ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

নিশ্চিত থাকুন পরিবর্তন আসছে, নেতাকর্মীদের ফখরুল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২৩
নিশ্চিত থাকুন পরিবর্তন আসছে, নেতাকর্মীদের ফখরুল আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশের মানুষের দম বন্ধ হয়ে আসছে। চাল, ডাল, লবণ, তেল কোনো পণ্যের দামই আর সহনশীল অবস্থায় নেই।

মানুষের শান্তি নেই, নিরাপত্তা নেই, রাস্তায় শান্তিতে বের হতে পারে না।  

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা নিশ্চিত থাকুন, পরিবর্তন আসছে, পরিবর্তন হবে, সত্য-সুন্দরের জয় হবে।

রোববার (১৩ আগস্ট) সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর ৫৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ ক্রীড়া উন্নয়ন পরিষদ।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তৈরির জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, যেখানে সবার সমান সুযোগ থাকবে। মানুষ তার মেধার বিকাশ ঘটাতে পারবে। সেখানে আজকে কিছু সংখ্যক মানুষের হাতে রাষ্ট্র দখল হয়ে গেছে। যারা এই রাষ্ট্রকে নিজেদের পৈত্রিক সম্পত্তি বিবেচনা করছে। এজন্য তারা সব ক্ষেত্র দখল করে নিয়েছে। গণতন্ত্র ছাড়া কখনো এগুলো ঠিক হবে না। অর্থাৎ, কোনো ফ্যাসিস্টের হাতে কখনো কোনো দেশের মঙ্গল হয় না, ধ্বংস হওয়া ছাড়া।

তিনি বলেন, কথায় আছে, ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। সেই বাতাসে কল নড়তে শুরু করেছে। এখন সারা দেশের মানুষ জেগে উঠেছে। দেশের মানুষ এক বাক্যে শেখ হাসিনার পতন চায়, এই সরকারের পতন চায়। তারা সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চায়। আমরা একটি মুক্ত, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাই, যেখানে সবার অধিকার নিশ্চিত হবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশের নির্বাচন নাকি এখন দেশে নেই, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলে গেছে। প্রধানমন্ত্রী আবার বলেছেন, বিএনপির সঙ্গে বাইরের কোনো শক্তি নেই। এসব কথা বলার উদ্দেশ্য, তারা (সরকার) কতটা ভয় পেয়েছে, কতটা সন্ত্রস্ত হয়ে গেছে! আজ সব জায়গা থেকে বলা হচ্ছে, আপনাকে (শেখ হাসিনা) সুন্দর, সঠিক নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হবে। এই কারণে তারা এসব কথা বলতে শুরু করেছে।

বিএনপি মানুষের শক্তিতে বিশ্বাস করে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিএনপির গণতান্ত্রিক রাজনীতি আজ আন্তর্জাতিক বিশ্বে সমাদৃত হয়েছে।

দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, ডব্লিউএইচও বাংলাদেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে হাই অ্যালার্ট জারি করেছে। মানে সবচেয়ে উঁচু একটি সতর্কবার্তা দিয়েছে। প্রতিদিন ১০-১৪ জন করে মারা যাচ্ছেন। কিন্তু সরকারের কথা শুনে একবারও মনে হয় না, এ বিষয়ে তাদের উদ্বেগ আছে। জেলখানায় আমরা যেভাবে সারিবদ্ধভাবে শুয়ে থাকি, তেমনি মুগদা হাসপাতালের মেঝেতে শিশুরা শুয়ে আছে। সেখানে তাদের চিকিৎসা হচ্ছে। এত উন্নয়ন, মেগা প্রজেক্ট, তারপরও কেনো শিশুরা সঠিক চিকিৎসা পাবে না? কারণ একটাই, শেখ হাসিনার সরকারের জনগণের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই।

আওয়ামী লীগকে কূটকৌশলী ও ভয়াবহ আখ্যা দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার একটি বাড়িতে হঠাৎ করে জঙ্গিবিরোধী অভিযান হয়েছে। সেখান থেকে ছয় নারী, চার শিশু ও চার পুরুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সঙ্গে নাকি তিন কেজি বিস্ফোরক পাওয়া গেছে। হঠাৎ করে এগুলো কোত্থেকে এল? কারা আনল? কীভাবে আনল? যখন আন্দোলন চরমে থাকে, তখন জঙ্গি নাটক অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যেকবার, প্রতিটি ক্ষেত্রে এটি হয়। এখন দেখবেন, জঙ্গির কথা বলে বলে মানুষকে ডাইভার্ট করবে। তাদের দৃষ্টি সরিয়ে নেবে। পশ্চিমা বিশ্বকে আবার জুজুর ভয় দেখাবে। বলবে, এই দেখো, বাংলাদেশে আমরা যদি না থাকি, তাহলে জঙ্গি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। এভাবে নাটক করতে করতে তারা (আওয়ামী লীগ) এই জায়গায় এসেছে।

আরাফাত রহমান কোকোর কথা স্মরণ করে ফখরুল বলেন, আরাফাত রহমান কোকোর পরিচয়টি একটু ভিন্ন রকম। তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য যিনি সবচেয়ে বেশি সংগ্রাম করেছেন এবং এখনো করে চলেছেন, সেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পুত্র। এটি না হয়ে, তিনি যদি শুধু আরাফাত রহমান কোকো হতেন, তাহলে তার প্রতি অবিচারটা কম হতো। তার প্রতি যে অবিচার হয়েছে, এবং তিনি যেভাবে চলে গেছেন এর একমাত্র কারণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা।

তিনি বলেন, এই জাতির দুর্ভাগ্য, আমরা আমাদের বরেণ্য সন্তানদের সম্মান করতে জানি না, কৃতিত্ব দিতে চাই না। রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে অনেক যোগ্য মানুষ তাদের পাওনা থেকে বঞ্চিত হন। আরাফাত রহমান কোকো তেমন একজন ক্রীড়া সংগঠক, যাকে তারা প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত করেছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তার করুণ মৃত্যুবরণ হয়েছে। তিনি মৃত্যুর সময় সঠিক চিকিৎসাটুকুও পাননি।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ জানিয়ে ফখরুল বলেন, পৃথিবীর অন্য কোনো দেশ হলে সরকার নিজে উদ্যোগ নিয়ে বিদেশে পাঠাত। ডাক্তাররা বারবার বলছেন, তার চিকিৎসা এখানে আর সম্ভব নয়। তার যে চিকিৎসা প্রয়োজন সেটা উন্নত দেশে, উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে করতে হবে। এরা (সরকার) এমন একটি প্রতিহিংসার জায়গায় চলে গেছে যে, এরা মনে প্রাণে প্রতি মুহূর্তে চায় বেগম জিয়া মারা যাক। দেশের আত্মাটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

বাংলাদেশ ক্রীড়া উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলম, বাংলাদেশ ক্রীড়া উন্নয়ন পরিষদের যুগ্ম মহাসচিব শহীদুজ্জামান শহীদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল আলম, বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক সজল প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২৩
এসসি/আরএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।