ঢাকা: ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দল সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের জন্য ভোট চাইতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
শনিবার (১৮ এপ্রিল) বিকেলে হঠাৎ প্রচারণায় নামা বিএনপি প্রধান টানা তৃতীয় দিনের মতো সোমবার (২০ এপ্রিল) বিকেলেও মাঠে নামেন।
তবে ভোটের জন্য খালেদা জিয়ার মাঠে নামার বিষয়টি ‘বিলম্বিত’ ঘটনা হিসেবে দেখছেন রাজনীতি বিশ্লেষক ও সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, ভোটের জন্য মাঠে নামার ক্ষেত্রে খালেদা জিয়া অন্তত ‘দেড় বছর লেট’ করে ফেলেছেন। বিএনপি চেয়ারপারসন রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিলে বা সঠিক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারলে, বছর দেড়েক আগেই ভোটের জন্য মাঠে নামতে পারতেন।
বিশ্লেষকদের মতে, কিছু ‘ভুল’ সিদ্ধান্ত ও স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির সঙ্গে অতিমাত্রায় ‘সখ্যতা’ খালেদা জিয়াকে অনেকটা পিছিয়ে দিয়েছে। এ কারণে পাঁচ বছরের জায়গায় ছয় বছর চার মাস পর অর্থাৎ অর্ধযুগ পর ভোটের জন্য মাঠে নামতে হলো তাকে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদশের (টিআইবি) ট্রাস্টিবোর্ডের সদস্য এম হাফিজ উদ্দিন খান বাংলানিউজকে বলেন, ০৫ জানুয়ারির নির্বাচনে না গিয়ে নিশ্চিত ভুল করেছেন খালেদা জিয়া। এখন তিনি না রয়েছেন সরকারি দলে, না রয়েছেন বিরোধী দলে। সে কারণেই স্থানীয় নির্বাচনে ভোটের জন্য মাঠে নামতে হয়েছে তাকে। এ কাজটি দেড় বছর আগেই করতে পারতেন তিনি।
জানা গেছে, দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসেবে খালেদা জিয়াকে গত দুই যুগ ধরে কখনও প্রধানমন্ত্রী, কখনও বিরোধী দলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। রাষ্ট্রের লাভজনক পদে থেকে কোনো নির্বাচনী প্রতীক বা প্রার্থীর পক্ষে সরাসরি ভোট চাওয়ার বিধান না থাকায়, প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অন্তর কেবল জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ভোট চাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
সেই হিসেবে ২০১৪ সালের ০৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজের ও দল মনোনীত প্রার্থীর জন্য ধানের শীষ প্রতীকে ভোট চাওয়ার কথা ছিল খালেদা জিয়ার।
কিন্ত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া ‘নির্বাচনে যাবো না’ এমন ‘গোঁ’ ধরে বসে থাকায়, পাঁচ বছর পর ভোট চাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেন তিনি।
এর আগে, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিলেও, বিরোধী দলের নেতা হিসেবে গাড়িতে জাতীয় পতাকা ও রাষ্ট্রের লাভজনক পদে আসীন থাকায় বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চাইতে পারেননি খালেদা জিয়া।
তবে ০৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর সরকার গঠনের সঙ্গে সঙ্গে বিরোধী দলীয় নেতার পদ হারান বিএনপি প্রধান। পাঁচ বছর পর তার গাড়ি থেকে নেমে যায় জাতীয় পতাকা।
সূত্র জানায়, রাষ্ট্রের লাভজনক পদে না থাকায় এবং নির্বাচনী আচরণবিধির আওতামুক্ত থাকায় নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও বিএনপি সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সির প্রার্থীদের জন্য ভোট চাইতে মাঠে নেমেছেন খালেদা জিয়া।
সূত্র আরও জানায়, জাতীয় নির্বাচন ছেড়ে স্থানীয় নির্বাচন এবং ‘ধানের শীষ’ ছেড়ে ‘বাস’ ও ‘মগ’ মার্কায় ভোটের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে খালেদা জিয়া প্রকারান্তরে রাজনৈতিক দেউলিয়াপনার পরিচয় দিয়েছেন বলে মনে করছেন খোদ বিএনপি’র শীর্ষ নেতারা।
তাদের মতে, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট চাওয়ার পর, ২০১৪ সালের ০৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট চাওয়াটাই ছিলো খালেদা জিয়ার জন্য সম্মানজনক। সেটি যখন হয়নি তখন চুপচাপ থাকাটাই উচিত ছিল তার।
এক্ষেত্রে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাস ও তাবিথ আউয়ালের জন্য ভোট চাইতে দলের শীর্ষ নেতাদের নামিয়ে দিতে পারতেন সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, যেহেতু আইনি কোনো বাধা নেই, সেহেতু দল সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়ে ভুল করছেন না খালেদা জিয়া। আর রাজনীতিবিদ হিসেবে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাওয়া অসম্মানের নয়, বরং সম্মানের কাজ।
বাংলাদেশ সময়: ০৬০৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৫
এজেড/এসএস