ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ পৌষ ১৪৩১, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

গ্রেফতার এড়াতে সমঝোতা করেন এরশাদ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪২ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০১৬
গ্রেফতার এড়াতে সমঝোতা করেন এরশাদ আনিসুল ইসলাম মাহমুদ

ঢাকা: এক-এগারোর প্রেক্ষাপটে গ্রেফতার এড়াতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সমঝোতা করেছিলেন বলে জানিয়েছেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও পানি সম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

তিনি বলেছেন, মাইনাস থ্রি-ফর্মুলায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়, খালেদা জিয়াকে ধরা হয়, দ্যান এরশাদকে ধরা হবে।

কিন্তু উনি (এরশাদ) সেটা (গ্রেফতার) নেগোসিয়েট করেছেন যে, তিনি দলীয় পদ থেকে সরে যাবেন, তবুও তাকে যেন গ্রেফতার করা না হয়। এই আন্ডারস্ট্যান্ডিং তো উনি করেছেন। আন্ডারস্ট্যান্ডিং করার পরে উনার ভাই কাদের সাহেবকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য প্রথম প্রস্তাব করেন।

১/১১’র কুশীলব হিসেবে তার বিচার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (০১ মার্চ) সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার আনিস  এসব কথা বলেন।

ব্যারিস্টার আনিস‍ বলেন, আমি তার (এরশাদ) নির্দেশে সেদিন অ্যাক্টিং চেয়ারম্যানের পদগ্রহণ করি প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে, লুকিয়ে নয়। প্রায় দুই বছর সেই পদে ছিলাম, তাকে (এরশাদ) ছাড়া একটা সিদ্ধান্তও নিইনি। দায়িত্ব না নিলে শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়ার মতো তারও অবস্থা হতো।
 
‘মাইনাস থ্রি উনি হয়েছেন- এটা বলা ঠিক হবে না, আমি উনার নির্দেশে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পদ গ্রহণ করায় উনি মাইনাস থ্রি হননি, মাইনাস টু’তে যেটা হয়েছে। ’
 
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি শেরপুরে এক অনুষ্ঠানে ব্যারিস্টার আনিসকে ১/১১ এর কুশীলব আখ্যা দিয়ে তার বিচারও দাবি করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদ।  
 
এরশাদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ব্যারিস্টার আনিস‍ুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ইয়াজউদ্দিন সাহেব জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে নিজেকে প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা দেন। এরপর মাইনাস টু, মাইনাস থ্রি, ইনফ্যাক্ট হি (এরশাদ) ওয়াজ মাইনাস থ্রি; আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী, বেগম জিয়া ও এরশাদ সাহেবকে রাজনীতি থেকে সরানো হবে- এটা ছিল মাইনাস থ্রির প্রশ্ন।
 
‘আমরা বলছিলাম আপনি (এরশাদ) থাকেন, কাউকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বানান, দলের দৈনন্দিন কাজে যোগ দেওয়ার দরকার নেই। ’
 
জাতীয় পার্টির এই প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, তার ভাই প্রস্তাবে রাজি হন নাই, কারণ হচ্ছে মঈন উ আহমেদের সেমিনারে অংশ নিয়েছিলেন যাতে উনারা যদি রাজনীতি করেন বা সরকার গঠন করেন তাহলে সেখানে উনার সম্পৃক্ত হওয়ার একটা চান্স যেন থাকে।

‘আমি সেখানে যাইনি, মিস্টার কাদের (জিএম কাদের) সেখানে গেছেন। আমি বলবো আমি অনেকটা তার নির্দেশে অ্যাক্টিং চেয়ারম্যানের পদগ্রহণ করি। ’
 
‘ওই সময় কেউ কোথাও যেতে না পারলেও এরশাদকে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল’ উল্লেখ করে ব্যারিস্টার আনিস বলেন, আইলার সময় আমি তাকে পিরোজপুরে নিয়ে যাই।
 
‘মাইনাস না হওয়ার বিষয়টিকে প্রশংসা না করে তিনি (এরশাদ) কথা বলেছেন’ এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমার দুঃখ লেগেছে এটা কিছু না। উনি যদি বর্তমান অবস্থার কথা বলে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতেন, তাতে আমার আপত্তি ছিল না। নির্বাচনের সময় কিছু কাজের জন্য কিছু বললে কিছু হতো না। ’
 
‘উনি বলেছেন, আমি জোর করে ক্ষমতা নিয়েছি এবং সেই প্রক্রিয়ায় তিনি মাইনাস থ্রি। ইনফ্যাক্ট তিনি মাইনাস থ্রি হননি। আমার দায়িত্ব নেওয়ার কারণে, তিনি মাইনাস থ্রি হননি। ’
 
১০ম নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, আমার এবং জিয়াউদ্দিন বাবুলর সঙ্গে সৈয়দ আশরাফের নোগোসিয়েশন হয়েছিল, আমরা পার্টিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য নির্বাচনে অংশ নিই।

‘জামায়াতের উদ্দেশ্য সফল হতে দিইনি। বলেছিলাম, মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে রাজনীতি করতে হলে আমাদের মহাজোটকে রাখতে হবে। বিএনপির মতো দল নির্বাচনে না যেয়ে কোন জায়গায় গেছে?তাও দেখতে হবে। ’
 
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে  এরশাদকে নিয়েই সিদ্ধান্ত হয়েছিল বলে জানান তিনি।
 
সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ ছাড়াও তার ভাই ও জাপার কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সমালোচনা করেন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

তিনি বলেন, পার্টির মধ্যে সমস্যাটা হলো গণতন্ত্র, কাদের সাহেব টক শো তে যান, মাঝে মধ্যে লেখেনও, খুব সুন্দর সুন্দর কথা! তাকে বলা হচ্ছে উত্তরাধিকার- এটা কী গণতান্ত্রিক ভাষা?

‘গঠনতন্ত্রে কোনো কো-চেয়ারম্যান নেই। সুন্দর কথার সঙ্গে তার কাজের কোনো মিল আছে? একজনের জন্য একটা পার্টি সাফার করবে এটা তো হতে পারে না। এখানেই আজকে সমস্যা। ’
 
‘পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে এরশাদকে সম্মান করি’ জানিয়ে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, এভাবে একটা রাজনৈতিক দল চলতে পারে না। ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যের জন্য একটা পার্টিকে ধ্বংস করা উচিত হবে না। সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদকে আহ্বান জানাবো পার্টিতে আপনার সঙ্গে আমরা থাকতে চাই। কিন্তু সেই থাকাটা গণতান্ত্রিক মাত্রার মধ্যে থাকতে হবে। ভাইয়ের জন্য পার্টিটা ধ্বংস করবেন- এটা আমরা চাই না।
 
এরশাদ এখনও চাইলে সবার সাথে আলোচনা করে দলকে শক্তিশালী ও সংগঠিত করতে পারেন বলেও মনে করেন তিনি।
 
জাতীয় পার্টি ভাঙছে কি না- এমন এক প্রশ্নে ব্যারিস্টার আনিস  বলেন, ভাঙার কোনো কারণ নেই, গঠনতন্ত্রে যা আছে তাই হবে।
 
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১/১১ এর বিষয়টি তদন্তে কমিশন গঠন করলে আমরা খুশি হবো। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়েও কমিশন গঠন হওয়া উচি‍ৎ।
 
** ১/১১’র কুশিলব হিসেবে আনিসুল ইসলাম মাহমুদের বিচার দাবি

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪১ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০১৬, আপডেট: ১৮৫৬ ঘণ্টা
এমআইএইচ/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।