বিএনপি নির্বাচনে এমন প্রার্থী মনোনয়ন দিতে চায়, যার প্রতি শুধু দলের নয় বরং এলাকার অধিকাংশ মানুষের সমর্থন থাকে। নির্বাচন হবে জনগণের অংশগ্রহণে, তাই এককভাবে বা জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করার বিষয়ে দল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বিবিসি বাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্বে এসব কথা বলেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, বিএনপি প্রথম থেকেই বলে আসছিল যে যত দ্রুত নির্বাচনটি হবে, তত দ্রুত দেশের মধ্যে একটি স্থিতিশীলতা আসবে। দেখুন বাংলাদেশের মানুষ গত ১৭ বছর যাবৎ তাদের রাজনৈতিক অধিকার যেমন তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, তাদেরকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছিল। যার ফলশ্রুতিতে আমরা সমাজে অনেকগুলো পর্যায়ক্রমিকভাবে স্পিলওভার ইফেক্ট বলতে যা বুঝায় অনেকগুলো খারাপ লক্ষণ দেখেছি। বেকার সমস্যা বেড়েছে, দরিদ্রতা বেড়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থা ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। চিকিৎসা ব্যবস্থা ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। কৃষি ব্যবস্থা ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা সেজন্যই বলেছিলাম যে, যত দ্রুত নির্বাচন হবে যত দ্রুত দেশের মালিক যারা অর্থাৎ জনগণ তাদের কাছে যখন সেই অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হবে, তারা যখন সিদ্ধান্ত নেবে, অর্থাৎ দেশের মালিক যখন সিদ্ধান্ত নিবে দেশ কারা কিভাবে পরিচালিত করবে, তত দ্রুত দেশে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। কারণ প্রকৃতভাবে নির্বাচিত একটি সরকার অবশ্যই জনগণের যে চাওয়া অর্থাৎ জনগণ যেভাবে চায় সেই বিষয়গুলোকে তারা এড্রেস করবে। ইয়েস, একটি নির্বাচন হলেই যে সব রাতারাতি সব ঠিক হয়ে যাবে তা না। সমস্যাগুলোকে যখন আপনি এড্রেস করবেন খুব স্বাভাবিকভাবেই ধীরে ধীরে সমস্যা কমতে শুরু করবে। আমরা আনন্দিত যে দেরিতে হলেও সরকার জিনিসটি উপলব্ধি করতে পেরেছেন। আমরা ডিসেম্বরের ভিতরে চেয়েছিলাম। উনারা ফেব্রুয়ারির ভিতরে এখন নির্বাচনটি করতে চাইছেন। আমরা আস্থা রাখতে চাই যে সরকার সে ব্যাপারে সব রকম উদ্যোগ পর্যায়ক্রমিকভাবে গ্রহণ করবেন।
নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে পরিকল্পনা জানতে চাইলে তারেক রহমান বলেন, “আমরা প্রায় ৬৪টি রাজনৈতিক দল বিগত স্বৈরাচারের সময় যার যার অবস্থান থেকে রাজপথে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে। আমরা চেষ্টা করেছিলাম কমবেশি একসাথে কাজ করার জন্য। এমনকি আমরা যে ৩১ দফা দিয়েছি রাষ্ট্র পুনর্গঠনের, এটি প্রথমে ২০১৬ সালে আমরা দিয়েছিলাম শুধু বিএনপির পক্ষ থেকে। পরবর্তীতে ভিশন টুয়েন্টি ছিল। যেটা পরবর্তীতে কিছুটা আরেকটু ডেভেলপ করে আমরা ২৭ দফা দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে আমরা আমাদের সাথে যে রাজনৈতিক দলগুলো আছে তাদের সাথে পরামর্শ করে সকলের মতামত নিয়ে আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। কারণটি হচ্ছে যে দলগুলোকে আমরা পেয়েছি আমাদের সাথে রাজপথের আন্দোলনে, আমরা চাই সকলকে সাথে নিয়ে রাষ্ট্র পুনর্গঠন করতে। সকলের মতামতকে সাথে নিয়ে আমরা রাষ্ট্র পুনর্গঠন করতে চাই।
যদি বিএনপির বিরোধী জোটের বিষয়ে প্রশ্ন আসে, এ সংক্রান্ত জিজ্ঞাসায় তারেক বলেন, কোনো দল বা সমষ্টিগতভাবে কোনও দল যদি বাংলাদেশের যে আইন আছে, বৈধ আইন আছে। বাংলাদেশের যে সংবিধান এখনো যেটি আছে এই সবকিছুর ভেতরে থেকে অর্থাৎ মানুষের সমর্থন-গ্রহণযোগ্যতা সবকিছুর ভেতরে থেকে যারা রাজনীতি করবে তারা করতেই পারে। এটাতে তো কোনও সমস্যা বা উদ্বেগের কোনও কারণ আমি দেখি না।
প্রতিদ্বন্দ্বী জোটের সম্ভাবনা চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, কেন? ইলেকশন হলে তো ইলেকশনে প্রতিযোগিতা থাকতেই পারে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকতেই পারে। এতে উদ্বেগের কি আছে? বিএনপি তো আগেও নির্বাচন করেছে। বিভিন্ন সময় বিএনপি নির্বাচন করেছে। কম্পিটিশন করেই বিএনপি নির্বাচন করেছে। প্রতিযোগিতা করেছে। উদ্বেগের কিছু নেই।
মনোনয়ন কৌশল নিয়ে তারেক রহমান বলেন, আমরা কখনোই এইসব বিবেচনায় নিয়ে কখনোই আমার দল নমিনেশনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়নি। আমাদের নমিনেশনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত সবসময় কমবেশি যা ছিল বা ভবিষ্যতে আমরা যেটিকে মূল্যায়ন করবো- সেটি হচ্ছে অবশ্যই কোনও একটি পার্টিকুলার এলাকা থেকে আমরা আমাদের দলের এমন একজন ব্যক্তিকেই নমিনেশন দিতে চাইবো, যে ওই এলাকার সমস্যা সম্পর্কে সচেতন আছে, যার সাথে ওই এলাকার মানুষের সম্পৃক্ততা আছে, ওঠা বসা আছে, যে ওই এলাকার মানুষের সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম। যে ওই এলাকার বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ, তরুণ, নারী, মুরুব্বিসহ ছাত্র-ছাত্রী সবার সাথে যার একটা কমিউনিকেশন আছে। এই ধরনের মানুষকেই আমরা প্রায়োরিটি দিব, খুবই স্বাভাবিক। অর্থাৎ যার প্রতি জনসমর্থন আছে। যে জনসমর্থনকে তার সাথে রাখতে পারে। জনগণের যার প্রতি সমর্থন আছে সেরকম মানুষকে দেখেই আমরা নমিনেশন দেব।
তৃণমূলের মতামতের গুরুত্ব নিয়ে তিনি বলেন, ব্যাপারটা এরকম না। দেখুন গণতন্ত্রে স্বাভাবিক যেখানেই গণতন্ত্র আছে, সেখানে মতামত থাকতেই পারে। বিভিন্ন রকম মতামত অভিযোগ। হয়তো এক জায়গায় ৫০ জন আছে। ৫০ জনের মধ্যে ৩০ জন একটি কথা বলছে, ১৫ জন একটি কথা বলছে। বাকিরা আরেকটি কথা বলছে। তাহলে আপনি কি বলবেন যে মতামত নেয়া হচ্ছে না? না। স্বাভাবিকভাবেই যেখানে আমরা মেজরিটির যেটা মতামত পাবো, এলাকার মানুষের কম বেশি। আমরা তো আমাদের মতন করে খোঁজ করছি। সেটি তৃণমূলই হোক বা সেটি সাধারণ মানুষের হোক।
তিনি আরও বলেন, এখানে একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য- আমরা কিন্তু দলের নেতৃত্ব নির্বাচন করছি না। আমরা নির্বাচন করছি এমন একজন ব্যক্তিকে যেই শুধু দলেরই সমর্থন নয় বরং দলমত নির্বিশেষে ওই এলাকার অধিকাংশ মানুষের সমর্থন যার প্রতি আছে। আমরা এরকম একজন মানুষকে বের করে আনতে চাইছি। এরকম একজন মানুষকে আমাদের দলের মনোনয়ন দিতে চাইছি। শুধু দল দিয়ে তো নির্বাচন হবে না। নির্বাচনে তো সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ থাকে। বিভিন্ন মানুষের অংশগ্রহণ থাকে। কাজেই যার সমর্থন আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করব, চেষ্টা করছি যার প্রতি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সমর্থন আছে। শুধুমাত্র দলীয় সমর্থন নয়, এরকম মানুষ।