ঢাকা: তদবির যিনি বেশি ভালো করতে পারেন তিনি আসলে নেতা হিসেবে বেশ সম্ভাবনাময়। তিনিই আগামী দিনের নেতৃত্ব দেবেন বলে কটাক্ষ করেছেন গণ সংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি।
রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা স্কুল অব লিডারশিপ (এসওএলই-ইউএসও) আয়োজিত ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেমন প্রার্থী চাই’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে তিনি এ কথা জানান।
জোনায়েদ সাকি বলেন, শিক্ষিত লোকদের প্রতি সবার একটা আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শিক্ষিত লোকেরা যদি প্রার্থী হয়, নেতৃত্বে আসে তাহলে মনে হয় সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে! আমি এই ধারণায় বেশ দ্বিমত পোষণ করি। আমার ধারণা, বাংলাদেশের যত সংকট এবং সমস্যা আছে, তার বেশির ভাগের জন্যই দায়ী হচ্ছেন শিক্ষিত লোকেরা। বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনা কিংবা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা, ব্যবসা-বাণিজ্য, আইন-কানুন সমস্ত সেক্টরে শিক্ষিত লোকেরাই নেতৃত্ব দেয়। শিক্ষিত লোক বলে আমরা এমন একটা সমাধান হাজির করার চেষ্টা করি, তাতে মূল বিষয়টা আড়াল হয়ে যায়। আমরা গত মন্ত্রীসভায় অনেক পিএইচডি ওয়ালা দেখেছি। সুতরাং এসব পিএইচডি এবং শিক্ষিত লোকের বিষয়টায় না গিয়ে আমরা ফোকাসটা বদলানোর চেষ্টা করি।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয় বলেন, নেতৃত্ব মানে হচ্ছেন যিনি জনগণকে কোনো একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে প্রভাবিত, ঐক্যবদ্ধ এবং উৎসাহিত করতে পারেন। এই যে নেতৃত্বের গুণাবলী এটা আমরা অনেক মানুষের মধ্যেই দেখব। এটা কেউ ইতিবাচকভাবেও দেখতে পারেন আবার নেতিবাচকভাবেও দেখতে পারেন। এখন খোদ যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত কারও কারও তুমুল নেতৃত্ব দেখা যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা কতগুলো বিষয়ে কথা বলতে পারি, টাকার প্রভাব রাজনীতিতে যদি খুব বেশি থাকে। টাকাওয়ালারা প্রার্থীরা তখন এগিয়ে থাকবে। অনেকে বলবে ভাই আপনি তো অনেক ভালো মানুষ, কিন্তু আপনার তো টাকা নেই, আপনি জিততে পারবেন না। সুতরাং যিনি টাকাওয়ালা তার পেছনেই সবাই ছুটবেন। রাজনীতিতে যদি বেশি পেশী শক্তির খুব দাপট থাকে, মাস্তানি করা, গুণ্ডামি করা, লোকজন নিয়ে হাঁটতে পারা, তখন প্রার্থীর ক্ষেত্রে এই ক্রাইটেরিয়া সামনে আসবে। বড় দলগুলো প্রায়ই আন-অফিসিয়ালি এসব কথা বলে। ভালো মানুষ প্রার্থী দিলে তো হবে না, জিততে পারবে কিনা, ভোটকেন্দ্র পাহারা দিতে পারবে কিনা সেটাও একটা প্রশ্ন।
সাকি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাসে আমাদের খুব বেশি কি অগ্রগতি হয়েছে? আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারব না। বরং দেখতে পাচ্ছি সব জায়গায় তদবির লাগছে। তদবির যিনি বেশি ভালো করতে পারেন, তিনি আসলে নেতা হিসেবে বেশ সম্ভাবনাময়। তিনিই আগামী দিনের নেতৃত্ব দেবেন। এটা আমার অভিজ্ঞতা। ব্যক্তিগতভাবে তদবির ভালোভাবে করতে পারছি না বলে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতার জায়গায় যথেষ্ট সফল হতে পারছি না। এই কাঠামো রাষ্ট্রীয়ভাবে আছে, রাজনৈতিকভাবে আছে, অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে আছে। আমরা যদি সত্যিকার অর্থে ব্যবস্থাগত বদলের দিকে না তাকাই, এটা রাজনৈতিক দলগুলোর বিদ্যমান কাঠামোর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত চেয়ে আলাদাভাবে এটা বদলাবে না। ক্ষমতা ব্যবস্থার চরিত্র বদলানোই নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত।
সংলাপে স্কুল অব লিডারশিপের ভাইস প্রেসিডেন্ট মেজর (অব.) রুহুল আমিন চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন। সঞ্চালনা করেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ডক্টর জামিল আহমেদ। সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসনের অধ্যাপক এ কে মতিনুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. সেলিমা রহমান, গণ সংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজসহ রাজনীতিবিদ, গবেষক, সুশীল সমাজ, পেশাজীবী এবং সাংবাদিকরা।
বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৫
আরকেআর/এমজে