ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

‘ভুল রাজনীতির বৃত্তে’ আটকে আছে বিএনপি’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৭
‘ভুল রাজনীতির বৃত্তে’ আটকে আছে বিএনপি’

ঢাকা: নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে রাষ্ট্রপতির সার্চ কমিটি গঠন নিয়েই সরগরম হয়ে উঠেছে রাজনীতির ময়দান। কমিটির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিএনপি। সব চেষ্টায় ব্যর্থ হলে এবারো বিএনপিকে ছাড়াই সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় সামনে এগিয়ে যাওয়ার চিন্তা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের পর বুধবার (২৫ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন প্রধান করে ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।

সার্চ কমিটির সদস্যদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে গত নির্বাচনে অংশ না নিয়ে সংসদের বাইরে ছিটকে পড়া বিএনপি।

বিএনপি হতাশ ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, যে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে, তা আওয়ামী লীগ সরকারের পছন্দের কমিটি।  

দেশের স্বার্থ বাদ দিয়ে অন্ধের মতো দলীয় স্বার্থ দেখবে সেরকম লোক পায়নি বলে বিএনপি প্রশ্ন তুলছে, এমন দাবি আওয়ামী লীগ নেতাদের। এ নিয়ে বিএনপি ইস্যু তৈরি করতে চায় বলেও মনে করেন তারা। বিএনপি ‘ভুল রাজনীতির বৃত্তে’ আটকে আছে মন্তব্য আওয়ামী লীগ নেতাদের।

গতবারের মতো নির্বাচন ও নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় না এলে বিএনপিকে ছাড়াই আওয়ামী লীগ এগিয়ে যাবে বলে দলটির একাধিক সূত্রে জানা যায়।  

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল এক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, প্রয়োজনে বিএনপিকে ছাড়াই সংবিধানের পথে এগিয়ে যাবে আওয়ামী লীগ।

সংবিধান সম্মতভাবে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিএনপি অতীতের মতো এখনো ইস্যু খুঁজছে। এ নিয়ে আমাদের কোনো চিন্তা নাই। ’

বিএনপি মেনে না নিলে আওয়ামী লীগের অবস্থান কি হবে? –এ প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘বিএনপি তো গতবারও মেনে নেয়নি তাতে কি হয়েছে। বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী চলবে। ’

ফারুক খান বলেন, ‘বিএনপি নাই তাতে কি বাংলাদেশের রাজনীতি বন্ধ হয়েছে? উন্নয়ন বন্ধ হয়েছে? কোনো কিছুই বন্ধ হয়নি। তারা সংবিধানের বাইরে গেছে। জনগণই তাদের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করেছে। ’

‘বিএনপিকে সংবিধানের মধ্যে আসতেই হবে। ’

সার্চ কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘যাদেরকে নিয়ে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে নিজ নিজ মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে দায়িত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছেন। ’ 

‘বিএনপি অকারণেই সার্চ কমিটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বিএনপি আসলে এখনো ভুল রাজনীতির বৃত্তে আটকে আছে। ’

‘ভুল রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে তারা লাভবান হতে পারবে না। ’

আওয়ামী লীগের আরেক যুগ্ম সম্পাদক ডা. দীপু মণি বলেন, ‘সার্চ কমিটিতে যাদের নেওয়া হয়েছে সবাই গণ্যমান্য ব্যক্তি। সমাজে তাদের স্বাধীন চিন্তার জন্য একটা অবস্থান আছে। তাদের নিয়ে এই আপত্তির মানে কি?’

‘তারা হয়তো ইস্যু তৈরি করার চেষ্টা করছে। এটা গ্রহণযোগ্য হবে না। ’

তিনি বলেন, ‘একদম তাদের (বিএনপি) দলীয় মতাদর্শে বিশ্বাসী এবং যারা দলীয় স্বার্থটাই অন্ধের মতো দেখবে সেইরকম লোক না দেওয়া পর্যন্ত তারা আপত্তি করতে থাকবে। অর্থাৎ তারা নিরপেক্ষতা চায় না, বরং ‘বিচার মানি তালগাছ আমার’ এই নীতিতে চলে। ’ 

‘একেবারেই তাদের নিজস্ব যদি লোক না হয়। দেশের স্বার্থ না, তাদের দলীয় স্বার্থ বিবেচনা করবে এরকম লোক না পেলে হয়তো তারা আপত্তি করতে থাকবে। ’ 

বিএনপির সমালোচনা করে দীপু মণি বলেন, ‘নির্বাচনের বেলাতেও তাদের এই মনোভাব খুব স্পষ্ট। যে নির্বাচনে তারা জয়ী হয়, শুধুমাত্র সেই নির্বাচনের ফলাফলটা তারা গ্রহণ করে। ’

‘সদ্য হয়ে যাওয়া নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন নিয়েও তারা একই কাজ করেছে। সারাদিন বলেছে নির্বাচন ভালো হয়েছে, যখন ফলাফল তাদের পক্ষে যায়নি, তখন তারা ফলাফল নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছে। ’

আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল বলেন, ‘যেকোনো সুন্দর ও সার্বজনীন বিষয়ের মধ্যে আপত্তি জানানো তাদের জন্মগত দোষ। তাদের রাজনৈতিক চরিত্র। ’ 

তিনি বলেন, ‘রাজনীতি নিজ গতিতে এগিয়ে যাবে। ’

ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)সহ অন্য কমিশনারদের মেয়াদ। আগামীতে যে নির্বাচন কমিশন আসবে তাদের ওপরই পড়বে ২০১৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব।

রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সময়ে বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনেও একই দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

সার্চ কমিটিতে অন্যরা হলেন- হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, গতবারের মতোই সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক, কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) মাসুদ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য শিরীণ আখতার।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, কমপক্ষে একজন নারীসহ প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার নিয়োগে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে শূন্য পদের বিপরীতে দুজন ব্যক্তির নাম সুপারিশ করবে সার্চ কমিটি। যেখান থেকে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যদের নিয়োগ দেবেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৭
এমইউএম/পিসি
 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।