ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ পৌষ ১৪৩১, ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০২ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

নেতারা শীতনিদ্রায়, খালেদার আরেকটি পরাজয়

আসাদ জামান ও এ কে এম রিপন আনসারী | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৪
নেতারা শীতনিদ্রায়, খালেদার আরেকটি পরাজয় ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

গাজীপুর থেকে: মার্চ ফর ডেমোক্রেসির (২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর) বর্ষপূর্তির একদিন আগে শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) গাজীপুর জেলায় জনসভা করতে না পেরে পুরোনো ব্যর্থতার চিত্রই যেন আঁকলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। মার্চ ফর ডেমোক্রেসির দিন সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে বাসা থেকে বের হতে পারেননি তিনি।

আর ছাত্রলীগের হার্ডলাইন অবস্থানে শেষ পর্যন্ত গাজীপুরে আসতে পারলেন না বিএনপির চেয়ারপারসন।
 
স্থানীয় বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতারা বলছেন, জনসভাস্থল ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ মাঠ এবং এর আশাপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি থাকলেও টঙ্গীর টেলিফোন শিল্প সংস্থার (টেশিস) মাঠ, শফিউদ্দীন সরকার একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠ ও ভোগড়া চৌরাস্তায় জনসভার চেষ্টা করতে পারতেন খালেদা জিয়া।
 
তাদের মতে, জনসভা করতে না পারলেও ঢাকা থেকে গাজীপুরের উদ্দেশে খালেদা জিয়া রওনা দিলে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে যেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা বাড়তো, তেমনি সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনকে কিছুটা হলেও চাপে ফেলা যেতো।
 
কিন্তু সবচেয়ে সহজ কর্মসূচি ‘হরতাল’ এর ডাক দিয়ে গাজীপুর জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে শীতনিদ্রার ব্যবস্থা করে দিয়ে আরেকটি পরাজয় মেনে নিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটের নেতা খালেদা জিয়া।
 
শনিবার দুপুর দেড়টায় স্থানীয় বিএনপির এক শীর্ষ নেতাকে ফোন দিলে ঘুম জড়ানো কণ্ঠে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, সাধারণ সম্পাদক কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল, সাবেক এমপি হাসান উদ্দীন সরকার, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হুমায়ুন কবীর খান, কালিয়াকৈর পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান, টঙ্গী থানা বিএনপির সভাপতি শাহান শাহ আলম, গাজীপুর জেলা শ্রমিকদলের সভাপতি সালাহউদ্দিন সরকার, শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাজাহান ফকিরসহ গাজীপুর জেলা, উপজেলা, পৌরসভাসহ বিএনপির  বিভিন্ন আঞ্চলিক ইউনিটের সিনিয়র নেতারা ঢাকায় অবস্থান করছেন।
 
তারা বারবার তৃণমূল নেতাদের আশ্বস্ত করছেন, ‘আমরা ম্যাডামের গুলশান কার্যালয়ে আছি। তোমরা হরতাল চালিয়ে যাও’।
 
এ ব্যাপারে জানতে গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলনকে একাধিকবার ফোন দিলেও তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
 
কালিয়াকৈর পৌরসভার মেয়র মো. মুজিবুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, তিনি তার এলাকাতেই আছেন এবং সকাল সাড়ে ৮টায় কালিয়াকৈর বাজারে তার নেতৃত্বেই হরতালের পক্ষে মিছিল হয়েছে।
 
তবে কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুক বাংলানিউজকে জানান, কালিয়াকৈরে হরতালের পক্ষে কোনো মিছিল-মিটিং হয়নি। তবে হরতালের বিপক্ষে মিছিল হয়েছে।
 
বছরের শেষ কর্মসূচি গাজীপুরের জনসভা থেকে সরকারকে সুনামির মত আঘাত হানতে যাচ্ছে বিএনপি- এমন প্রচার-প্রচারণা ছিলো গত কয়েক সপ্তাহ ধরে। দেশবাসীর দৃষ্টিও ছিল তাই গাজীপুরের দিকে। ফলে জাতীয় গণমাধ্যম গাজীপুরকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিলো। ঢাকা থেকে প্রায় সবকগুলো মিডিয়া হাউজ তাদের অগ্রিম টিম পাঠিয়েছিলো গাজীপুরে।
 
কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেওয়া আপত্তিকর বক্তব্যে ক্ষুব্ধ ছাত্রলীগের কঠোর অবস্থান এবং বিএনপির ভুল কৌশলের কারণে বছরের শেষটাও ভালো গেল না খালেদা জিয়ার।
 
স্থানীয় নেতাকর্মীরা মনে করছেন, ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে সরকারবিরোধী কঠোর আন্দোলনের যে আওয়াজ বিএনপি দিচ্ছে, তা কতোটা সফল হবে ‘গাজীপুর ব্যর্থতাই’ তা বলে দিচ্ছে।
 
গাজীপুর ব্যর্থতার পোস্টমর্টেম
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও গাজীপুর সিটি কপোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান এবং সাবেক এমপি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান উদ্দিন সরকারের নেতৃত্বে গাজীপুরে বিএনপির দু’টি পক্ষ সক্রিয়। এই দুইপক্ষের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের।
 
হাসান উদ্দিন সরকারের পক্ষে জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন ও সাধারণ সম্পাদক কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল রয়েছেন।
 
বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরে খালেদা জিয়ার জনসভাটির উদ্যোক্তা মূলত মেয়র এম এ মান্নান। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রাথীকে লক্ষাধিক ভোটে পরাজিত করে মেয়র নিবাচিত হওয়ায় অধ্যাপক মান্নানের ওপর ভরসা করেছিলেন খালেদা জিয়া।
 
কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তারেক রহমানের আপত্তিকর বক্তব্যের প্রতিবাদে ছাত্রলীগ যখন কঠোর অবস্থান নেয়,  বিভক্ত বিএনপি তখন তা মোকাবেলা করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দেয়। ২৩ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শহর থেকে বিএনপির সব ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার তুলে নিলে পুনরায় তা টাঙানোর সাহস পর্যন্ত দেখাননি বিএনপি নেতাকর্মীরা।
 
দলীয় সূত্রে জানা গেছে,  অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণেই এম এ মান্নান গ্রুপ ও হাসান উদ্দিন সরকারের গ্রুপ দায়সারা গোছের কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি ঠিক রাখতে চেয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনের কাছেই অসহায় আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে দেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং এর চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে।
 
অবশ্য বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, এটি ছাত্রলীগের কাছে পরাজয় নয়, এটি ‘অনৈতিক’ সরকারের অগণতান্ত্রিক আচরণ এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের কাছে পরাজয়।
 
 বাংলাদেশ সময়: ১৪০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৪

** মাঠ দখলে নিতে ফের মরিয়া ছাত্রলীগ
** গাজীপুরে হরতালের মাঠে নেই কোনো পক্ষই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

রাজনীতি এর সর্বশেষ