ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

ওয়াও!

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২, ২০১৬
ওয়াও! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কুষ্টিয়া থেকে ফিরে: সামনে একটা সাইনবোর্ড। ময়লার আস্তরণে ঢাকা।

দলীয় প্রধানের ছবিসহ স্থানীয় নেতাদের পোস্টার আশপাশের দেয়ালে সাঁটানো। বহুদিনের পুরনো ছবিতে স্যাঁতাপড়া দাগ।
 
প্রমাণ সাইজের একটি বা দু’টি কক্ষ। মূল কক্ষে বড়-সড় একটি টেবিল। টেবিলের ওপাশে তিন চারটি চেয়ার। মাঝের চেয়ারটা একটু বড়। সেটিতে বসেন সভাপতি। পাশের অপেক্ষাকৃত ছোট চেয়ারটিতে সাধারণ সম্পাদক।
 
রুমের ভেতরে কাঠের অথবা প্লাস্টিকের কতোগুলো চেয়ার। এগুলো নেতাকর্মীদের জন্য বরাদ্দ। স্টিল বা কাঠের পুরনো একটি আলমারি। অথবা মাঝারি সাইজের একটি ফাইল কেবিনেট।
 
ঢাকার বাইরে আওয়ামী লীগ-বিএনপির রাজনৈতিক কর্যালয়ের চিত্র সাধারণত এমনটিই হয়। জামায়াত বা জাতীয় পার্টির কার্যালয় এর চেয়ে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই নেই। অন্যান্য ছোট দলগুলোর ব্যাপারে  তো কোনো কথাই নেই।
 
কিন্তু কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। এ কার্যালয়টি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর জেলা কার্যালয় সম্পর্কে চিরাচরিত ধারণা বদলে দিয়েছে। দায়িত্ব নিয়েই বলা যায়, বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ও কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়ের কাছে কিছুই না।
 
এর সাজ-সজ্জা, পরিসর, আসবাবপত্র, পরিবেশ, ইন্টেরিয়র ডিজাইন, বাথ-টয়লেট, লবি, হলরুম, কনফারেন্সরুম, লিভিংরুম, সাউন্ড সিস্টেম, লাইটিং ব্যবস্থা, অত্যাধুনিক ফিটিংস, দরজা-জানালা, ঝাড়বাতি, জানালার পর্দা, চেয়ার-টেবিল, সোফা, প্রায় দুই ডজন শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র- সব কিছু মিলে এটিকে উপমহাদেশের সবচেয়ে অভিজাত রাজনৈতিক কার্যালয় হিসেবেও বিবেচনা করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতারা। এমনকি স্থানীয় বিএনপির শীর্ষ নেতারাও বলছেন- কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়টি নিয়ে গর্ব করতে পারে কুষ্টিয়াবাসী।
 
শহরের প্রাণকেন্দ্র বঙ্গবন্ধু পৌর সুপার মার্কেটের চতুর্থ তলায় অবস্থিত কার্যালয়টিতে  ঢোকার মুখেই চোখ আটকে যাবে যে কারো। লাল-সবুজের শ্বেতপাথরে খোদাই করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফের প্রতিকৃতি।
 
প্রায় ১০ হাজার বর্গফুটের কার্যালয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ে লিভিংরুম। যাকে লবি বা ওয়েটিরুমও বলা হয়। এখানে রাখা গোটা বিশেক চেয়ার ও চারটি সেন্ট্রাল টেবিল জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের উন্নত রুচির পরিচয় বহন করছে। যে কেউ দেখা  করতে এলে তাকে এ খোলা জায়গাটিতে অপেক্ষা করতে হবে কিছুক্ষণ।
 
ওয়েটিংরুমের তিনপাশ ঘিরে রয়েছে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও দফতর সম্পাদকের জন্য আলাদা আলাদা কক্ষ। চোখে পড়ার মতো বিষয় হল, এ কক্ষগুলোতে রাখা চেয়ার, টেবিল, সোফা একটির রঙের সঙ্গে আরেকটির মিল নেই। সভাপতির চেয়ার-টেবিল ডিপ কমলা রঙের, সাধারণ সম্পাদকের চেয়ার-টেবিল হালকা কালো রঙের এবং দফতর সম্পাদকেরগুলো কালো রঙের।
 
এছাড়া যুবলীগ, কৃষক লীগ, ছাত্রলীগ মহিলা আওয়ামী লীগ ও শ্রমিক লীগসহ আওয়ামী লীগের প্রায় সবগুলো অঙ্গ সংগঠনের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা কক্ষ। কক্ষগুলোর সাজ-সজ্জায়ও রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা। মহিলা আওয়ামী লীগের চেয়ার-টেবিল কালো রঙের, তো ছাত্রলীগেরটা ফিরোজা রঙের। যুবলীগের জন্য যে রং নির্বাচন করা হয়েছে, শ্রমিক লীগের রঙের সঙ্গে তার মিল নেই।
 
সবচেয়ে বড় চমক রয়েছে বিশাল আকৃতির হলরুমটিতে। ভেতরে ঢুকলেই মনে হবে কোনো ফাইভস্টার হোটেলের হলরুম যেন এটা। আড়াইশ’ আসন বিশিষ্ট এ হলরুম নান্দনিকভাবে সাজানো। রয়েছে নিজস্ব সাউন্ড সিস্টেম, সাউন্ডপ্রুফ ব্যবস্থা। উন্নতমানের লাইটিং। সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এ হলরুমের দেয়ালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছাড়া অপ্রয়োজনীয় কোনো আলোকচিত্র নেই। ফ্লোর রো সাজবাতি দিয়ে সাজানো। প্রমাণ সাইজের মঞ্চটি কারুকার্যময়। জানালার পর্দাগুলোও আভিজাত্যে ঠাসা।
 
হলরুমের বিপরীত পাশে কনফারেন্সরুম। একটি রাউন্ড টেবিলের চারপাশে ৯০টি চেয়ার বসানো। জেলা আওয়ামী লীগের ৯০ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সভা-বৈঠক এ রুমেই হয়ে থাকে।
 
সব রুমের সঙ্গেই রয়েছে অ্যাটাস্ট বাথ-টয়লেট। তারপরও কমন বাথরুমে ঢুকে চমকে ওঠার অবস্থা। রাজধানী ঢাকার অভিজাত হোটেল রেস্টুরেন্টগুলোতে সাধারণত এ ধরনের বাথরুম দেখা যায়।
 
মনোমুগ্ধকর কার্যালয়টির জন্ম ইতিহাস নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয়  জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আজগর আলীসহ বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে।
 
‘এতো যে আয়োজন, অর্থের যোগান হল কিভাবে?’- প্রশ্নটা করা মাত্রই একগাল হেসে জেলা আওয়ামী  লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আজগর আলী বাংলানিউজকে বললেন, ‘সবই হয়েছে জননেত্রী শেখ হাসিনা ও আমাদের নেতা মাহবুবুল আলম হানিফের কল্যাণে। তাদের নির্দেশনায় জেলার সব পর্যায়ের নেতারা এ মহান কাজে শরিক হয়েছেন। যার যতোটুকু সামর্থ্য আছে, তিনি ততোটুকু দিয়েছেন’।
 
বঙ্গবন্ধু পৌর সুপার মার্কেট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সুলভ মূল্যে ১০ হাজার বর্গফুটের ফ্লোর কিনে তৈরি করা হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের এ কার্যালয়।
 
মো. আজগর আলী বলেন, ‘আগে আমাদের একটা বসার জায়গা ছিল না। সবার সহযোগিতায় এ কার্যালয় আমরা করতে পেরেছি। এটি এখন আমাদের গর্বের বিষয়ে পরিণত হয়েছে’।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০১৫
এজেড/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।