়র পদে জামায়াত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন। তাকেই পৌর আওয়ামী লীগের সম্পাদক বানিয়েছেন এমপি আয়েন উদ্দিনে। বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালন করেন না পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদক। কমিটি গঠনের দেড় বছর অতিবাহিত হলেও সভাপতি ও সম্পাদক একটি পরিচিতি সভাও করতে পারেননি। সংগঠনবিরোধী তৎপরতার সাথে লিপ্ত থাকায় কারণে আমরা এ সংবাদ সম্মেলন থেকে অচিরেই পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু শামা ও সাধারণ সম্পাদক জহুরুল আলম রিপনের বহিষ্কার দাবি করছি।

সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত অভিযোগ সম্পর্কে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আয়েন উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, বিলুপ্ত কমিটির নেতারা কাটাখালি পৌরসভার বরখাস্তকৃত মেয়র আব্বাস আলীর লোক ছিল। আব্বাস বরখাস্ত হওয়ার পর থেকে তারাও আর দলের কর্মসূচিতে আসেন না। কমিটিগুলোর কার্যক্রম নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। আর কমিটিগুলোর মেয়াদও শেষ। এছাড়া কোনো কমিটি গঠন বা বিলুপ্তের সাথে সাধারণত জেলা বা উপজেলার দায়িত্বশীল নেতারা সম্পৃক্ত থাকেন। এখানে আমার সম্পৃক্ততা খোঁজা অযৌক্তিক ও অবাঞ্ছনীয়।

কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার প্রশ্নে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, কাটাখালি পৌরসভায় কমিটি বিলুপ্তের যে ঘটনা ঘটেছে সেটি ঘোর অন্যায়, অসংগঠনিক এবং অগণতান্ত্রিক। কেবলমাত্র প্রতিহিংসার বশে এ কাজটি করা হয়েছে। কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণকে বাতিলের কারণ দেখানো হলেও যারা পদ হারিয়েছেন, তারা বলছেন যে আমার সঙ্গে সভা করার কারণেই কমিটি বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু এর চেয়েও বেশি দিনের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি আছে পবায়। সেগুলো বাতিল করা হয়নি। নৌকার মেয়র প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটনকে আবারও নির্বাচিত করার জন্য সভা করে আমি যদি অপরাধ করে থাকি, তাহলে ঠিক আছে।

উল্লেখ্য, সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী লিটনের পক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদের সঙ্গে সভা করার পর দলের নয়টি ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। রোববার (১৪ মে) বিকেলে পবা উপজেলার কাটাখালি পৌর এলাকার ১ থেকে ৯ নম্বর ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২৩
এসএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।