ঢাকা: আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনরত বিএনপি যুগপৎ ধারায় বৃহত্তর গণ-আন্দোলনের এক দফা ঘোষণা করতে যাচ্ছে।
এ লক্ষ্যে আজ বুধবার (১২ জুলাই) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বড় সমাবেশ করবে দলটি।
আজ দুপুর ২টায় শুরু হতে যাওয়া সমাবেশের জন্য রাজধানীর নয়াপল্টনে অবস্থিত কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে বিএনপিকে। এই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত থাকবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
সকালে নয়পল্টনে গিয়ে দেখা যায়, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ৬টি পিকআপের ওপর অস্থায়ীভাবে সমাবেশের মূল মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া আরও একটি পিকআপে রাখা হয়েছে সাউন্ডবক্স।
ইতোমধ্যে মঞ্চে মূল ব্যানার লাগানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সচল করা হয়েছে সাউন্ডবক্সও। মূল মঞ্চের পাশেই রাস্তার ডিভাইডারের ওপর উড়তে দেখা গেছে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছবি সম্বলিত একটি গ্যাস ব্যালুন।
দুপুরের আগেই মঞ্চ পুরোপুরি তৈরি হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা।
মূল মঞ্চ তৈরির পাশাপাশি নয়াপল্টন থেকে শুরু করে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত এবং অন্যপাশে কাকরাইল থেকে কর্ণফুলী মার্কেট পর্যন্ত লাগানো হয়েছে মাইক। তবে ফকিরাপুল মোড় থেকে পানি ট্যাংকি এবং পেট্রোল পাম্প পর্যন্ত লাগানো মাইক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী খুলে ফেলেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতারা।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির (দপ্তর সংযুক্ত) সদস্য আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী বলেন, সমাবেশকে ঘিরে আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছি। ইতোমধ্যে সমাবেশের মূল মঞ্চ তৈরি প্রায় শেষ। ব্যানার লাগানো হয়ে গেছে। আর আধাঘণ্টার মধ্যে মঞ্চ পুরোপুরি তৈরি হয়ে যাবে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, রাতে ফকিরাপুল মোড় থেকে পানির ট্যাংকি এবং পেট্রোল পাম্প পর্যন্ত লাগানো মাইকগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী খুলে ফেলেছে। কাকরাইল মোড় থেকে কর্ণফুলী মার্কেট পর্যন্ত লাগানো মাইকগুলোও খুলে নিতে বলছে।
এদিকে ভোর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আসতে দেখা গেছে বিএনপির নেতাকর্মীদের। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কয়েকশ নেতাকর্মী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এসে উপস্থিত হয়েছেন।
এদিকে বিএনপির সমাবেশ ঘিরে নয়াপল্টনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা খুব একটা চোখে পড়েনি। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নাইটেঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত যান চলাচলও স্বাভাবিক রয়েছে।
এর আগে ২৩ শর্তে বুধবার দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
মঙ্গলবার (১১ জুলাই) ডিএমপি সদর দপ্তর থেকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে এই অনুমতির চিঠি পাঠানো হয়। এতে ডিএমপি কমিশনারের পক্ষে সই করেন স্পেশাল অ্যাসিস্ট্যান্ট টু কমিশনার সৈয়দ মামুন মোস্তফা।
একই দিন বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটের সামনে শান্তি সমাবেশ করবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। তাদেরও ২৩ শর্তে সমাবেশের অনুমতি দেয় ডিএমপি।
শর্তগুলো হচ্ছে-
১. এই অনুমতিপত্র স্থান ব্যবহারের অনুমতি নয়, স্থান ব্যবহারের জন্য অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে।
২. স্থান ব্যবহারের অনুমতিপত্রের উল্লেখিত শর্তগুলো যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
৩. অনুমতি পাওয়া স্থানেই সমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
৪. নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্তসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক (দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ) নিয়োগ করতে হবে।
৫. স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলের চারদিকে উন্নত রেজুলেশনযুক্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।
৬. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলে আগতদের হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে (ভদ্রোচিতভাবে) চেকিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
৭. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৮. শব্দ দূষণ প্রতিরোধে সীমিত আকারে মাইক/শব্দযন্ত্র ব্যবহার করতে হবে, কোনোক্রমেই অনুমোদিত স্থানের বাইরে মাইক/শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।
৯. অনুমোদিত স্থানের বাইরে প্রজেক্টর স্থাপন করা যাবে না।
১০. অনুমোদিত স্থানের বাইরে, রাস্তায় বা ফুটপাতে কোথাও লোক সমবেত হওয়া যাবে না।
১১. আজান, নামাজ ও অন্যান্য ধর্মীয় সংবেদনশীল সময় মাইক ব্যবহার করা যাবে না।
১২. ধর্মীয় অনুভূতির ওপর আঘাত আসতে পারে এমন কোনো বিষয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন, বক্তব্য দেওয়া বা প্রচার করা যাবে না।
১৩. সমাবেশ কার্যক্রম ছাড়া মঞ্চকে অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না।
১৪. সমাবেশ শুরুর দুই ঘণ্টা আগে লোকজন সমবেত হওয়ার জন্য আসতে পারবে।
১৫. অনুমোদিত সময়ের মধ্যে (দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা) সমাবেশের সার্বিক কার্যক্রম শেষ করতে হবে।
১৬. কোনো অবস্থাতেই মূল সড়কে যানবাহন চলাচল প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না।
১৭. আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কার্যকলাপ করা যাবে না।
১৮. রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কার্যকলাপ বা বক্তব্য দেওয়া যাবে না।
১৯. উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান বা প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না।
২০. কোনো ধরনের লাঠিসোঁটা/ব্যানার, ফেস্টুন বহনের আড়ালে লাঠি, রড ব্যবহার করা যাবে না।
২১. আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও কোনো বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না।
২২. উল্লেখিত শর্তাদি পালন না করলে তাৎক্ষণিকভাবে এই অনুমতির আদেশ বাতিল বলে গণ্য হবে।
২৩. জনস্বার্থে কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ দর্শানো ছাড়া এই অনুমতি আদেশ বাতিল করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করে।
বাংলাদেশ সময়: ১০০২ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০২৩
এসসি/এমএইচএস