ঢাকা: বর্তমান আওয়ামী লীগের সরকারের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক এবং তেল গ্যাস বিদ্যুৎ জ্বালানি বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ।
শুক্রবার (১৮ আগস্ট) সন্ধ্যায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট আয়োজিত ‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের পদত্যাগসহ ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষে’ আয়োজিত সমাবেশে থেকে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আনু মুহাম্মদ বলেন, ২০০৮ সালে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচিত হয়েছে। বিভিন্ন সমস্যা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালের নির্বাচন বর্তমান মান অনুযায়ী সবাই গ্রহণ করেছিল। যদিও আমরা আরও বেশি গণতান্ত্রিক নির্বাচন চাই। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছে।
তেল-গ্যাস বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব বলেন, মানুষের ভোটের প্রতি আওয়ামী লীগ সরকার মর্যাদা দেয়নি। মর্যাদা দিলে আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াগুলোকে শক্তিশালী করতো, শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার করতো, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিত। বাংলাদেশের এ কমিশনগুলো একটিও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। সবগুলো কমিশন দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালে কোনো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়নি, ২০১৮ সালে কোনো নির্বাচন হয়নি। সেই হিসেবে আমরা বলতে পারি ২০০৮ সালের পর যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে ২০২৩ সালে এসে সেই সরকারের বৈধতা থাকতে পারে না। সেই কারণে এ সরকার মেয়াদোত্তীর্ণ সরকার। তার মেয়াদ অনেক আগে পার হয়ে গেছে। তার মেয়াদ আর নেই। অতএব সেই সরকার পদত্যাগ করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী কাঠামো তৈরি করার দাবি, যদিও গণতন্ত্রের জন্য যথেষ্ট নয়, তবে একটি ন্যুনতম দাবি। এ দাবি এখনও পূরণ হয়নি বলে তারা যা খুশি তাই করতে পারছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সবগুলো ব্যাংক লুট হয়ে গেছে। হাজার লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। বাংলাদেশে যত ধরনের নির্মাণ কাজ করা হয়েছে, ঢাকা মাওয়া সড়ক থেকে শুরু করে বিভিন্ন সড়ক পৃথিবীর সব থেকে ব্যহবহুল সড়ক। এর অর্থ হচ্ছে এখান থেকে দুর্নীতি হচ্ছে, পাচার হচ্ছে। প্রত্যেকটি নির্মাণ কাজ সাবকন্টাক্ট, সাব কন্টাক্ট এবং সাব কন্টাক্ট। চীনা, কোরিয়ান কিংবা জাপানি কনস্ট্রাকশন কোম্পানি কাজ নিচ্ছে, সেখান থেকে সাব কন্টাক্ট আওয়ামী লীগ, যুবলীগ নিচ্ছে। এটির পরিণতি কি হয়, সেটি আপনারা রেল লাইনের ঘটনায় দেখতে পান। রেললাইন এবং সড়ক সব ভেঙে যাচ্ছে যেগুলো কয়দিন আগে নির্মাণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সবগুলো মন্ত্রণালয় ভয়ংকর রকমের কমিশন খোর এবং চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী এবং দুর্নীতিবাজদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। চিকিৎসা খাতে একটা ভয়ংকর নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হয়েছে। শিক্ষা বাণিজ্যিকরণ হচ্ছে। সরকার বলছে বিশ্ব ব্যাংকের কথা শুনি না, কিন্তু বিশ্ব ব্যাংকের কাঠামোতেই বর্তমান অর্থনীতি চলছে। সরকারের সহযোগীরা হচ্ছে এর সুবিধাভোগী। এ আইনি এবং বেআইনির সম্মিলনে স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফ্যাসিবাদী রূপ নিচ্ছে, তার শিকার হচ্ছে বর্তমান সময়ের মানুষ।
সমাবেশে সূচনা বক্তব্য প্রদান করেন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কেন্দ্রীয় সমন্নয়ক এবং ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল রনি।
সমাবেশে বক্তব্য প্রদান করেন, তেল-গ্যাস বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব, সর্বজনের গবেষক মাহা মির্জা, ফ্যাসিবাদ বিরোধী বাম মোর্চার সভাপতি কমরেড জাফর, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সভাপতি জামশেদ আনোয়ার তপন, গণমুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি ফয়জুল হাকিম লালা, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি মন্টু ঘোষসহ গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কেন্দ্রীয় নেতারা।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২৩
আরকেআর/জেএইচ