ঢাকা, সোমবার, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

ছাত্রহত্যায় জড়িত ‘কর্মকর্তা-উস্কানিদাতাদের’ বিচার দাবি জাতীয় পার্টির

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২১ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০২৪
ছাত্রহত্যায় জড়িত ‘কর্মকর্তা-উস্কানিদাতাদের’ বিচার দাবি জাতীয় পার্টির

ঢাকা: কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় ছাত্র হত্যাকাণ্ডে জড়িত সব ‘সরকারি কর্মকর্তা’ ও উস্কানিদাতাকে আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। তারা অভিযোগ করেছে, আন্দোলনরতদের গ্রেপ্তারের নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী ‘গ্রেপ্তার বাণিজ্য’ চালাচ্ছে।

রোববার (২৮ জুলাই) বিকেলে জাতীয় পার্টির জরুরি যৌথ সভা শেষে ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলা হয়। পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদেরেরর সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্তগুলো গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরেন দলের মহাসচিব সংসদ সদস্য মো. মুজিবুল হক চুন্নু।

যৌথসভার সিদ্ধান্ত ও দাবিগুলো উপস্থাপন করে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন,
১. জাতীয় পার্টির এই যৌথসভা সর্বসম্মতভাবে ছাত্রদের অধিকার আদায়ের বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনের প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন জ্ঞাপন করে। সেইসঙ্গে চলমান অহিংস ছাত্র আন্দোলনের প্রতি জাতীয় পার্টির সমর্থন অব্যাহত থাকবে বলে জানায়।

২. সভায় ছাত্রদের অহিংস আন্দোলনে নিহত ছাত্র-জনতার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে পরিবার-পরিজনের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়।

৩. এই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ন্যায্য দাবি শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে দমনের প্রক্রিয়ার তীব্র নিন্দা জানানো হয় জাপার পক্ষ থেকে।

৪. সভায় ছাত্র আন্দোলনের নিহত আবু সাইদসহ শহীদদের মামলার এজাহারে প্রকৃত মৃত্যুর কারণ না দিয়ে মিথ্যা এজাহার দাখিলের নিন্দা জানানো হয়।

৫. নিহত ছাত্র-ছাত্রীরা ‘বীর মুক্তিসেনা’ হিসেবে আখ্যায়িত হবে এবং একটি নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের মাধ্যমে প্রকৃত শহীদের তালিকা প্রকাশ করার দাবি জানানো হয় সভায়।

৬. সভায় ছাত্রহত্যার সঙ্গে জড়িত সব সরকারি কর্মকর্তা ও উস্কানিদাতাকে আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দাবি তোলা হয়।

৭. সভা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের হয়রানি/নির্যাতন না করার আহ্বায় জানায়। ছাত্রদের নামে দায়ের সব মামলা প্রত্যাহার করারও আহ্বান জানায় এবং কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গ্রেপ্তার সব ছাত্র ও নেতাকে অনতিবিলম্বে মুক্তির দাবি করা হয় সভায়।    

৮. জাতীয় পার্টির এই সভা ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের পরিবার-পরিজনকে সম্মানজনক ক্ষতিপূরণ প্রদান ও আহতদের সুচিকিৎসা দাবি করে।

৯. এই সভা অনতিবিলম্বে দেশের ইন্টারনেটসহ সব সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম খুলে দেওয়ার আহ্বান জানায়।

১০. এই সভা সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করে। সভা মনে করে, কেপিআইভুক্ত স্থাপনাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। সরকার এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। এই দায় সরকার এড়াতে পারে না।

১১. সভা মনে করে অনতিবিলম্বে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে। সেই সঙ্গে প্রকৃত ছাত্রদের হল প্রশাসনের মাধ্যমে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে এবং ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সহিংসতায় নিহত ও আহত সাংবাদিকদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন জাতীয় পার্টি মহাসচিব। মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন আছে। আন্দোলনরত ছাত্ররা রাজনৈতিক দলগুলোকে সরাসরি পাশে চায়নি বলেই আমরা তাদের সঙ্গে মাঠে ছিলাম না। কিন্তু গেল সংসদ অধিবেশনের সমাপনী বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদের এমপি দীর্ঘ ১০ মিনিট কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বক্তৃতা করেন।  

অপর এক প্রশ্নের জবাবে চুন্নু বলেন, সহিংসতার নামে সরকারি বিভিন্ন স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের দায় স্বীকার করে চলে যাওয়া উচিত। কোনো মন্ত্রী বা এমপির বাড়িতে তো হামলা হয়নি। সেখানে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু সরকারি স্থাপনাগুলো রক্ষায় তাদের কোনো উদ্যোগ ছিল না। আন্দোলনরতদের গ্রেপ্তারের নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী গ্রেপ্তার-বাণিজ্য চালাচ্ছে।

সভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ফয়সল চিশতী, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এমপি, অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর সিকদার লোটন, মেজর (অব.) রানা মো. সোহেল, মো. জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, জহিরুল আলম রুবেল, একেএম মোস্তাফিজুর রহমান, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মনিরুল ইসলাম মিলন, মো. খলিলুর রহমান খলিল, মেজর (অব.) সিকদার আনিসুর রহমান, মেজর (অব.) মো. মাহফুজুর রহমান, যুগ্ম-মহাসচিব মো. সামছুল হক, সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন মঞ্জু, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হুমায়ুন খান, কাজী আবুল খায়ের, সৈয়দ ইফতেকার আহসান হাসান, জাতীয় যুবসংহতির সাধারণ সম্পাদক আহাদ ইউ চৌধুরী শাহীন, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিরু, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হেলাল উদ্দিন, জাতীয় ছাত্র সমাজের সভাপতি আল মামুন।  

উপস্থিত ছিলেন কো-চেয়ারম্যান সালমা ইসলাম এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এমপি, গোলাম কিবরিয়া টিপু এমপি, সৈয়দ মো. আব্দুল মান্নান, নাসরিন জাহান রতনা, সৈয়দ দিদার বখত্, নাজমা আখতার, মো. আতিকুর রহমান আতিক, শেরীফা কাদের।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০২৪
এসএমএকে/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।