ঢাকা, রবিবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩২, ১২ অক্টোবর ২০২৫, ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৭

রাজনীতি

নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে: ইসলামী আন্দোলন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:৩৫, অক্টোবর ১২, ২০২৫
নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে: ইসলামী আন্দোলন ইসলামী আন্দোলনের স্মারকলিপি প্রদান।

পাঁচ দফা দাবিতে চলমান যুগপৎ আন্দোলনের দ্বিতীয় দফার ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশের সব জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরবার স্মারকলিপি প্রদান করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।  

রোববার (১২ অক্টোবর) দুপুর ১২টা থেকে দুপুর দেড়টার মধ্যে একযোগে ম্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

জেলা প্রশাসকরা সরকারের পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন।

স্মারকলিপিতে এ সরকার গঠনের প্রেক্ষাপট ও কার্যক্রম সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে স্মরণ করিয়ে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের সফল গণঅভ্যুত্থানের পর জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে আপনার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রের প্রয়োজনকে সামনে রেখে জনগণের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার ও স্বৈরাচার ফিরে আসার সব পথ রুদ্ধ করার প্রত্যয় নিয়ে কাজ শুরু করেন। গঠিত হয় বিভিন্ন সংস্কার কমিশন। কমিশনগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৬৬টি প্রস্তাবের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় মিলিত হন। দীর্ঘ আলোচনার পর ৮৪টি প্রস্তাব সিদ্ধান্ত আকারে গৃহীত হয়। অনেকগুলো প্রস্তাবের সঙ্গে কতিপয় রাজনৈতিক দল ভিন্নমত পোষণ করায় সেগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।

জুলাই সনদের বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নীতিগত অবস্থান তুলে ধরে বলা হয়, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বরাবরই জুলাই জাতীয় সনদকে আইনগত ভিত্তি দেওয়ার বিষয়ে জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে। জাতির ক্রান্তিলগ্নে 'ডকট্রিন অব নেসেসিটি' হিসেবে অতীতের বিভিন্ন নজির ও উদাহরণ তুলে ধরে জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তির বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর অবস্থান বারবার ব্যক্ত করে আসছে।  

তাই জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তি দেওয়ার জন্য আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এরই মধ্যে সরকারের কাছে লিখিতভাবে দুইটি প্রস্তাব করেছে। প্রথমত: জুলাই জাতীয় সনদের জন্য "সংবিধান আদেশ" জারি করা, দ্বিতীয়ত: এ সনদের অধিকতর আইনি ভিত্তি দেওয়ার জন্য নির্বাচনের পূর্বে গণভোট প্রদান করে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা। সেটা না হলে জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তি প্রদান ব্যতীত ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত অভ্যুত্থান ও তার অর্জন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে বলে আমরা মনে করি।

আসন্ন নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে উৎকণ্ঠা জানিয়ে বলা হয়, এরই মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও ভয়ভীতিমুক্ত গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে আসছি।

আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী কালো টাকার ব্যবহার বন্ধ, ভোটকেন্দ্র দখল, পেশিশক্তি প্রদর্শন ও ভোটের বিভিন্ন অনিয়ম ও অপতৎপরতা বন্ধ, কোয়ালিটি-সম্পন্ন পার্লামেন্ট এবং দক্ষ আইনপ্রণেতা তৈরিসহ প্রতিটি ভোট মূল্যায়নের লক্ষ্যে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য জোর দাবি জানিয়ে আসছি। বাংলাদেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, কলামিস্ট, লেখক, গবেষক, শিক্ষাবিদ ও নানা শ্রেণিপেশার মানুষ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।

গণহত্যার বিচার ও ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিচারের দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলা হয়, বিগত সরকার বিভিন্ন স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী পদক্ষেপের মাধ্যমে সংবিধান, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসহ রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠানকে রাজনীতিকরণ করে ধ্বংস করেছে। হাজার হাজার বিরোধীদলীয় নেতাদের ওপর জুলুম-নির্যাতন, মামলা-হামলা, জেল-জরিমানা, গুম, খুন করে দেশপ্রেমিক কণ্ঠকে স্তমিত করতে চেয়েছে।

দিনের ভোট রাতে নির্বাচনের নামে জাতীর সঙ্গে প্রহসন করেছে। আর এ সমস্ত অবৈধ কার্যক্রমগুলোকে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দল শুধু প্রকাশ্যে সমর্থনই দেয়নি বরং জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সময় ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তাই স্বৈরচারী ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর হিসেবে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে জনগণ জোর দারি জানিয়ে আসছে।

জনতার দাবির প্রতি সরকার উদাসীনতা প্রদর্শন করছে মর্মে স্মারকলিপিতে বলা হয়, আমরা লক্ষ্য করছি জনগণের দাবিগুলো কার্যকর করার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। এমতাবস্থায় জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি ন্যায়ভিত্তিক ও জবাবদিহিতামূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্ররূপে গড়ার লক্ষ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো দাবি জানিয়ে আসছে। এরই প্রেক্ষিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো সেপ্টেম্বর মাসে ৫ দফা গণদাবি জাতির সামনে উপস্থাপন করেছে এবং রাজধানীসহ প্রতিটি বিভাগীয় শহর, জেলা ও উপজেলায় সমাবেশ, বিক্ষোভ ও গণসংযোগ করেছে। এ সমস্ত কর্মসূচিতে সারাদেশে বিপুল সংখ্যক জনগণ অংশগ্রহণ করেছে।

টিএ/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

রাজনীতি এর সর্বশেষ