ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

ইতিহাসের আরেকটি জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড ‘২১ আগস্ট’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০২৩
ইতিহাসের আরেকটি জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড ‘২১ আগস্ট’

ঢাকা: ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের ইতিহাসে আরেকটি জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটানো হয় ২১ আগস্ট।  

এটি ইতিহাসে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা হিসেবে পরিচিত হয়ে গেছে যা ইতিহাসের আরেকটি কলঙ্কিত অধ্যায়।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার টার্গেট করে এই গ্রেনেড হামলা চালানো হয়।

আজ সোমবার (২১ আগস্ট) সেই ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা দিবস। স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যার পর এই আগস্ট মাসেই আরেকটি রক্তাক্ত ও কলঙ্কিত ঘটনা ঘটানো হয়।  

এই দিন রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী’ শান্তিপূর্ণ সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৩ জনকে হত্যা করা হয়।  

এই গ্রেনেড হামলায় প্রধান টার্গেট ছিলেন তৎকালীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। ওই ভয়াবহ হামলায় শেখ হাসিনাসহ ৫ শতাধিক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ আহত হন।

১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে বহু বার হত্যার চেষ্টায় তার ওপর হামলা চালানো হয়। শেখ হাসিনার ওপর যত বার হামলা হয় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ছিল সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর।  

এই গ্রেনেড হামলাকারীদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততার তথ্য পরবর্তীতে বেরিয়ে আসে।  

এই মামলার রায়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবৎজীবন কারাদণ্ড হয় এবং তৎকালীন স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী লুৎফর জ্জামান বাবরসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।  
এই গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নারী নেত্রী আইভি রহমান গুরুতর আহত হন এবং পরে ২৪ আগস্ট তিনি হাসপাতালে মারা যান।

সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলা এবং তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের নির্যাতন-নিপীড়নের প্রতিবাদে ওই দিন বিকেলে এই সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশ ও শোভাযাত্রার আয়োজন করে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ।  

দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এই সমাবেশে খোলা ট্রাকের ওপর স্থাপিত উন্মুক্ত মঞ্চে বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।  

বক্তৃতা শেষে ৫টা ২২ মিনিট, শেখ হাসিনা সন্ত্রাসবিরোধী শোভাযাত্রার উদ্বোধন ঘোষণা করেন, ঠিক সেই মুহূর্তেই অতর্কিতে বৃষ্টির মতো গ্রেনেড এসে সমাবেশের উপর পড়তে থাকে। বিস্ফোরণের প্রচণ্ড শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গোটা বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, গুলিস্তান, পুরানা পল্টন ও এর আশপাশের এলাকা।  
গ্রেনেডের আঘাতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ক্ষত-বিক্ষত হন এবং অনেকে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। চারদিক থেকে সভাস্থলে গ্রেনেড এসে পড়তে থাকে। মুহূর্তের মধ্যে সমাবেশস্থল রক্তাক্ত হয়ে পড়ে, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ পরিণত হয় রক্ত আর মৃত্যুর জনপদে।  

শত শত মানুষের আর্তচিৎকার, ছড়িয়ে-ছিঁটিয়ে পড়ে থাকা ছিন্নভিন্ন দেহ, রক্ত আর বারুদের পোড়া গন্ধে পুরো এলাকা জুড়ে বীভৎস পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।  

এ সময় সেখানে দায়িত্ব পালনরত পুলিশ আহতদের সাহায্য করার পরিবর্তে ভীত-সন্ত্রস্ত এবং আহত মানুষের ওপর বেপরোয়া লাঠিচার্জ ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সেই হামলা থেকে প্রাণে  বেঁচে গেলেও গ্রেনেড বিস্ফোরণের প্রচণ্ড শব্দে তার শ্রবণশক্তি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গ্রেনেড বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাকে রক্ষা করার জন্য ট্রাকের ওপর মানববর্ম রচনা করেছিলেন আওয়ামী লীগের নেতারা।  

এই হত্যাযজ্ঞ থেকে দলের নেত্রীকে বাঁচাতে নেতাকর্মীরা মানবর্ম দিয়ে আড়াল করে তাকে দ্রুত গাড়িতে তুলে দেন।  

কিন্তু বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ থেকে তার ধানমণ্ডি বাসভবন সুধাসদনের দিকে যাওয়ার পথে শেখ হাসিনার বুলেট প্রুফ মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়িতেও ঘাতকরা অবিরাম গুলিবর্ষণ করে।

২১ আগস্টের এই ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় যারা নিহত হন, তারা হলেন - মোস্তাক আহমেদ সেন্টু, ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ, রফিকুল ইসলাম আদা চাচা, সুফিয়া বেগম, হাসিনা মমতাজ রীনা, লিটন মুন্সী ওরফে লিটু, রতন সিকদার, মো. হানিফ ওরফে মুক্তিযোদ্ধা হানিফ, মামুন মৃধা, বেলাল হোসেন, আমিনুল ইসলাম, আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারী, আতিক সরকার, নাসিরউদ্দিন সরদার, রেজিয়া বেগম, আবুল কাসেম, জাহেদ আলী, মমিন আলী, শামসুদ্দিন, আবুল কালাম আজাদ, ইছহাক মিয়া এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরো দুজন।

আহতের মধ্যে ছিলেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি (দলের তৎকালীন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য) জিল্লুর রহমান, তৎকালীন সভাপতিমণ্ডলির সদস্য আমির হোসেন আমু, আব্দুর রাজ্জাক, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফ, সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথসহ দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিয়ে আহতদের অনেকে সুস্থ হলেও আবার অনেকেই বেঁচে আছেন পঙ্গুত্ব বরণ করে।

বাংলাদেশ সময়: ২৪০০ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২৩
এসকে/এমএম/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।