ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

চোখের জলে বিদায় নিলেন আল মামুন সরকার

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২, ২০২৩
চোখের জলে বিদায় নিলেন আল মামুন সরকার

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: চোখের জলে বিদায় নিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রাজনীতিতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আল মামুন সরকার।

সোমবার (০২ অক্টোবর) বাদ আছর ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে নামাজে জানাজা ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা শেষে শহরের শেরপুর কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়।

 

এরআগে, তার জানাজায় অংশ নেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহম্মদ হোসেন, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, বিমান প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন (অবঃ) এ,বি তাজুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ফয়জুর রহমান বাদল, কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি। এছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা ও নানা শ্রেণি পেশার মানুষ।  

নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন জেলা জামে মসজিদের খতিব মাওলানা সিবগাহতুল্লাহ নূর।

এরআগে, জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম ও পুলিশ সুপার মো. শাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে প্রশাসনের একটি বিচক্ষণ দল মহান মুক্তিযুদ্ধে অনবদ্য ভূমিকা রাখা এই ব্যক্তিত্বকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানান। এ সময় বিউগলের করুণ সুরে যেন আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। জানাজা শেষে বর্ষীয়ান এই নেতাকে চির বিদায় জানাতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয়। সেখানে আনুষ্ঠানিকতা শেষে শহরের শেরপুর কবরস্থানে মায়ের কবরের পাশে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।  

আল-মামুন সরকারের সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত

যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আল-মামুন সরকার ১৯৫৪ সালের ১লা মার্চ তৎকালীন সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের আদমপুর আয়নাডোবা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। স্বাধীনতার পর তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের ছাত্র হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েট (বি.এ.পাস) ডিগ্রি অর্জন করে শিক্ষা জীবনের ইতি টেনে সার্বক্ষণিক রাজনীতি ও সমাজসেবায় আত্মনিয়োগ করেন। শিক্ষাজীবন শেষে ব্যক্তিগত জীবনে তিনি উপার্জনমুখী চাকরি, ব্যবসা বা অর্থ উপার্জনকারী কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত না হয়ে সার্বক্ষণিক রাজনীতি ও সমাজসেবায় আত্মনিয়োগ করেন। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রাপ্ত রাষ্ট্রীয় সম্মানী ভাতা, রেশন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তিনি সাধারণভাবে পারিবারিক জীবিকা নির্বাহ করেন।

১৯৬৯ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগে যোগদানের মধ্য দিয়ে ছাত্র রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সূচনাপর্বে মার্চের অগ্নিঝরা দিনগুলিতে তৎকালীন স্কুল পর্যায়ে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক হিসেবে তিনি পৌর এলাকার প্রতিটি স্কুলে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করেন। অতঃপর ২৬ মার্চে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি প্রথমে ৪র্থ ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এবং এপ্রিল থেকে ২য় ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে ১৭ বছর বয়সে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তিনি ৩ নম্বর সেক্টরের ১৪৭ নম্বর ‘গেরিলা ট্রুপস কমান্ডার’ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে একাধিক দুঃসাহসিক অপারেশন পরিচালনা করেন। যুদ্ধে তিনি একাধিকবার গুরুতর আহত হয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ’ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কমান্ডের প্রথম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মুক্তিযুদ্ধের পর মহকুমা ছাত্রলীগের কোষাধ্যক্ষ, পরবর্তীতে পরপর দুইবার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, জেলা কৃষক লীগের আহ্বায়ক, ২০০৪ সাল থেকে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এবং বর্তমানে সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি রাজনৈতিক কারণে একাধিকবার কারাবরণ করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০২৩
এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।