কক্সবাজার থেকে: ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর ঈদ-পার্বণ ছাড়া এলাকায় আসেননি এমপি হামিদুর রহমান আযাদ।
তাও আবার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হওয়ায় গত দেড় বছরে একবারও তার চেহারা দেখেনি মহেশখালী-কুতুবদিয়াবাসী।
তাই, মহেশখালী-কুতুবদিয়ায় তার বিরুদ্ধে ভোটারদের ক্ষোভ চরমে। এলাকার মানুষের কথা এক ভুল আর দ্বিতীয়বার নয়। ভালো কিংবা মন্দ, বিপদে বা আনন্দে যাকেই তারা কাছে পাবেন, এখন থেকে ভোট যাবে তাদেরই বাক্সে।
এলাকাবাসী জানান, আযাদ সাহেব তো এলাকায় আসেন না। সারাক্ষণ শুধু তার দল জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে ঢাকায় মারামারি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এলাকার উন্নয়ন নিয়ে তার কোনো মাথাব্যথা নেই। আর মারামারির কারণে তার দল এখন নিষিদ্ধ হওয়ার পথে। দল নিষিদ্ধ হলে আযাদ সাহেব আর জামায়াত থেকে নির্বাচনও করতে পারবেন না। আর স্বতন্ত্র নির্বাচন করলেও তাকে আর ভোট দেবেন না ভোটাররা।
এটাই চিত্র মহেশখালী-কুতুবদিয়া নিয়ে গঠিত কক্সবাজার-২ আসনের ভোটারদের তাদের এমপি হামিদুর রহমান আযাদের বিষয়ে মূল্যায়ন।
ভোটারদের অভিযোগ, ২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় হামিদুর রহমান আযাদের প্রতিশ্রুতি ছিল- মহেশখালী ও কুতুবদিয়ার চারপাশে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ, মহেশখালী-জনতা বাজার সড়ক ও কুতুবদিয়ার আজম সড়ক নির্মাণ। গাইড ওয়ালসহ সব কালভার্ট নির্মাণ, লবণের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতকরণ, প্রকৃত পান চাষীদের ঋণ সুবিধা প্রদান, মহেশখালী ও কুতুবদিয়াকে সন্ত্রাস মুক্ত করা ইত্যাদি।
কিন্তু, সাড়ে চার বছর পরে এসে মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের নির্বাচিত হামিদুর রহমান আযাদ, এমপির দেওয়া প্রতিশ্রুতির একটিও বাস্তবায়ন হয়নি। সন্ত্রাসের জনপদ ও অস্ত্র তৈরির কারখানা হিসেবে এ উপজেলার দুর্নাম এখনো ঘোচেনি।
এ বিষয়ে মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার পাশা জানান, এলাকায় আসেন না জামায়াত এমপি। আর টেস্ট রিলিফ (টিআর) ও কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) বরাদ্দ দিয়েছেন জামায়াতের নেতাকর্মীদের। ফলে, জনবিচ্ছিন্ন এমপি হিসেবে আযাদের বদনাম রয়েছে।
তবে মহেশখালী দক্ষিণ শাখা জামায়াতের আমির জাকের হোসেন জানান, সরকারের নিপীড়নের সময়ের মধ্যেও এলাকার সঙ্গে এমপি আযাদের সম্পর্ক রয়েছে। এলাকাবাসী তা মূল্যায়ন করে তার পক্ষেই রয়েছেন।
২০০৮ সালে কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের নির্বাচনে অংশ নেন, এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ (জামায়াত/দাঁড়িপাল্লা), আনসারুল করিম (আওয়ামী লীগ/নৌকা), গোলাম মওলা (স্বতন্ত্র/মাছ), মো. সোলেমান (ইসলামী ঐক্যজোট/মিনার) ও মো. ইলিয়াছ (স্বতন্ত্র/গোলাপফুল)।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন চাইবেন আওয়ামী লীগের আনসারুল করিম, আশেক উল্লাহ রফিক ও অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা।
অপরদিকে, বিএনপির হয়ে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক এমপি আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ ফরিদ এবং কুতুবদিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী।
দল নিষিদ্ধ হলেও জামায়াতের এমপি এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে। এছাড়াও জাতীয় পার্টির কবির আহমদ সওদাগর নির্বাচনে লড়বেন।
মনোনয়নের বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ ফরিদ বলেন, ‘আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে দলের চেয়ারপার্সনের নির্দেশ রয়েছে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আমি নির্বাচন করবো এবং জয়ী হবো। ’
কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের নির্বাচনী খতিয়ান-
- ১৯৮৬ সালের আগে কক্সবাজার-২ আসনের মহেশখালী ছিল সদর আসন এবং কুতুবদিয়া ছিল চকরিয়ার সঙ্গে।
- ১৯৮৬ সালে গঠিত মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনে জাতীয় পার্টির উইং কমান্ডার (অব.) জহিরুল ইসলাম এমপি নির্বাচিত হন।
- ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের মো. ইসহাক (বিএ) ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালে বিএনপির আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ ফরিদ এমপি নির্বাচিত হন।
বাংলাদেশ সময়: ০৭০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২, ২০১৩
আরএম/এমইএস/এনএ/এবি/জিসিপি