ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

জামায়াত নেতাদের ফাঁসির আদেশ পাশের দেশ থেকে লেখা হয়েছে: মাওলানা রফিকুল

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০২৪
জামায়াত নেতাদের ফাঁসির আদেশ পাশের দেশ থেকে লেখা হয়েছে: মাওলানা রফিকুল

সিরাজগঞ্জ: জামায়াতে ইসলমীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মো. রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, জামায়াত নেতাদের ফাঁসির আদেশ পাশের দেশ থেকে লিখে এনে ট্রাইব্যুনালে বসিয়ে শুনিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বিচারের জন্য হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে লাঠিয়াল বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছে।

এক বিচারপতি টকশোতে এসে আস্ফালন করে বলত, আজ নিজামীর ফাঁসি দিলাম, আজ মুজাহিদের ফাঁসি দিলাম। আজ সিলেটের বর্ডারে জঙ্গলের ভেতরে কলাপাতা গায়ে দিয়ে ছিলেন তিনি। পাবলিক তাকে গলায় গামছা বেঁধে ধরে এনেছে। এরা এতো অন্যায় করেছে, একেকজনের ১০ বার ফাঁসি দিলেও তাদের শাস্তি কম হবে।  

তিনি বলেন, সরকারের কাছে আহ্বান জানাব, এ ট্রাইব্যুনালে যারা বিচার করেছেন, যারা শাস্তি দিয়েছেন, যারা সহযোগিতা করেছে,ন তাদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। মিথ্যা মামলা, মিথ্যা সাক্ষী দিয়ে নিজামী সাহেব, মুজাহিদ সাহেবকে যারা ফাঁসি দিয়েছেন, তাদের কারোরই ক্ষমা নেই এ বাংলার মাটিতে।  

বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে সিরাজগঞ্জ শহরের বাজার স্টেশন মুক্তির সোপান এলাকায় ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠা হামলায় নিহতদের স্মরণে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত যতগুলো হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, সে খুনিদের গ্রেপ্তার করে ট্রাইব্যুনালে বিচারের আওতায় এনে শাস্তি কার্যকর করতে হবে।  

মাওলানা রফিকুল বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতা নেওয়ার পরই বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে নির্বিচারে হত্যা করেন। এরই মধ্যে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা সংবাদ সম্মেলন করে শেখ হাসিনাকে দায়ী করতে শুরু করেছেন। তাদের প্রথম টার্গেট ছিল সেনাবাহিনীকে দুর্বল করা। দ্বিতীয় টার্গেট ছিল ইসলামী শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করা। এজন্য মাওলানা নিজামীসহ জামায়াতের নেতৃবৃন্দকে বিচারের নামে তামাশা করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমার নামও দেওয়া হয়েছিল। বয়স কম হওয়ায় পরে তারা বাদ দিয়েছে। এ তালিকা এসেছে প্রতিবেশী দেশ থেকে। তারা মানুষ দেখে তালিকা করে নাই, তালিকা করেছে পদ দেখে।  

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে তিনি বলেন, তিনি বলতেন আমি পালাই না, শেখের বেটি পালায় না। কিন্তু ঠিকই পালিয়ে গেছেন। গত সাড়ে ১৫ বছরে জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছে সবচেয়ে বেশি জামায়াত-শিবির। একটি দলের শীর্ষ স্থানীয় ১১ জন নেতাকে হয় ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, না হয় কারাগারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। ১৮ বছরে ছাত্রশিবিরের অনেক নেতাকে গুম করা হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে, চোখ তুলে নেওয়া হয়েছে, হাত কেটে দেওয়া হয়েছে। এ সিরাজগঞ্জেই ১৪ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। এরপরও জামায়াত-শিবিরের কোনো নেতা দেশ থেকে পালায় নাই।  

জামায়াত ক্ষমতায় এলে ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশ পরিচালনা করার দায়িত্ব পেলে ৫৬ হাজার বর্গ মাইলের বাংলাদেশে একজন সুন্দরী রমনী একা চলবে কোনো দুর্বৃত্ত তাকে নিপীড়ন করতে পারবে না। নারীদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস, ব্যাংক আলাদা থাকবে। নারীরা তাদের আব্রু নিয়ে রাস্তায় চলবে, চাকরি করবে, ব্যবসা করবে।  

হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা মনে করি বাংলাদেশে কোনো সংখ্যালঘু নেই। নাগরিক হিসেবে সবাই সমান। একজন মুসলমান যে অধিকার পাবেন, একজন অমুসলিমও সেই অধিকার পাবেন। ইসলামী রাষ্ট্র হলে অমুসলিমদের ধন-মান-ইজ্জত আব্রু ও নিরাপত্তার গ্যারান্টি দেবে ইসলামী সরকার।  

সিরাজগঞ্জ শহর জামায়াতের আমির মো. আব্দুল লতিফের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন- জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার আমির অধ্যক্ষ মাওলানা মো. শাহীনুর আলম।
 
শহর জামায়াতের আমির মাওলানা মো. মোস্তফা মাহমুদের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন- জেলা জামায়াতে ইসলামী জেলা নায়েবে আমির অধ্যক্ষ আলী আলম, মাওলানা মো. আব্দুস ছালাম, সেক্রেটারি অধ্যাপক মো. জাহিদুল ইসলাম, জেলা শাখার প্রচার শাখার প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক অধ্যাপক মো. শহিদুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ জেলা আইনজীবী  সমিতির সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান, জেলা শ্রমিককল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. ছাইদুল ইসলাম খান, বেলকুচি উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মো. আরিফুল ইসলাম সোহেল, জেলা ছাত্রশিবির সভাপতি উদ্দিনসহ অনেকে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০২৪
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।