ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

ঘর পোড়ে গরিবের, টিন পান মন্ত্রীর আত্মীয়!

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০২৩
ঘর পোড়ে গরিবের, টিন পান মন্ত্রীর আত্মীয়!

লালমনিরহাট: সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ব্যাপারে ‘হাটে হাঁড়ি ভেঙে’ দিয়েছেন তারই আপন ছোট ভাই মাহবুবুজ্জামান আহমেদ।  

তিনি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।

 

মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) রাতে কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা উত্তর বাংলা কলেজ মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর বিভিন্ন গোপন তথ্য ফাঁস করেন তিনি।  

মন্ত্রীর উদ্দেশে মাহবুবুজ্জামান আহমেদ বলেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে গত মাসে দুইটা রিকশা দিয়েছে। যার একটা দিয়েছেন আপনার (মন্ত্রী) বাড়ির পাহারাদার জমিরকে আর একটা দিলেন আপনার ছেলের পাকোয়ানি (বাবুর্চি)  ইদ্রিসকে। আর গরিব লোক ছিল না? ৫০ কোটি, ১০০ কোটি টাকার চেক দিয়েছেন গরিব অসহায় ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসায়। সেই চেক কে পেলেন? আমিনগঞ্জের বজলুর প্রফেসর আর আদিতমারীর রাজ্জাক মাস্টার পান গরিব ক্যান্সার রোগীর চেক।

মাহাবুবুজ্জামান বলেন, গরিব মানুষের বাড়ি পুড়ে গেলে ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে টিন দেওয়া হয়। সেই টিন পান আমার- আপনার (মন্ত্রী) জেঠাত ভাই নজরুল মাস্টার আর কেচু মাস্টার। এরা গরিব অসহায়?  

কালীগঞ্জের রুদ্বেশ্বরে দক্ষতা উন্নয়নের অফিস হবে। তার জন্য গরিব কৃষকদের কাছ থেকে মন্ত্রী জমি কিনলেন চার/পাঁচ লাখ টাকায়। সেই জমি রেজিস্ট্রি হলো ওনার (মন্ত্রী) ভাতিজা, ফুপাত ভাই হেলাল, মোস্তফা ফারুকদের নামে। কিনল পাঁচ লাখে, লিখে নিল ৩০ লাখ টাকায়। সবাই মিলে ৩০ লাখ ভাগ করে নিল। সরকারের টাকা গরিব কৃষকরা পেলে দুঃখ ছিল না।  

এসময় মানুষের সঙ্গে প্রতারণা না করতে মন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান মাহাবুবুজ্জামান।  

তিনি আরও বলেন, গোপন ফাঁস করে দেই। আপনি (মন্ত্রী) নৌকা নিয়েছেন না! নৌকায় ভিড়তে পারবেন না। কারণ ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আপনি (মন্ত্রী) নৌকা পুড়িয়েছেন। নৌকা আপনাকে মান করবে না। আমার ব্যারিস্টার ছেলের বিয়েতে দাওয়াত করেছি। তিনি (মন্ত্রী) সোজা বলেছেন, ‘আমি যাব না, কাউকে যেতেও দেব না। ’ ছেলের বিয়েতে কাউকে আসতে দেননি। উল্টো বিয়ের দিন বিদ্যুৎও বন্ধ করে দিয়েছেন। আপনি (মন্ত্রী) কেন এমন হলেন? ছেলে আর বউ মিলে আপনার মাথা নষ্ট করে দিয়েছে।  

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মাহবুবুজামান আহমেদ বলেন, ভোটমারী থেকে মহিষখোচা পর্যন্ত তিস্তা নদীতে বাঁধ দিতে চেয়ে মন্ত্রী দেননি। তার একটাই জবাব, আপনি (মন্ত্রী) বাঁধ দেননি, আমরা আপনাকে বাদ (বয়কট) দিলাম।  

পরে মঞ্চে থাকা আসন্ন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল হককে দেখিয়ে তার ঈগল প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

কর্মী সভায় লালমনিরহাট-২ আসনের আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি সিরাজুল হক, আদিতমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস, ভাদাই ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান কৃষ্ণকান্ত রায় বিদুর, কমলাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদ ওমর চিশতি ও সারপুকুর ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবিরসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।  

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী কালীগঞ্জ) আসনে নৌকা প্রতীকে ভোট করছেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ। তার শক্ত প্রতিপক্ষ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সিরাজুল হক আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীকে ভোট করছেন। মন্ত্রীর ছোট ভাই মাহাবুবুজামান আহমেদ বড় ভাইয়ের নৌকা ডোবাতে মরিয়া হয়ে ঈগল প্রতীকের পক্ষে প্রকাশ্যে মাঠে নেমেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।