ঢাকা: নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিজয় ছিনিয়ে নিতে নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে। তাদের ফাঁদে পা দিয়ে কেউ আইন হাতে তুলে নেবেন না।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গুলশানের বাড্ডা থানা বিএনপি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯ নিহত ও ৪০ আহতের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা উপহার তুলে দেন তিনি। এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এম এ কাইয়ূম। এ সময় নেতৃবৃন্দ আন্দোলনে আহতদের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেন। ভবিষ্যতেও তাদের আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত তারেক রহমান সব সময় চিন্তা করেন। তার নির্দেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হতাহতদের জন্য ডাটাবেজ করা হয়েছে। সারা দেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ডাটাবেজে যুক্ত করা হচ্ছে। দলের পক্ষ থেকে হতাহতদের পরিবারের কাছে যাওয়া হচ্ছে। তাদেরকে দলের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা করা হচ্ছে। আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। প্রতিদিনই দলের পক্ষ থেকে এই কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হতাহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, আন্দোলনে আহত-নিহতদের জন্য সরকার কিছু আর্থিক অনুদানের ঘোষণা দিয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকেও পরিবারদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু অর্থের পরিমাণ দিয়ে তাদের ত্যাগের মূল্য দেওয়া যাবে না। এই পরিরর্তীত দেশের জন্য তাদের মর্যাদা অতুলনীয়।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের কথা তুলে ধরে নজরুল ইসলাম খান বলেন, সেদিন আমি কারাগারে। যখন খবর এলো স্বৈরাচারী খুনি শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে। তখন কারাগারে আনন্দের মিছিল শুরু হলো। কে কোন মামলার আসামি তার কোনো ঠিকানা নেই। সবার স্লোগানে-স্লোগানে প্রকম্পিত হলো কারাগার। সবার চোখে মুখে নতুন স্বাধীনতার উচ্ছ্বাস ফুটে ওঠে। সেদিন যদি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান না হতো তাহলে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পেত না। আমিও কারাগার থেকে মুক্তি পেতাম না। এম এ কাইয়ুমও নির্বাসিত জীবন থেকে মুক্তি পেয়ে আজ আমাদের মাঝে ফিরে আসত না। তাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নিহত-আহতদের পরিবারের প্রতি আমরা চিরকৃতজ্ঞ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সভাপতি এম এ কাইয়ুম বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কঠোর নির্দেশনা অক্ষরে-অক্ষরে পালন করতে হবে। জুলুম দখলবাজি চাঁদাবাজি করে আওয়ামী লীগ। তাই আপনারা জুলুম দখলবাজি চাঁদাবাজি করবেন না। তারেক রহমান জুলুম দখলবাজি চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, গত ১৭ বছর ধরে গণতান্ত্রিক আন্দোলন আমরা করেছি। কিন্তু সফলতা পাইনি। এই সফলতা এনে দিয়েছে ছাত্র-জনতার দুনিয়া কাঁপানো অভ্যুত্থান। যারা জীবন দিয়ে আমাদের নতুন করে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, তাদের পরিবারের প্রতি আমাদের সম্মান শ্রদ্ধা জানাতে হবে। তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাদেরকেও সুফল পাওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে।
কাইয়ুম বলেন, যারা স্বল্প পুঁজিতে ব্যবসা করে তাদেরকেও চাঁদা দিতে হয়। আর যেন চাঁদা দিতে না হয়। এ জন্য আমাদেরকে সচেতন থাকতে হবে। নিজেদের মধ্যে কেউ চাঁদাবাজি দখলবাজি করবেন না। কারণ, আওয়ামী লীগ চাঁদাবাজি দখলবাজি করেছে, তাদের আর আমাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকবে না। এসব থেকে বিরত থাকতে হবে। ভালো কাজ করে দেখিয়ে দিতে হবে বিএনপির লোকজন অন্যায় মেনে নেয় না। আর যদি কেউ এসব কাজে জড়িত হন তাহলে সাংগঠনিকভাবে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত পরিবারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দেওয়া হয়। বিএনপি সরকার অথবা যে সরকারই আসুক আগামীতে এই শহীদ পরিবারকেও মূল্যায়ন করতে হবে। সেজন্য শহীদ পরিবার মামলা করবেন। মামলার কাগজ ছবি সংগ্রহে রাখবেন। সরকার যখন মূল্যায়ন করবে, তখন যেন এই কাগজ ও ছবিগুলো দিয়ে প্রমাণ করা যায়। তাদের জীবনদানের প্রতি সম্মান রাখতে হবে। তাহলে আজকের বিজয়ও সার্থক হবে।
বাড্ডা থানা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আব্দুল কাদের বাবুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এ জি এম শামসুল সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আতাউর রহমান, নগর নেতা ফয়েজ আহমেদ ফরু, নগর নরতা তুহিরুল তুহিন, নগর নেতা জাহাঙ্গীর মোল্লা, নগর নেতা মাহফুজ চেয়ারম্যান, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা হাজি হারুন অর রশিদ, এমদাদুল হক এমদাদ ও বাড্ডা থানা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক মো. ফয়সাল হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৪
টিএ/এমজে