ঢাকা, রবিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

দেশের নারীরা অবহেলিত-নির্যাতিত: খসরু

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১১ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০২৪
দেশের নারীরা অবহেলিত-নির্যাতিত: খসরু

ঢাকা: দেশের নারীরা আজ অবহেলিত ও নির্যাতিত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

শুক্রবার (০৮ মার্চ) সাড়ে ১০টায় নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সংক্ষিপ্ত সমাবেশে উপস্থিত থেকে এ কথা বলেন তিনি।

সমাবেশের পর সংগঠনটির নেতাকর্মীরা র‌্যালি বের করলে পুলিশি বাধায় সেটি পণ্ড হয়।

সমাবেশে বিশ্ব নারী দিবসে দেশের নারী সমাজকে অভিনন্দন জানিয়ে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আজ দেশের নারীরা অবহেলিত ও নির্যাতিত। এমন কোনো দিন নেই, এমন কোনো মাস নেই, এমন কোনো সপ্তাহ নেই, যে নারীর ওপর নির্যাতন হয়নি। দেশের নারীদের ওপর নির্যাতন চলছে, ধর্ষণ চলছে। ’

তিনি বলেন, তার চেয়ে বড় দুঃখের ও কষ্টের বিষয় হচ্ছে, এই ধর্ষণের ব্যাপারে কোনো বিচারের প্রয়োগ আমরা দেখতে পাচ্ছি না। কারণ, এই ধর্ষণের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের অনেকে জড়িত। তাদের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারা জড়িত। আরও দুঃখের বিষয় এই বিষয়ে যারা নারীবাদী হিসেবে পরিচয় দেন, যারা নারীদের পক্ষে কাজ করে বলে জানান। কিন্তু তারা খুব একটা সোচ্চার হচ্ছেন না। কারণ, তারাও ভয়-ভীতির পরিবেশের মধ্যে আছেন। নারীদের ওপর ধর্ষণের বিষয়ে কেউ মুখ খুলে কথা বলছে না। ’

তিনি আরও বলেন, সারা দেশে ভয়-ভীতির একটা পরিবেশ বিরাজ করছে। কেউ মুখ খুলতে চাচ্ছে না। বাংলাদেশে দখলের রাজনীতি চলছে, সিলেকশনের রাজনীতি চলছে। গতকাল হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ পর্যন্ত যে দখল প্রক্রিয়া চলেছে, তা আপনারা ইতোমধ্যে দেখেছেন। আইনজীবীদের ভোট হচ্ছে। সেখানে দখল করার কী আছে? সারা দেশে জনগণের ভোট তো দখল হয়ে গেছে। এখন আইনজীবীদের ভোটও দখল করতে হবে? এখন ব্যবসায়ীদের ভোটও দখল করতে হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে এই যে দখলের প্রতিক্রিয়া এটা শুধু নারী নয়, বাংলাদেশের নাগরিকরা বঞ্চিত হচ্ছে, তাদের সব অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে।

এই অবস্থার উত্তরণে নারী সমাজকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আমীর খসরু বলেন, আগামী দিনের বাংলাদেশ যদি আমরা নারীদের ক্ষমতায় রাখতে চাই প্রথমে বাংলাদেশের নাগরিকদের ক্ষমতায়ন করতে হবে। দেশের নাগরিকরা যদি অধিকারহীন হয়ে যায়, ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়, তাহলে নারীদের ক্ষমতায়নের সুযোগ থাকবে না, কারও ক্ষমতায়নের সুযোগ থাকবে না।

তিনি বলেন, একমাত্র দেশের সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক অধিকার, দেশের মানুষের নাগরিক অধিকার যদি ফিরে পাওয়া না যায়, তাহলে এখন যে অবস্থা আছে সেখান থেকে উঠে আসার কোনো সুযোগ নেই। তাই নারী-পুরুষ সবাই মিলে একত্রে প্রথমে আমাদেরকে নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। নারীদের ক্ষমতায় সেখান থেকে শুরু করা যাবে।

এ সময় বাংলাদেশে নারীদের ক্ষমতায়নে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার যুগান্তকারী পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস। তিনি বলেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক যে আজকে নারী দিবস। সেখানে পুলিশ নারীদের একটা শান্তিপূর্ণ মিছিল করতে দিল না। দেশের নারী সমাজ কেমন আছে, এটাই তার প্রমাণ। আজকে আমাদের শান্তিপূর্ণ র‌্যালি পণ্ড করে দেওয়ার ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

তিনি আরও বলেন, আমরা চাই, নারী সমাজ মিলে যেন দেশ ও সমাজকে বদলে দিতে পারি। যে সমাজে আমরা রুখে দাঁড়াতে পারব, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারব, সবাই মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব এবং নারীদের পক্ষে দাঁড়াতে পারব, সেই সমাজ আমরা চাই। আমাদের দেশনেত্রী খালেদা জিয়া যে আন্দোলন করতেন তার একটাই দাবি ছিল, দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও।

আফরোজা আব্বাস বলেন, আজকে আমরা কোথায় আছি? আমরা দেশকে বাঁচাতে পারছি না, মানুষকেও বাঁচাতে পারছি না। আজকে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া তিল তিল করে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। আসুন আমরা আজকের দিনে সবাই মিলে প্রতিজ্ঞা করি, আমরা দেশ বাঁচাব, মানুষ বাঁচাব। আমরা নারী, আমরাই পারি। আসুন আমরা সবাই মিলে এক কাতারে দাঁড়িয়ে এমন প্রতিজ্ঞা করি যেন দেশনেত্রীর মতো আমরাও বলতে পারি দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও। ’

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এই রকম দাম আগে কখনও ছিল না। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে ছিল, স্থিতিশীল ছিল।

দেশের বর্তমান অবস্থা পরিবর্তনে মহিলা দলের কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মহিলা দলের প্রধান বলেন, আজকে আমরা শপথ নিতে চাই, আমরা দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব, নারীর অধিকার ফিরিয়ে আনব, দেশ বাঁচাব, মানুষ বাঁচাব, নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করব।

এদিকে, র‍্যালিতে বাধা দেওয়া প্রসঙ্গে পুলিশের নারী শাখার এডিসি ফারজানা ইয়াসমিন সাংবাদিকদের বলেন, তারা সমাবেশ করেছেন, বক্তব্য দিয়েছেন। সেখানে আমরা বাধা দেইনি। যতটুকু অনুমতি ছিল, সেটা আমরা করতে দিয়েছি।

কেন র‌্যালি করতে দিলেন না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের বক্তব্য দেওয়ার অনুমতি ছিল, দিয়েছেন। আজকে জুম্মার সময় গাড়ি চলাচল করছে। এই র‌্যালি করতে দিলে যানবাহন চলাচলের সমস্যা সৃষ্টি হবে। সেজন্য আমরা সেটা করতে দেইনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০২৪
টিএ/এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।