ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

সুরঞ্জিতের আসনে নৌকার মাঝি হতে চান ৭ জন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৭
সুরঞ্জিতের আসনে নৌকার মাঝি হতে চান ৭ জন

সিলেট: সংবিধান প্রণেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের শূন্য আসনে তফসিল ঘোষণার পর নড়েচড়ে বসেছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।এক নৌকায় উঠতে সাতজন চেষ্টা চালালেও শেষ পর্যন্ত নৌকায় ওঠার টিকিট কে পাবেন, তাই এখন দেখার অপেক্ষা। তবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাতজন হওয়ার চেষ্টা করলেও তাদের মধ্যে সুরঞ্জিতের স্ত্রী ড. জয়া সেনগুপ্তা, মতিউর রহমান ও অ্যাডভোকেট শামসুল ইসলামের নাম বেশি আলোচনায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। 

এ তিনজন ছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন শাল্লা উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান অবনী মোহন দাস, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ যুক্তরাজ্য শাখার সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার অনুকূল চন্দ্র ডালটন, যুক্তরাজ্য শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শামসুল হক চৌধুরী ও দিরাই পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুর রহমান বুলবুল।  

শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) থেকে ধানমন্ডিতে দলের সভাপতির কার্যালয় থেকে উপ নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম বিতরণ করবে আওয়ামী লীগ।

রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ২৫ হাজার টাকা জমা দিয়ে প্রার্থীরা মনোনয়ন ফরম কিনতে পারবেন। পরদিন সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) একই কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম জমা দিতে হবে, জানিয়েছে দলীয় সূত্র।  

স্থানীয়দের মতে, সুরঞ্জিত পত্মী জয়া সেন এলাকার পরিচিত নাম। সুরঞ্জিতের সাজানো মাঠ যাতে ঠিক থাকে, সেজন্য জয়া সেনকে চান স্থানীয়রা। এতে সুরঞ্জিতের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত হবে। সেই সঙ্গে দল ঐক্যবদ্ধ থাকবে।  

মতিউর রহমানের বাড়ি দিরাই হলেও জেলা সদরে রাজনীতি করায় ওখানে তার অবস্থান ভালো নয়। তাছাড়া তার আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে অনেকেই যুদ্ধাপরাধী হওয়ায় এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে বিষয়টি দাগ কাটছে। এলাকার কুখ্যাত রাজাকার আব্দুল খালেক ওরফে খালেক চেয়ারম্যান তারই ভাগ্নে।  

দিরাই আওয়ামী লীগের ২০ বছর ধরে সভাপতি পদে ছিলেন আলতাব উদ্দিন। কিন্তু ব্যক্তি ইমেজ না থাকায় গত উপজেলা নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। উপ-নির্বাচনকে সামনে রেখে এই আলতাবকে নিয়ে গ্রুপিং করেছেন মতিউর। কিন্তু আলতাবের আত্মীয়-স্বজনরা আগে থেকেই সুরঞ্জিত বলয়ে। তারাও জয়া সেনকে প্রার্থী হিসেবে চাচ্ছেন।  

অ্যাডভোকেট শামসুল ইসলাম তৎকালীন সুনামগঞ্জ মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শহীদ তালেবের ভাই। মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন তালেব। তাছাড়া অ্যাডভোকেট শামসুল ইসলাম ল’ কলেজের ভিপি ছিলেন। এরপর সিলেট জেলা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক ছিলেন। দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি সুরঞ্জিত সেনের সঙ্গে দীর্ঘদিন এলাকায় রাজনীতি করে আসছিলেন।  

শাল্লা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট অবনী মোহন দাস বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে পরাজিত হন। দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় সুবিধা পায় বিএনপি। ওই উপজেলায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন উপজেলা বিএনপির সভাপতি গণেন্দ্র চন্দ্র সরকার। এর আগে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হওয়ায় বিজয়ী হয়েছিলেন অবনী মোহন।

আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ যুক্তরাজ্য শাখার সাধারণ সম্পাদক অনুকূল চন্দ্র ডালটন এক সময় সুরঞ্জিত সেনের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন। আলোচিত এপিএস ওমর ফারুককে তিনিই পছন্দ করে দিয়ে গিয়েছিলেন। বর্তমানে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবেও আছেন ডালটন। নির্বাচনকে ঘিরে এলাকার মানুষের সঙ্গেও সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন তিনি।  

যুক্তরাজ্য শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শামসুল হক চৌধুরী ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে সুরঞ্জিত সেনের আসনে প্রার্থী হতে তিনিও মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন। কিন্তু দল থেকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তিনি প্রার্থী হননি। এবার উপ-নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি দেশে এসেছেন।  
 
২০১০ সালে পৌর নির্বাচনে যুক্তরাজ্য থেকে ‘ধরে এনে’ আজিজুর রহমান বুলবুলকে
আওয়ামী লীগের প্রার্থী করেন সুরঞ্জিত। নির্বাচনের আগে তিনি আওয়ামী লীগের কোনো পদে ছিলেন না। নির্বাচনে বিজয়ী হলে বুলবুলকে দিরাই পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব দেন সুরঞ্জিত। এরপর বুলবুল যুক্তরাজ্য চলে যান।  

বিগত পৌর নির্বাচনের আগে দেশে এলেও দল থেকে তাকে আর মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। নির্বাচনের পর তিনি আবার যুক্তরাজ্য চলে যান। সুরঞ্জিত সেনের মৃত্যু, শেষকৃত্য ও শ্রদ্ধানুষ্ঠানেও তিনি উপস্থিত ছিলেন না। উপ-নির্বানের তফসীল ঘোষণার দু’দিন আগে তিনি দেশে আসেন এবং উপ-নির্বাচনে তিনিও আওয়ামী লীগের টিকিট প্রত্যাশী।  

দিরাইয়ের একটি পৌরসভা ও নয়টি ইউনিয়ন এবং শাল্লা উপজেলার চারটি ইউনিয়ন নিয়ে ২২৫ সুনামগঞ্জ-২ সংসদীয় আসন গঠিত। এ আসনে মোট ভোটার দুই লাখ ৫২ হাজার ৪৩০ জন। এর মধ্যে পুরুষ এক লাখ ২৬ হাজার ২২৮ জন এবং নারী এক লাখ ২৬ হাজার ২০২ জন। এ আসনে ভোট কেন্দ্র রয়েছে ১১০টি এবং ভোট কক্ষ ৫০২টি।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৭
এনইউ/এসআই 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।