ঢাকা: রাজপথে চলমান জ্বালাও-পোড়াওয়ের মধ্যেই দশম জাতীয় সংসদের এক বছর পূর্ণ হলো।
বৃহস্পতিবার (২৯ জানুয়ারি) ছিল দশম সংসদের বছরপূর্তি।
বহু জল্পনা-কল্পনা শেষে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপির নির্বাচন বর্জনের মধ্য দিয়ে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
এরপর ১২ জানুয়ারি সংসদ সদস্যরা শপথ গ্রহণ করেন এবং ১৩ জানুয়ারি মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। একই বছর ২৯ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়।
দশম জাতীয় সংসদে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় বিরোধী দলে বসার সুযোগ হয় এইচএম এরশাদের দল জাতীয় পার্টির। যদিও শুরু থেকেই বিরোধীদলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ছিল সব মহলেই। একই সঙ্গে মন্ত্রিত্ব নিয়ে সরকারের অংশীদার হওয়া ও বিরোধীদলের ভূমিকা পালন- এই নিয়ে সৃষ্টি হয় জটিলতা। তাহলে সরকারের থেকে কীভাবে তাদের সমালোচনা করবে জাতীয় পার্টি- এটাই ছিল প্রশ্ন। এ সময় কেউ কেউ আবার জাতীয় পার্টিকে ‘গৃহপালিত বিরোধীদল’ বলে আখ্যায়িত করতে থাকেন।
বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ জাতীয় সংসদের মিডিয়া সেন্টারে প্রেসব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, আমরা ফাইল-ছোড়াছুড়ি, অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করতে জানি না বলেই আমাদের ‘গৃহপালিত বিরোধী দল’ বলা হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, কিন্তু আমরা সেই বিরোধীদল হতে চাই না। আমরা সত্যিকারের বিরোধীদল হিসেবে সংসদে থেকেই সরকারের সহযোগিতার পাশাপাশি সমালোচনাও করতে চাই।
রওশন এরশাদ তার কথা রেখেছেন। সরকারকে যা সহযোগিতা করার সবই করছেন। কিন্তু পারছেন না সমালোচনা করতে। এ সংসদের তৃতীয় অধিবেশনে জাপার কয়েকজন সদস্য ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা করতেই চটে যান সরকার দলীয় একাধিক সিনিয়র সদস্য।
জবাব দেন এরশাদের কর্মকাণ্ডের সমালোচনার মাধ্যমে। আর তাতেই থেমে যায় বিরোধী হয়ে ওঠা চেষ্টারত জাপার কর্মযজ্ঞ।
বিগত চারটি অধিবেশনে জাপার এমপিরাও তাদের বক্তৃতায় বিএনপিকে ‘বিরোধীদল’ বলেই সম্বোধন করে আসছিলেন। সরকারি দলের এমপিরাও যেন বিরোধীদল বলতে এখনো বিএনপিকেই বুঝে থাকেন। তারই প্রমাণ বুধবার (২৮ জানুয়ারি) সরকার দলীয় এমপি মো. তাজুল ইসলাম (কুমিল্লা-৯) সংসদে বিএনপিকে ‘বিরোধীদল’ বলায় চটে যান জাপা এমপিরা।
সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এমপি তাজুলকে সতর্ক করেন যেন বিএনপিকে ‘বিরোধীদল’ বলা না হয়। অবস্থা দেখে মনে হয়, এখনো কার্যকর বিরোধীদল হয়ে উঠতে পারেনি জাপা।
এত কিছুর পর এখন পর্যন্ত বিরোধীদলীয় উপনেতাই নির্বাচন করতে পারেনি জাপা। এখানেও সরকারের দিকে তাকিয়ে জাতীয় পার্টি। কারণ, জাপা নিজেই রওশন ও এরশাদ গ্রুপে বিভক্ত। দুই গ্রুপের কেউ চান কাজী ফিরোজ রশিদকে বিরোধীদলীয় উপনেতা করতে। কেউ চান অন্য কাউকে বানাতে। এই নিয়ে টানাপোড়েন চলায় শেষ পর্যন্ত সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা নির্বাচন করা হয়নি জাপার।
এক নজরে দশম সংসদের এক বছর:
২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদের পথচলা শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত চারটি অধিবেশন শেষ হয়েছে। চলছে পঞ্চম অধিবেশন। ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ৯২ কার্যদিবসের মধ্যে সংসদনেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৮২ দিন উপস্থিত ছিলেন সংসদে। এই সময়ে বিরোধীদলীয় নেতার উপস্থিতি ছিল ৩৯ দিন।
এ সংসদের চতুর্থ অধিবেশন পর্যন্ত ১৯টি বিল পাস হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৪-১৫ সালের বাজেট এবং সংবিধান সংশোধন বিলও পাস হয়েছে। এর কোনোটিতেই বিরোধীদল জাতীয় পার্টি বিরোধিতা করেনি।
এমনকি বাজেট অধিবেশনে জাপার এমপিদের বাজেট বিশ্লেষণে অংশ নিতেও দেখা যায়নি। বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ সম্পূরক বাজেট পাস হওয়ার পর জাতীয় সংসদের মিডিয়া সেন্টারে বলেছিলেন, বাজেট এখনো ভালো করে পড়ে দেখা হয়নি। তাই, কিছু বলতে পারছি না; যা আগে কখনো ঘটেনি।
আগের সব অধিবেশনেই সম্পূরক বাজেট পাস হওয়ার আগে বিরোধীদলের পক্ষ থেকে বাজেট পর্যালোচনা করে বক্তব্য দেওয়া হতো।
এদিকে, বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন বর্জন করায় ’৭৫-এর পর এই প্রথমবারের মতো যুদ্ধাপরাধীমুক্ত সংসদ পাওয়া গেল। ১৬ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের পৃথক জোটও এই প্রথম। এরাই মূলত সংসদে সরকারের সমালোচনা করার মাধ্যমে বিরোধীদলের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
তাছাড়া দশম জাতীয় সংসদে বিএনপি না থাকলেও ছিল তাদের নিয়ে সমালোচনা। প্রতিটি অধিবেশনেই কোনো না কোনো ইস্যু নিয়ে বিএনপির সমালোচনায় সংসদ উত্তপ্ত ছিল।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৫